মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ || ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৭ নভেম্বর ২০২০

ডাকাতির আগে-পরে যত কৌশল নেয় ওরা ১০ জন

ডাকাতির আগে-পরে যত কৌশল নেয় ওরা ১০ জন

ঢাকার সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ২৭ অক্টোবর ইতালি প্রবাসীকে প্রকাশ্যে গুলি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরই ছায়া তদন্তে নামে র‌্যাব। তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরই বেরিয়ে আসে ১০ জনের ডাকাতদলের ডাকাতির নানা কৌশল ও ধাপ। 

শনিবার র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গত ২৮ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০ টায় ইতালি প্রবাসী মো. আমানুল্লাহ (৪০) সস্ত্রীক আমিনবাজারের একটি ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এ দম্পতি একটি ভাড়া করা প্রাইভেটকারযোগে কেরানীগঞ্জের বাড়ি ফিরছিলেন।

তাদের প্রাইভেটকারটি ভাকুর্তা লোহার ব্রিজের কাছে পৌঁছালে পেছন থেকে আসা তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকারে থাকা ডাকাতরা গতিরোধ করে। বেলা ১০ টা ৪৫ মিনিটে ডাকাতদল প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে আমানুল্লাহের বা পায়ে একটি গুলি লাগে। ওই সময় আমানুল্লাহের স্ত্রীর হাতে থাকা গোলাপী রঙের ভ্যানিটি ব্যাগে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও মোবাইল ডাকাতি করা হয়। 

পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ আমানুল্লাহকে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি ডাকাতি মামলা করেন।

যেভাবে ক্লুলেস ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, ইতালি প্রবাসীর ডাকাতি মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হচ্ছে- মোস্তাফিজুর রহমান (৩৮), নাসির (৩৮) ও আবদুল বারেক সিকদার (৪৫)। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও হত্যা মামলা রয়েছে।

গত ৭ নভেম্বর রাতে প্রাইভেটকারযোগে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় বিরুলিয়া জোড়া ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি রিভলবার, ১২ রাউন্ড গুলি, একটি ছুরি, দুটি লোহার পাইপ ও লুন্ঠিত ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই অভিযানের সময় ৬ থেকে ৭ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।

 

মোটরসাইকেলযোগে ডাকাতরা

মোটরসাইকেলযোগে ডাকাতরা

 

এর আগে ঘটনার দিন থেকে মাঠে নামে র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল। ছায়া তদন্তের শুরুতেই ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ক্যাপ পরিহিত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে র‌্যাব। সেই সূত্র ধরেই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

যেভাবে ডাকাতির কৌশল শুরু

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, সাভার এলাকায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি আন্তঃজেলা সশস্ত্র দুর্ধর্ষ ডাকাত দল রয়েছে। তারা দলকে কোম্পানি হিসেবে ডাকে। প্রত্যেক সদস্যের একটি করে ছদ্মনাম রয়েছে। এ দলের অন্যতম সদস্য ব্যাংকে ঘটনার দিন ক্যাপ পরিহিত অবস্থায় ছিল। ব্যাংকের টাকা উত্তোলনকারীদের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে বাইরে মোটরসাইকেলে থাকা সহযোগী নাসিরসহ তার অন্যান্য সহযোগীদের তথ্যটি জানায়।

মূলত গ্রেফতার আসামি বারেক সিকদার ডাকাতদের অস্ত্র ও ছিনতাইকৃত টাকা বহনের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারের চালক। 

ডাকাতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ডাকাতির সময় নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন ও নম্বর ব্যবহার করেছিল তারা। ডাকাতি শেষে সেসব মোবাইল ফোন-সিম নষ্ট ও ব্যবহার করা জামা-কাপড় ফেলে দেয়।

 

ডাকাতির মুহূর্ত।

ডাকাতির মুহূর্ত।

 

ঘটনার দিন ডাকাতির টাকা ১০ জনের মাঝে ৫০ হাজার করে বন্টন করা হয়। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতির নানা কৌশল ও ধাপ র‌্যাব জানিয়েছে।

যেভাবে ডাকাতির আগে সংগ্রহ হয় তথ্য

আন্তঃজেলা ডাকাতদলে ১০ জন সদস্য রয়েছে। তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করে। নিজেদের সোর্স দ্বারা কে, কখন,কোথায়, কতা টাকা উত্তোলন করছে তা জেনে যায় ডাকাতরা।
  
পরিকল্পনা প্রণয়ন

তথ্য পাওয়ার পরই ডাকাতির পরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রস্তুতি নেয়া হয়।প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঘটনার দুই এক দিন আগে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও যানজট পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা ও ডাকাতি সম্পন্ন শেষে পালানোর নিরাপদ পথ ঠিক করে ডাকাতরা।

যেভাবে ডাকাতির দায়িত্ব বণ্টন

১০ জনের ডাকাতদলের একেক জনের রয়েছে একেক দায়িত্ব। প্রতিজন নিজেদের দায়িত্ব বণ্টন করেন।কারো দায়িত্ব থাকে অস্ত্র থেকে গাড়ি বহন করা। কারো দায়িত্ব  ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের খবর বাহিরের সদস্যদের পাঠানো। আবার কারো দায়িত্ব থাকে মোটরসাইকেল যোগে হানা দেয়া। পালানোর সময় মোটরসাইকেল যোগে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মিলিত হওয়া। এরপর টাকা ও অস্ত্রসহ এক সদস্য প্রাইভেটকারে উঠে এবং নিরাপদ পথে পালিয়ে যাওয়া।

যেভাবে গা ঢাকা ও ডাকাতির টাকা বণ্টন

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন,ডাকাতি শেষে এ দলের প্রতিটি সদস্য নির্ধারিত নির্জন স্থানে মিলিত হয়। সেখানেই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিম ও জামা-কাপড় নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তারা কয়েকদিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। কোনো এক সময় আবারো তাদের মূল হোতার নতুন পরিকল্পনা অনুসারে অন্য একটি জেলায় একইভাবে ডাকাতি কর্মকাণ্ড চালায়।

পৃথক ঘটনায় অস্ত্র আইন ও ডাকাতির অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

দেশজুড়ে আরো ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারিন্যাপ এক্সপো-২০২৪ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রীবদলে গেল গাইবান্ধার ৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধন