চোখ দেখেই বয়স বলে দেবে এআই

চোখের রেটিনার ছবি বিশ্লেষণ করে একজন মানুষের প্রকৃত বয়স জানাতে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল তৈরি করেছেন চীনের গবেষকেরা। গবেষকদের দাবি, মডেলটি চোখের ফান্ডাস ইমেজ বিশ্লেষণ করে একজন মানুষের প্রকৃত বয়স নির্ধারণের পাশাপাশি ‘রেটিনাল এজ’ নির্ধারণ করতে পারে। বয়স নির্ধারণের এই প্রযুক্তি শুধু বার্ধক্য শনাক্তেই নয়, নারীর প্রজননস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণেও সহায়ক হতে পারে।
গবেষকদের তথ্যমতে, মানুষের প্রকৃত বয়স ও চোখের বয়সের মধ্যে পার্থক্য বা ‘রেটিনাল এজ গ্যাপ’ যদি বেশি হয়, তাহলে তা দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও দ্রুত বার্ধক্যের ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে এই বয়সের পার্থক্য সন্তান ধারণের সক্ষমতা বা দ্রুত মেনোপজের ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে পারে। এই গবেষণার পেছনে রয়েছে ‘ফ্রোজেন অ্যান্ড লার্নিং এনসেম্বল ক্রসওভার’ বা ফ্লেক্স নামের একটি উন্নত এআই মডেল। গবেষকেরা ১০ হাজারের বেশি মানুষের চোখের ২০ হাজারের বেশি ছবি এবং প্রায় ১ হাজার ৩০০ প্রি-মেনোপজাল নারীর ২ হাজার ৫০০ রেটিনা চিত্র বিশ্লেষণ করে এআইটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চোখের পেছনের অংশ রেটিনায় যেখানে দেহের সূক্ষ্ম রক্তনালির চিত্র প্রতিফলিত হয়, তা বিশ্লেষণ করে ফ্লেক্স এআই বয়স নির্ধারণ করে। এরপর তা ব্যক্তির প্রকৃত বয়সের সঙ্গে তুলনা করে রেটিনাল এজ গ্যাপ নির্ধারণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীর চোখের বয়স তাঁদের প্রকৃত বয়সের চেয়ে বেশি, তাঁদের রক্তে অ্যান্টি-মুলেরিয়ান হরমোনের (এএমএইচ) পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এই হরমোন নারীর ডিম্বাণু রিজার্ভ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। কম এএমএইচ মানে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও কম। ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, রেটিনার বয়স যত বাড়ে, এএমএইচের মাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কাও তত বাড়ে। ৪০ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রতিটি বাড়তি রেটিনাল বছর এএমএইচ কমে যাওয়ার ঝুঁকি ১২ শতাংশ এবং ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেড়ে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে।
গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল আশাব্যঞ্জক হলেও তা চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হলে আরও ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, চোখের ছবি বিশ্লেষণ করে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা স্নায়বিক সমস্যারও আগাম ইঙ্গিত পাওয়া সম্ভব; যদিও এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো