গাইবান্ধার মীরের বাগানে চলছে ইচ্ছে পূরণের মেলা
গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের দারিয়াপুরে মীরের বাগানে চলছে ঐতিহ্যবাহী ইচ্ছে পূরণের মেলা। মীরের বাগানে পীর শাহ সুলতান গাজী, মীর মোশারফ হোসেন ও ইবনে শরফুদ্দিন শাহের মাজার সংলগ্ন প্রায় ৪ একর খোলা প্রান্তরজুড়ে মেলা শুরু হয়েছে বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই। প্রতি বছরই বৈশাখ মাসজুড়ে চলে এই মেলা। প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান মেলা প্রাঙ্গণে।
মীরের বাগানের সঙ্গে ইতিহাসখ্যাত মীর জুমলার সম্পর্ক আছে বলে কিংবদন্তি রয়েছে। অতীতে বিশাল এক আমবাগানের জন্য এই মীরের বাগানের পরিচিতি ছিল। ১৩০৭ সালে (তথ্যসূত্র : মসজিদ গাত্রের শিলালিপি) কলকাতার পীর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী বাহারবন্দ পরগনার ঘন জঙ্গল থেকে পীর ইবনে শরফুদ্দিনের স্মৃতিবাহী কবর ও মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেন। ময়মনসিংহের কারি করিম বক্সের উত্তরাধিকারীরা বংশ পরম্পরায় মোতাওয়াল্লি হিসেবে এই ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, স্থাপত্যকলার বিচারে মীরের বাগানের মসজিদের নির্মাণ শৈলী অনবদ্য। সঠিক ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যালোচনার মাধ্যমে মীরের বাগান সামগ্রিকভাবে বাংলার ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বের তথ্য ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে।
সরেজমিন মীরের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ইচ্ছে পূরণের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষের পদচারণে সরগরম তিন অলির মাজার প্রাঙ্গণ। মেলাকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট এলাকায় চারু, কারুপণ্যসহ হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ইচ্ছা পূরণের আশায় মাজার সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী চুলা বানিয়ে চলছে বিশেষ খিচুড়ি রান্না। রান্না করা খিচুড়ি দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হচ্ছে। অনেকেই এই খিচুড়ি তবারক হিসিবে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
এখানে খিচুড়ি রান্নার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন বাড়ি থেকে চাল, ডাল, মুরগি, জ্বালানি কাঠসহ রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে আসেন। মাজারের নির্দিষ্ট স্থানে মুরগি জবাই করে কেটে-কুটে মাজারের সামনে চুলায় রান্না করা হয় মুরগির মাংসের খিচুড়ি। দুরারোগ্য অসুখ, সন্তান কামনাসহ নানা সমস্যা ও সংকট নিরসনের আশায় এখানে আসেন বহু মানুষ। এই স্থানটিকে জাতি-ধম-বর্র্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।
জনশ্রুতি আছে, সংস্কারকালে মসজিদের ভেতরে একটি কালোপাথর পাওয়া যায় যাতে মসজিদের নির্মাণ সাল উৎকীর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা হারিয়ে যায়। বহু অনুসন্ধান করেও ওই কালোপাথরটির আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।