শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২১ এপ্রিল ২০২১

ইফতার ও সেহরিতে রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ

ইফতার ও সেহরিতে রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ

হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রমজান হচ্ছে নবম মাস। এ মাসে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ রোজা রাখার বিধান রয়েছে। কোরআন ও হাদিসে রোজা রাখার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রোজা না রাখার ভয়াবহ পরিণতির কথাও এসেছে এগুলোতে। এখানে রোজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’টি বিধান সেহরি ও ইফতার নিয়ে আলোচনা করা হবে। তুলে ধরা হবে এ বিষয়ের রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ ও আদবগুলোকে।

সেহরি সময়ের ফজিলত ও আমল
রমজান মাসে যেসব বরকতময় সময় রয়েছে এর অন্যতম একটি হচ্ছে সেহরির সময়। এই সময়ে আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে রহমত ও বরকত নাজিল হয়, ফলে মানুষের অন্তরে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব হয়। তাই সেহরির সময় শুধু খাওয়ার জন্য নয় বরং আল্লাহর দিকে বিশেষভাবে মনোনিবেশের জন্যও। আল কুরআনে মুমিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, যা দ্বারা সেহরি সময়ের ফজিলত স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। বলা হয়েছে, ‘মুত্তাকি তারা, যারা রাতে কম ঘুমায় এবং সেহরির সময় ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত নং-১৮) 

সেহরির সময়ে কোরআন, হাদিস ও বুজূর্গদের দ্বারা প্রমাণিত কিছু আমল হচ্ছে-

১. বেশি বেশি ইস্তেগফার ও তওবা করা। ইস্তেগফারের দোয়া আমরা সবাই জানি। সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার, যার আলোচনা বুখারি শরীফসহ অনেক কিতাবেই এসেছে সম্ভব হলে মুখস্থ করে তা পাঠ করা। সায়্যেদুল ইস্তেগফার হচ্ছে-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي؛ فَاغْفِرْ لِي؛ فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
 
২. বান্দা তাহাজ্জুদের নামাজ দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য সবচেয়ে বেশি হাসিল করে থাকে, তাই সেহরি খেতে একটু আগে উঠে বেশি বেশি তাহাজ্জুদ আদায় করা। সূরা সাজদাতে আল্লাহ তায়ালা মুমিনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, ‘মানুষ যখন ঘুমের ঘোরে বিভোর হয়ে থাকে তখন তারা উঠে নামাজ আদায় করে এবং রবকে ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকতে থাকে।’ সুরা মুজ্জামিলে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় রাতে ওঠে ইবাদত করা নফসকে প্রবলভাবে দলিত করে।’ (সুরা মুজ্জামিল, আয়াত নং-৬)  

৩. কান্না ও রোনাজারি করে আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের প্রয়োজনগুলো পেশ করা। কারণ, ওই সময়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন। 

রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়ার ফজিলত 
একাধিক সহীহ হাদিসে সেহরি খাওয়ার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) এর সূত্রে নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরি খাওয়ার মাঝে বরকত রয়েছে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-২৫৪৪)

হজরত আমর ইবনে আস (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেন, আমাদের ও ইহুদী-নাসারাদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-১০৯৬) অর্থাৎ ওদের এবং মুসলমানদের রোজার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিষয় হচ্ছে আমরা সেহরি খাওয়া, না খাওয়া। তাই বিধানগত দিক থেকে সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব হলেও যথাসম্ভব এর গুরুত্ব দেয়া চাই।

সেহরি খাওয়ার মুস্তাহাব সময় 
সেহরি খাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাতে যে খাবার খাওয়া হয়। ফকিহগণের মতে, সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়কে  ছয় ভাগ করে, শেষ ভাগে খাওয়াকে সেহরি বলে। তাই কোন লোক যদি এশার পর, রোজার নিয়তে খেয়ে নেয় তাহলে ওই খাবারকে সেহরি বলা যাবে না এবং এতে সেহরির সওয়াবও সে পাবে না। তবে কেউ যদি সেহরির সময় হওয়ার আগেই খেয়ে নেয়, এরপর শেষ সময় পর্যন্ত চা পান ইত্যাদি করে তাহলেও সে সেহরির সওয়াব পেয়ে যাবে (আল ফিকহুল হানাফি ফি ছাওবিহিল জাদিদ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৩৩. বেহেশতি জেওর, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩২১) সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এত দেরি না করা যে, সুবহে সাদিক হওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা হয় এবং রোজার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। (মারাকিহুল ফালাহ-৩৭৩) 

ফজরের সময়ের ফজিলত ও আমল
ইমাম তিরমিজি (রাহ.) হজরত আবু হুরাইরা (রা.) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণি মানুষের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করে থাকেন, এক. ন্যায়পরায়ন শাসকের দোয়া, দুই. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, তিন. মাজলুমের দোয়া, যা আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং-২৫২৬)

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়ে আল কোরআনেও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সুরা বাকারার ১৮৩-১৮৫ নং আয়াতে রোজার বিভিন্ন বিধিবিধানের আলোচনা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, ‘আমি দোয়াকারীদের দোয়া কবুল করি যখন তারা আমার নিকট দোয়া করে।’ ইমাম ইবনে কাছির (রাহ.) বলেন, ‘এই আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় রোজা রেখে ইফতারের সময় দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন। 

এজন্য হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ইফতারের সময় পরিবারের লোকজনকে একত্রিত করে দোয়ায় মশগুল হয়ে যেতেন। (মাআরেফুল কোরআন, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৫১) তাই আমাদের করণীয় হচ্ছে ইফতারের আগ মুহূর্তে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। রোনাজারি করে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য পেশ করা। কিন্তু আফসোস! বর্তমানে অনেক মুসলমান রোজা রাখেন না। যারা রাখেন তারাও ওই মুহূর্তটাতে নানা ধরনের ইফতার তৈরিতে সময় পার করে দেন।

ইফতার করার উপযুক্ত সময়
হযরত সাহাল ইবনে সাআদ (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, হুজুর (সা.) বলেন, ‘লোকেরা ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা দ্রুত ইফতার গ্রহণ করবে।’ (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৯১৫) তিরমিজিতে এসেছে, যারা দ্রুত ইফতার শুরু করে তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে গণ্য হয়। তাই সুর্যাস্ত হয়েছে কিনা নিশ্চিতভাবে জেনে শীঘ্রই ইফতার করা মুস্তাহাব। তবে আকাশ মেঘলা থাকলে এবং সুর্য ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা না হলে একটু বিলম্ব করে ইফতার করা। (রদ্দুল মুহতার, খন্ড- ৩য়, পৃষ্ঠা-৪৫৯)

ইফতারে রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ
১. সম্ভব হলে কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা। অন্যথায় শুকনো খেজুর দিয়ে। তাও সম্ভব না হলে পানি দ্বারা ইফতার করা। ইমাম আবু দাউদ (রাহ.) হজরত আনাস (রা.) এর সূত্রে নবী করিম (সা.) থেকে এমনটিই বর্ণনা করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২৩৫৬) তবে এগুলো হচ্ছে অভ্যাসগত সুন্নাহ, যা দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত নয়, তবে রাসূল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা থেকে কেউ এমনটি করলে আশা করা যায় সওয়াব পেয়ে যাবে। খেজুর দিয়ে ইফতার করা যেহেতু অভ্যাসগত সুন্নাহ, তাই অন্যকিছু দিয়ে ইফতার করতেও কোন সমস্যা নেই।

২. ইফতার গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখে পানাহার করা। কারণ, রাসূল (সা.) কখনো পেট পুরে খেতেন না এবং তিনি এটাকে পছন্দও করতেন না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘মানুষের জন্য নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে পেট পুরে খাওয়া। বনি আদমের জন্য ওই পরিমাণ খাবারই যথেষ্ঠ যা তার মেরুদন্ডকে সোজা রাখে। এর চেয়ে বেশি খেতে হলে এক ভাগ খাবার দিয়ে, আরেক ভাগ পানি দিয়ে পুরো করবে এবং এক ভাগ নিশ্বাস ফেলার জন্য খালি রেখে দিবে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং-২৩৮০)

৩. ইফতারের দোয়া পড়া। হাদিসে দু’টি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। যেকোনো একটি পড়লেই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনসুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কিবৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলাসবাই ঈদের নামাজে গেলে শাহনাজের ঘরে ঢুকে প্রেমিক রাজু, অতঃপর...