শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৪:১২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আপডেট: ১৮:১২, ১২ নভেম্বর ২০২৩

জীবনের গল্পে মাননীয় ডেপুটি স্পিকার

জীবনের গল্পে মাননীয় ডেপুটি স্পিকার

মানুষটা বড্ড সাধাসিধে। প্রাণ খুলে যেমন হাসেন তেমনি কথাও বলেন বেশ আন্তরিকভাবে। আড়ম্বরহীন এক অন্যরকম জীবন তার। সারাক্ষণ ডুবে থাকেন কাজে। তবে নিজের জন্য এখন আর কিছুই করেন না। মানুষের জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছেন তিনি। মানুষটির নাম অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। দশম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার। ১৯৪৬ সালে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্ম তার।

সেখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে যুক্ত ছিলেন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, পরবর্তীতে জড়িয়েছেন সক্রিয় রাজনীতিতে। ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি একবার হুইপ এবং ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্ণাঢ্য কর্মময় এ মানুষটি ছেলেবেলা, বেড়ে ওঠা আর রাজনীতির বাইরের গল্প।

জাতীয় সংসদের নিজ বাসভবনে কার্যালয়ে ব্যস্ত ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১০ টা। ডেপুটি স্পিকারের ব্যস্ততা কমে না। ওদিকে ঘনিয়ে আসছে আমাদের যাবার সময় জীবনের গল্প বলবেন কখন? সময় স্বল্পতা আঁচ করতে পেরেই ঝটপট স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলেন। নিজের রঙিন অতীত বলতে গিয়ে কখনো হাসলেন, আবার কখনও আবেগপ্রবণ হয়ে আর্দ্র চোখ আড়াল করলেন এ পার্লামেন্টারিয়ান।

ছেলেবেলায় বড্ড দুরন্ত ছিলেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তবে পড়াশোনায় পিছিয়ে ছিলেন না একটুও। ক্লাস ফাঁকি না দিলেও বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে মানুষের গাছের আম ‘চুরি’ করে খাওয়া মিস হতো না তার। এজন্য বকাঝকাও কম শোনেননি। কিন্তু কে থামায় কাকে? বকা খেয়ে দুরন্তপনা যেনো আরও গতি পায়।

নিজের এমন গল্প শোনাতে গিয়ে হাসি থামাতে পারছিলেন না ডেপুটি স্পিকার। ছেলেবেলাতেই যেনো ফিরে গেছেন তিনি। হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমাদের বাড়িতে সবাই এক কাচারি ঘরে থেকে লেখাপড়া করতাম। বাড়ির মাঝখানে এক শরিকের গাছে মিষ্টি আম ধরতো। আমাদেরকে তিনি কোনোদিন আম খেতে দিতেন না। কিন্তু আমরা পণ করেছি তাকেই তার আম খেতে দেবো না। যেই ভাবা সেই কাজ। একজন গাছে চড়তো আর বাকি কয়েকজন মিলে নিচে চাদর খুলে তার চারকোণা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। সে চাদরে আম পড়তো। কেউ টের পেতো না। এভাবেই তার গাছের সব আম আমরা সাবাড় করে দিয়েছি।’

ফজলে রাব্বী মিয়া যখন হাইস্কুলে, তখন স্কুলের সব আয়োজনে পাওয়া যেতো তাকে। কবিতা, নাটক, বিতর্ক আর উপস্থিত বক্তৃতার মঞ্চ দখলে ছিলো তার। এজন্য স্কুলে বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এইসব কাজে পটু ছিলেন খুব। একবার তো নাটকের রিহার্সেল শেষে মধ্যরাতে বাড়িতে ফিরে পড়েছেন বড্ড বিপদে। সে গল্প শোনাতে গিয়ে বলেন, ‘আমার ডাকনাম ছিলো ভেলু। আমরা ছেলেরা থাকতাম বাড়ির কাচারি ঘরে। সে ঘরের দরজায় সবসময় একটা দড়ি ঝুলিয়ে রাখতাম। যেটা টান দিলেই বন্ধ দরজা খুলে যেতো। কিন্তু সেদিন রাত দুইটায় রিহার্সেল শেষে ফিরে দেখি কাচারি ঘরে তালা দেয়া। তালার ওপরে আবার লেখা ‘ভেলু ও পেয়ারার খাবার লাকির মায়ের ঘরি রহিল, ডাকিলেই পাইবা।’ বুঝতে পেরেছি এটা দাদার কাজ। বেশ চিন্তিত হয়ে গেলাম। রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত জল্পনা কল্পনা করলাম। শীতের রাত ছিলো বলে পাটখড়িতে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে গিয়ে ঘটালাম আরেক বিপত্তি। পাশের আম গাছে লেগে গেছে সে আগুন। এরমধ্যেই দাদা টের পেয়ে গেলেন। আর তো শুরু হলো বকা।’ বলেই বালখিল্য হাসি হাসতে লাগলেন তিনি। হাসিতে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যেন ছেলেবেলার মুহুর্তগুলো।

‘ছেলেবেলায় আর কী কী করতেন’ এমন প্রশ্ন করার আগেই উত্তর বেরুতে লাগলো, ‘কী করিনি। সবই করেছি। বড় পুকুরে সাঁতার কাটা, খেলার মাঠ মাতিয়ে রাখা আর হৈ হল্লুড়, সবই করেছি। আমাদের একটা গাভী ছিলো। সে গাভী মাঠে চরানো ছিলো রুটিনওয়ার্ক। স্কুল জীবনে কোনদিন আমাদের দুধ কিনে খেতে হয়নি।’

খানিকটা থেমে আবার বললেন, ‘তবে আমরা যা-ই করেছি, কোনদিন ক্লাসে অনুপস্থিত ছিলাম না। সেজন্য শিক্ষকদের খুব প্রিয় ছিলাম। সে সময় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন, ড. জাহিদুল হক, শামসুল হক, আম্রিকা চরণ দাস, তালেবার রহমান, মনিন্দ্র নাথ দাস। আমরা কোনোদিন কোনো পরীক্ষায় ফেল করিনি।

নিজের স্কুল বন্ধুদের মনে পড়তেই খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন ডেপুটি স্পিকার।

‘প্রেম করেছেন কী না’ এমন প্রশ্নে আবারও হাসির ঢেউ তুললেন। উত্তরে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন, ‘আমার সঙ্গে কেউ প্রেম করার সাহস করতো না। কখনোই আমি কাউকে সে সুযোগ দেইনি। তবে শুনেছি কেউ কেউ আমার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলো। বড় হয়ে যখন বিয়ের সময় এলো, তখনও আব্বা যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছেন তাকেই বিয়ে করেছি।’

‘রাজনীতিতে জড়িয়েছেন কীভাবে’- জানতে চাইলে ফজলে রাব্বী মিয়া বললেন, ‘১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান যখন মার্শাল ল জারি করে তখন আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তখন আমার এক চাচা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। পরবর্তীতে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানও হয়েছেন। তার অনুপ্রেরণায় আইয়ুব বিরোধী মিছিল বের করি। সেটাতে আমি নেতৃত্ব দেই। সে মিছিলে পুলিশের দাবাড়ও খেয়েছি। তবে আমাদের বাড়ির বেশ ঐতিহ্য ছিলো বলে পুলিশ বাড়ির ভেতরে গিয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করার সাহস পেতো না। সে-ই থেকে রাজনীতি শুরু, নেমে পড়লাম রাজনীতিতে।’

কলেজ জীবনের রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কলেজ লাইফে এসে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন হয়েছে। সে আন্দোলনে গাইবান্ধায় নেতৃত্ব দিয়েছি আমি, হাসান মাহমুদ সিদ্দিক ও ভুলু। পুরো মহকুমার বিভিন্ন স্থানে আমরা সমাবেশ করতাম। আমার মনে আছে, সে সময় আমার বক্তব্য শোনার জন্য মানুষ হারিকেন নিয়ে আসতো

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ