বুধবার   ২৫ জুন ২০২৫ || ১০ আষাঢ় ১৪৩২

দৈনিক গাইবান্ধা

প্রকাশিত : ১৬:৫১, ২৫ জুন ২০২৫

স্বাস্থ টিপস

ওটমিল খেলে যে উপকার মিলবে

ওটমিল খেলে যে উপকার মিলবে
সংগৃহীত

ওটমিল, মানে ওটস দিয়ে তৈরি খাবার এখন স্বাস্থ্য সচেতন অনেক মানুষের প্রথম পছন্দ। গরম, পুষ্টিকর এবং নানান উপাদানে সহজেই তৈরি করা যায় বলে এটি কেবল রুচিসম্মত নয়, বরং স্বাস্থ্যের পক্ষেও দারুণ উপকারী।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার ‘ইটদিস ডটকম’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওটমিলের উপকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “ওটমিল দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর ও মনের বিভিন্ন দিক থেকে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।”

ওটমিল শুধু পেট ভরায় না বরং দীর্ঘ সময় তৃপ্তি দেয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে, এমনকি ত্বকেও উজ্জ্বলতা আনে।

দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে

সকালের নাশতা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অনেকেই আবার ক্ষুধা অনুভব করেন। ওটমিল খেলে এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

লরেন মানেকার বলেন, “ওটমিলে রয়েছে দ্রবণীয় আঁশ যা পানি শোষণ করে পাকস্থলীতে জেলির মতো গঠন তৈরি করে। এটি হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। ফলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত ক্ষুধা লাগে না। আর খাবারের ফাঁকে ফাঁকে নাস্তা করার প্রবণতা কমে।”

হজম শক্তি বাড়ায়

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত মল নিঃসরণ হওয়া জরুরি। আর সেটা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে ওটমিল।

মানেকার বলেন, “ওটমিলের উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ উপাদান অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং হজম প্রক্রিয়া সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।”

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে

রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

মানেকার বলেন, “ওটমিলে থাকা ‘বিটা-গ্লুকান’ নামক এক ধরনের দ্রবণীয় আঁশ অন্ত্রে কোলেস্টেরলের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে তা রক্তে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে।”

উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়ক

শরীরের হজম, রোগ প্রতিরোধ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার ওপর।

মানাকার ব্যাখ্যা করেন, “ওটমিল প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ এটি অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এর ফলে হজমশক্তি বাড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয় এবং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় থাকে।”

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে

যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য ওটমিল হতে পারে আদর্শ এক প্রাতঃরাশ।

মানাকার বলেন, “ওটমিল ক্যালরিতে কম এবং আঁশে ভরপুর, যা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।”

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিস কিংবা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য ওটমিল অত্যন্ত উপকারী।

মানাকার বলেন, “ওটমিলে থাকা ধীর হজমযোগ্য শর্করা রক্তে শর্করার হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ঠেকায়। এটি রক্তে শর্করার স্তর ধীরে ধীরে বাড়তে সহায়তা করে, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর।”

ত্বক উজ্জ্বল করে

ওটমিল কেবল খাওয়ার জন্যই নয়, বরং ত্বকের জন্যও উপকারী। এ কথা হয়ত অনেকেই জানেন না।

মানেকার বলেন, “ওটমিলে থাকা ‘অ্যাভেনানথ্রামাইডস’ নামক যৌগ ত্বকের প্রদাহ ও চুলকানি কমাতে সহায়ক। এটি ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ ও উজ্জ্বল করে তোলে।”

পুষ্টিগুণে ভরপুর

যাদের প্রতিদিনের খাবারে পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে, তাদের জন্য ওটমিল হতে পারে একটি কার্যকর সমাধান।

মানেকার বলেন, “ওটমিলে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো শরীরের শক্তি উৎপাদন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।”

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ক্ষতিকর ‘ফ্রি র‌্যাডিক্যাল’ থেকে রক্ষা করে।

মানাকার বলেন, “ওটমিলে থাকা অ্যাভেনানথ্রামাইডস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। এটি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।”

কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়

যারা নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাদের জন্য ওটমিল হতে পারে প্রাকৃতিক একটি উপশম।

মানাকার বলেন, “ওটমিলে থাকা অদ্রবণীয় আঁশ মলকে নরম করে এবং অন্ত্রে গতি বাড়িয়ে দেয়। ফলে সহজেই মলত্যাগ হয় এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।”

প্রদাহ কমায়

দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ শরীরে নানান ধরনের রোগের কারণ হতে পারে।

মানাকার বলেন, “ওটমিলের মধ্যে থাকা সক্রিয় যৌগ, বিশেষ করে অ্যাভেনানথ্রামাইডস শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হয় এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।”

শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে

সকালে ঠিকভাবে শক্তি না পেলে সারাদিন মনোযোগ ও উৎপাদনক্ষমতা ব্যাহত হয়।

মানাকার বলেন, “ওটমিলে থাকা আয়রন বা লৌহ শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক। এই খনিজের অভাবে শরীরে ক্লান্তি দেখা দেয়, যা ওটমিল খেলে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।”

সূত্র: বিডি নিউজ ২৪

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ