শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৮:১৫, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

পথছবি তুলে আন্তর্জাতিক মহলে সমাদৃত বশেমুরবিপ্রবির নাহমাদ

পথছবি তুলে আন্তর্জাতিক মহলে সমাদৃত বশেমুরবিপ্রবির নাহমাদ
সংগৃহীত

ছবি তুলতে কার না ভালো লাগে? কখনো নিজের ছবি, কখনো পরিবারের ছবি, কখনো প্রিয় মানুষটির ছবি কিংবা প্রকৃতির ছবি। এখন আগেকার মতো আর স্টুডিওর আলোকচিত্রকরের কাছে বসে থাকতে হয় না। চারদিকের ডিভাইসের ছড়াছড়ি। এখন অনায়াসে ধারণ করা যায় যেকোনো মুহূর্ত কিংবা স্মৃতি। আবার এই ছবির মাধ্যমে অনেকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজেকে তুলে ধরছেন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বমঞ্চে। তাদেরই একজন বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থী নাহমাদ উল্লাহ হাসান। তিনি লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। 

২০২১ সালে বিবিসির বিশ্বসেরা মাত্র ছয়জন ফটোগ্রাফারদের মধ্যে নাহমাদ ছিলেন দেশের একমাত্র তরুণ। এছাড়াও আলোকচিত্রের বিশ্বসেরা ফটো সংগ্রহশালা পিক্সেল একাউন্টের মাধ্যমেই তিনি আন্তর্জাতিক মহলেও বেশ সমাদৃত। তার একাউন্টে দেশি – বিদেশি প্রায় ৪ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। 

বিবিসির বিশ্বসেরা মাত্র ছয়জন ফটোগ্রাফারদের মধ্যে নাহমাদ ছিলেন দেশের একমাত্র তরুণ। গল্পে গল্পে তার সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে জানাব তার অজানা সব অধ্যায়। 

শুরুর গল্পটা কেমন?

নাহমাদ: আহামরি ঘটা করে কোনোকিছু শুরু হয়নি। স্কুলে থাকাকালীন আত্মীয়স্বজনের ফোন দিয়েই প্রথমে টুকটাক ছবি তোলা শুরু। তারপর কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর প্রথম ক্যামেরা কিনে দেয় আমার ছোটবোন। সেখান থেকেই মূলত পেশাদার ছবি তোলার যাত্রা শুরু। 

পেশাদার ফটোগ্রাফার হলেন কীভাবে? 

নাহমাদ: আমার বাড়ির পাশে খুলনা রেললাইন। ওখানকার অসহায় পথশিশু আর সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে আমার যাত্রা শুরু। তাদের অসহায় জীবনযাপন আমাকে খুব ভাবায়। তাদের জীবনযাত্রার কয়েকটি ছবি ধারণ করে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে ছাড়ার পরে আমার যাত্রা শুরু। যতটুকু পারি ছবির মাধ্যমে তাদের জীবন ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। সময় পেলেই ছুটে পরি রেললাইন আর রাস্তায় রাস্তায়। সুযোগ পেলেই ক্যামেরাবদ্ধ করি রাস্তায় পরে থাকা জীবনের গল্প। 

এখন কেমন চলছে?

নাহমাদ: এখন চেষ্টা করছি কীভাবে এই পেশাকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। ইচ্ছে আছে, সমাজের এসব অসহায় মানুষদের নিয়ে ভালো কিছু করার।

ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা? 

নাহমাদ: আমার নিজের ইচ্ছায় এ পথ বেছে নেয়া। এ বিষয়ে  কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়। ইউটিউব আর অনলাইনের মাধ্যমেই আমার এ পথে যাত্রা শুরু। 

ফটোগ্রাফি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

নাহমাদ: আমাদের দেশে ফটোগ্রাফি সেক্টরটা সংকীর্ণ। যার কারণে  উন্নত বিশ্বের মতো এখানে ছবি তুলে করে কিছু একটা করা খুবই কঠিন। তবে ইচ্ছে আছে, উন্নতির ধারাবাহিকতায় আলোকচিত্রকে (ফটোগ্রাফিকে) একটা আলাদা প্লাটফর্ম হিসেবে দাড় করানো।

 ফটোগ্রাফার হিসেবে অর্জিত অর্থের পরিমাণ কেমন?

নাহমাদ: প্রায় ৪ লাখ টাকা। যা আবার আমি ক্যামেরা, লেন্স ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য জিনিস কিনতে ব্যবহার করেছি।

 অনুগামীদের প্রতি কি উপদেশ থাকবে?

নাহমাদ: আমি দীর্ঘদিন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির  সংগঠন BSMRSTU Photographic Society- এর  দায়িত্বে ছিলাম। আমার কনিষ্ঠদের সবসময় ফটোগ্রাফিতে ভালো করা, পথচিত্র (স্টিট ফটোগ্রাফি), লাইফস্টাইল ফটোগ্রাফি, প্রডাক্ট ফটোগ্রাফি, উইডিং ফটোগ্রাফি শেখানোর চেষ্টা করেছি। আমার ক্যাম্পাস জীবন শেষের পথে। তবে ক্যাম্পাস ছাড়ার আগে একটা বিষয় দেখে যেতে পেরে ভালো লাগছে। তা হলো, তাদের ফটোগ্রাফির ওপর ভালোবাসা। ঠিক এটাই আমি চেয়েছিলাম। আর উপদেশ বলতে গেলে একটা কথাই বলব, লক্ষ্য ঠিক করে ঝুঁকি নাও।  ঝুঁকি যতই থাকুক, ব্যর্থতা একটা অংশমাত্র।

এই কাজ কেমন উপভোগ করছেন?

নাহমাদ: ফটোগ্রাফির মত এমন স্বাধীন পেশা আর আছে বলে আমার জানা নেই। এটি এমনি একটি সেক্টর যেখানে সম্ভাবনা অন্য সেক্টর থেকে অনেক বেশি, আমার মনে হয় ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসা থাকলে সেটা সবসময়ই উপভোগের যোগ্য।

কিভাবে উপার্জন করা যায়?

নাহমাদ: অনেকভাবেই। অনলাইনে প্লাটফর্মে অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখানে চড়া মূল্যে ছবি বেচা-কেনা হয়। আবার বিভিন্ন মাল্টিন্যশনাল কোম্পানিতে ভালো চাহিদা। তাছাড়া গতানুগতিক উইডিং সেক্টরেও সুযোগ আছে। তাছাড়া আজকাল ফ্রিল্যান্সিং কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা প্রচুর পয়সা কামাচ্ছে এই ফটোগ্রাফির মাধ্যমে। এছাড়াও পত্রিকাগুলোতে ছবি বিক্রির মাধ্যমে উপার্জন করা সম্ভব। 

 আপনার অর্জনের ঝুলিতে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কারের বিষয়ে জানাবেন।

নাহমাদ: করোনাকালীন সময়ে বিবিসির 35awards- top 100 child photographer 2021 BBC younger photographer  হয়েছি। এছাড়াও  Lenzsation academy of photography moments collective annual execution listed, APC photo of the month, Russian 35 awards photographs competition,  ভারতের অ্যাডোবি ফটো, আর্টিস্টিক ফটোগ্রাফার ক্লাবসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকর্তৃক আমার তোলা ছবি মনোনীত হওয়াসহ পুরস্কৃত হয়েছি। এছাড়াও প্রায়ই দেশের প্রথম সারির কয়েকটি পত্রিকায় আমার ছবি প্রকাশিত হয়।

কি ধরনের চ্যালেঞ্জিং মোকাবেলা করতে হয়?

নাহমাদ: নতুন কোন বিষয়ে আগ্রহকে বাসা থেকে প্রথমে ভালোভাবে না দেখলেও যখন আয়ের উৎস হিসেবে এটাকে দাঁড় করাতে পেরেছি, তখন তারা আস্তে আস্তে এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা শুরু করেছে। আর প্রাথমিকভাবে ক্যামেরার অতিরিক্ত মূল্য থাকায় ফটোগ্রাফি শুরু করতে গেলে কম-বেশি সবাই সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্তু ধৈর্য ও ইচ্ছার জায়গা থেকে এটা মোকাবেলা করাতে আস্তে আস্তে মানিয়ে নেয়া সহজ হয়।

 

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ