রান্নাঘরের কেবিনেটে যে ৬টি জিনিস রাখা যাবে না

রান্নাঘর প্রতিদিনের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে শুধু রান্নাই হয় না বরং খাবার সংরক্ষণ, পরিবেশন ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার কাজও হয়। আর রান্নাঘরের কেবিনেটগুলো সাধারণত এসব কাজেই লাগে। অনেকেই খাবারের প্যাকেট, মসলা, রেসিপি বই, টিস্যু, এমনকি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জিনিসপত্রও সেখানে রাখেন।
তবে জানেন কি, এই কেবিনেটগুলোতে কিছু জিনিস রাখা মানে সেই সামগ্রীগুলোই ক্ষতি করা। এমনকি তা বিপজ্জনকও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিচিত তিনজন ‘হোম অর্গানাইজার’ ও পরিষ্কার বিশেষজ্ঞ লরি হাইস, জেসিকা লিটম্যান এবং কেটি ডিলস রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলছেন, “রান্নাঘরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং ব্যবহারের ধরন এমন কিছু জিনিসের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যেগুলো অহরহ সেখানে রেখে দিই।”
তিন বিশেষজ্ঞ ছয়টি জিনিসের কথা উল্লেখ করেছেন যা কখনই রান্নাঘরের কেবিনেটে রাখা উচিত নয়।
কুকবুক বা রেসিপির হাতের লেখা খাতা
অনেকেই রাঁধতে রাঁধতে হাতের কাছে রেসিপি রাখতে চান। এ জন্য কুকবুক বা হাতের লেখা রেসিপির খাতা রাখেন রান্নাঘরের কেবিনেটে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
লরি হাইস বলছেন, “রান্নাঘরে রান্নার সময় এবং থালাবাসন ধোয়ার সময় যে তাপ ও আর্দ্রতা তৈরি হয়, তা কুকবুকের পৃষ্ঠাগুলোকে বাঁকা করে দিতে পারে। কখনও কখনও বইয়ের ভেতরে আর্দ্রতা জমে ছাপ পড়ে যেতে পারে, এমনকি পৃষ্ঠাগুলো কুঁচকে গিয়ে লেখা অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “রান্নাঘরের বাইরের কোনো ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে, যেমন- খাবার ঘরে বা লিভিং রুমের বুকশেলফে কুকবুক সংরক্ষণ করলে তা দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।”
পেপার প্লেট, কাপ ও ন্যাপকিন
অনেক সময় রান্নাঘরের কেবিনেটে কাগজের প্লেট, কাপ কিংবা ন্যাপকিন রাখা হয় এই ভেবে যে, এগুলো সহজে পাওয়া যাবে। আবার পরে কাজের সময় সুবিধা হবে। তবে এসব কাগজজাত সামগ্রী ভিজে গেলে আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না।
লরি হাইস বলেন, “পেপার বা কাগজের প্লেট বা ন্যাপকিন যদি রান্নাঘরের আর্দ্র পরিবেশে রাখা হয়, তাহলে তা নরম হয়ে যায়, তাতে ছাঁচ পড়তে পারে এবং গন্ধ হতে পারে।”
রান্নাঘরের চুলার তাপ, ডিশ ওয়াশারের ভ্যাপসা বাতাস এসব উপকরণকে দ্রুত নষ্ট করে। তাই এগুলো শুকনা জায়গায় বা রান্নাঘরের ওপরের তাকের মতো স্থানে রাখা উচিত যেখানে বাতাস চলাচল ভালো হয় এবং আর্দ্রতা কম থাকে।
পেপার টাওয়েল
পেপার টাওয়েল দরকারি উপকরণ যা হাত মুছতে, কিছু পরিষ্কার করতে কিংবা হঠাৎ ছিটকে পড়া তরল মুছে ফেলতে এটি ব্যবহার হয়। ফলে অনেকেই কেবিনেটের নিচে বা সিঙ্কের পাশে এটি রেখে দেন।
কিন্তু জেসিকা লিটম্যান বলছেন, “রান্নাঘরের নিচের কেবিনেট যদি পানির লাইন বা সিঙ্কের কাছে থাকে, তাহলে কোনো ফাঁক দিয়ে পানি লিক করলে বা পানির ছিটা পড়লে পেপার টাওয়েল ভিজে গিয়ে একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়।”
তিনি পরামর্শ দেন, “এই ধরনের জিনিস রাখা উচিত রান্নাঘরের এমন জায়গায় যেখানে পানি লাগার সম্ভাবনা নেই যেমন একটি আলাদা শুকনো তাক।”
রান্নার মসলা
মসলা ছাড়া রান্নাঘর যেন অচল। তাই মসলাগুলো চুলার খুব কাছেই রাখার প্রবণতা সবার মধ্যে রয়েছে। তবে এটাই আসলে মসলার সবচেয়ে বড় শত্রু।
লরি হাইস ব্যাখ্যা করেন, “চুলা বা ওভেনের পাশে থাকা তাপ ও ভাপ মসলার স্বাদ ও গন্ধ দ্রুত নষ্ট করে দেয়। এতে মসলার কার্যকারিতা কমে যায় এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী থাকে না।”
তিনি পরামর্শ দেন, “মসলা এমন ড্রয়ার বা কেবিনেটে রাখতে হবে যাতে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক থাকে। আবার মসলা ভালো রাখতে সরাসরি তাপ বা আলো থেকে দূরে রাখতে হবে। চাইলে একটি কুল র্যাক বা ড্রয়ার অর্গানাইজার ব্যবহার করা যায়, যাতে একসাথে অনেক মসলা গুছিয়ে রাখা যায়।”
ক্লিনিং প্রোডাক্ট ও কেমিক্যাল
রান্নাঘরের সিঙ্কের পাশে অনেক সময় ডিশ সোপ, স্পঞ্জ, ডিটারজেন্ট রাখা হয়ে। তবে অনেকেই সব ধরনের ক্লিনার যেমন- টাইলস ক্লিনার, ব্লিচ বা গ্লাস ক্লিনারও রান্নাঘরের কেবিনেটে রেখে দেন।
পরিষ্কার বিশেষজ্ঞ কেটি ডিলস এই প্রবণতাকে বিপজ্জনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “অনেক ক্লিনিং প্রোডাক্টে বা পরিষ্কারক সামগ্রীতে এমন কেমিকেল থাকে, যা খাবার বা রান্নার পাত্রের পাশে থাকলে দূষণ ঘটাতে পারে। আর যদি সেই কেবিনেট শিশু বা পোষা প্রাণীর নাগালে থাকে, তাহলে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “এসব ক্লিনার রাখতে হবে রান্নাঘর থেকে দূরে, একটি লক করা কেবিনেটে, অথবা স্টোররুমে। যেখানে শিশু বা পোষা প্রাণী পৌঁছাতে পারবে না।”
বাল্ক বা বড় বোতলের তেল
বর্তমানে অনেকে অর্থ বাঁচাতে বড় বোতলে অলিভ অয়েল বা অন্যান্য রান্নার তেল কিনে রাখেন। বিশেষ করে ওয়্যারহাউজ বা ডিসকাউন্ট স্টোর থেকে। এটি খরচ কমাতে সাহায্য করে বটে, তবে তেল যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তবে তা সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
জেসিকা লিটম্যান বলেন, “তেল এমনিতেই সংবেদনশীল একটি উপাদান। যদি তা ওভেন বা চুলার পাশে গরম কেবিনেটে রাখা হয়, তবে দ্রুত ‘র্যানসিড’ হয়ে যায়— অর্থাৎ তেল খারাপ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “রান্নার জন্য ছোট একটি বোতলে তেল রাখুন, আর বড় বোতলটি রাখুন ঠাণ্ডা ও অন্ধকার জায়গায় যেমন সংরক্ষণকক্ষ বা বেইসমেন্টে।”
সূত্র: বিডি নিউজ ২৪