বৃহস্পতিবার   ১৯ জুন ২০২৫ || ৬ আষাঢ় ১৪৩২

দৈনিক গাইবান্ধা

প্রকাশিত : ১৩:০৩, ১৯ জুন ২০২৫

ইসলামিক জীবন

তাবুক যুদ্ধে সাহাবিদের আত্মত্যাগ

তাবুক যুদ্ধে সাহাবিদের আত্মত্যাগ
সংগৃহীত

৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ বা নবম হিজরিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনা থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে তাবুক প্রান্তরে যুদ্ধের উদ্দেশে রওনা হন। তাবুক, মদিনা ও দামেস্কের (সিরিয়া) মধ্যবর্তী একটি স্থান। এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে আরবের কাফের, মুনাফিক ও রোমান সাম্রাজ্যের সম্মিলিত চূড়ান্ত প্রচেষ্টা।

তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি রোমান সাম্রাজ্য মুসলিমদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চেয়েছিল। এক বছর আগে মুতার যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় রোমানদের জন্য অশনিসংকেত হয়ে ওঠে। এর প্রভাবে আরব ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রোমান শোষণ থেকে মুক্তির চেতনা জাগ্রত হয়। সিরিয়ার রোম-আরব সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মুসলিম শক্তিকে দমন করতে শাম ও আরব সীমান্তে ৪০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মুবারকপুরি, পৃ. ৬২১)

নাবতিদের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই প্রস্তুতির খবর পান এবং হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের আগেই আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মদিনার সব মুসলমানকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেন।

রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মুসলিম শক্তিকে দমন করতে শাম ও আরব সীমান্তে ৪০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেন।

মদিনায় তখন খেজুর পাকার মৌসুম। সময়মতো ফসল না তুললে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিল। খাদ্যাভাব, তীব্র গরম এবং দুর্গম মরুভূমি পাড়ি দিয়ে তাবুক পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ ছিল। যুদ্ধের রসদও ছিল অপ্রতুল। এমন পরিস্থিতিতে বিশাল রোমান বাহিনীর মোকাবিলা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৪/৬০০, সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৭৬০)

রাসুলপ্রেমী সাহাবিরা সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। তাঁরা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে অবদান রাখেন। উসমান ইবনে আফফান (রা.) সিরিয়ায় ব্যবসায়িক কাফেলার জন্য প্রস্তুত ২০০টি সুসজ্জিত উট (বর্তমান মূল্যে সাড়ে ১৯ কেজি রৌপ্য), ১০০টি খাদ্য-রসদে সজ্জিত উট, ১০০ দিনার (প্রায় ৫ কেজি স্বর্ণ), ৯০০টি উট ও ১০০টি ঘোড়া দান করেন।

আবু বকর (রা.) ঘরের সব সম্পদ, ৪০০ দিরহাম নিয়ে নবীজির দরবারে হাজির হন। ওমর (রা.) অর্ধেক সম্পদ দান করেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ২০০ উকিয়া (১ উকিয়া সমান ৪০ রৌপ্য মুদ্রা) রৌপ্য নিয়ে আসেন। আব্বাস (রা.), তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.), সাদ ইবনে উবাদা (রা.), মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রা.) নিজেদের সাধ্যের সবটুকু দান করেন। আসিম ইবনে আদি (রা.) সাড়ে ১৩ হাজার কেজি খেজুর দান করেন। কেউ কেউ দুয়েক মুষ্টি খাবার, নারীরা গলার হার, ঝুমকা, পায়েল ও আংটি দান করেন।

কেউ কেউ দুয়েক মুষ্টি খাবার, নারীরা গলার হার, ঝুমকা, পায়েল ও আংটি দান করেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ৩০ হাজার সাহাবির কাফেলা নিয়ে তাবুকের উদ্দেশে রওনা হন। মদিনায় মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা বা সিবা ইবনে উরফুতা (রা.)-কে স্থলাভিষিক্ত এবং আলী (রা.)-কে পরিবারের দায়িত্ব দেন। হিরাক্লিয়াস মুসলমানদের এই দুঃসাহসিক অভিযানের খবর পেয়ে যুদ্ধ না করে পালিয়ে যান। আল্লাহ বিনা যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় দান করেন।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা, তোমাদের হয়েছে কী যে যখন তোমাদের আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তোমরা আরও জোরে মাটি কামড়ে ধরো। তোমরা কি আখিরাতের স্থলে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি পছন্দ করো? আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের সামগ্রী তো অতি সামান্য।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৮-৩৯)

সাহাবিদের এই ত্যাগ ও ভালোবাসা ইসলামের ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ