ফেরাউনের পতনের পর বনী ইসরাঈল যা করেছিল
পৃথিবীর স্বৈরশাসকদের তালিকায় ফেরাউনের নাম সব সময় সবার আগে নেওয়া হয়। জনগণের ওপর তার জুলুম নির্যাতন এতো বেশি ছিল যে পৃথিবীতে নতুন করে কোনো স্বৈরশাসক প্রতিষ্ঠিত হলে তাকে ফেরাউনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। অত্যাচারী ফেরাউন যতটা প্রভাবশালী ছিল তার পতনও ঠিক ততটাই করুণভাবে হয়েছে। পতনের মুহূর্তে নিজেকে রক্ষার শেষ অবলম্বনটুকুও ছিল না তার কাছে। লাশ দাফনেরও কেউ ছিল না সঙ্গে।
ফেরাউনের পতনের পর বনী ইসরাঈল সমুদ্র পার হয়ে সিরিয়ায় চলে যায়। এবং সেখানে একটি জায়গায় তিনদিন অবস্থান করে। সেখান পান করার মতো কোনো পানি ছিল না। আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করলেন। এ সময় বনী ইসরাঈল এমন এক সম্প্রদায়ের দেখা পেল যারা মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিল। তাদের মূর্তিগুলো ছিল গরুর আকৃতির।
বনী ইসরাঈল তাদের কাছে জানতে চেয়েছিল, তোমরা কেন এই মূর্তিগুলোর পূজা করো? জবাবে তারা জানিয়েছিল, এগুলো আমাদের উপকার করে, প্রয়োজন পূরণ করে। বনী ইসরাঈলের মূর্খ লোকেরা তাদের কথায় প্রভাবিত হলো এবং মুসা আ.-এর কাছে আবেদন করলো, তিনি যেন তাদের জন্য এমন দেব-দেবী তৈরি করে দেন যেন তারাও তার কাছে নিজেদের প্রয়োজন-আবদার জানাতে পারে।
মুসা আ. তাদেরকে বললেন, প্রতিমা পূজাকারিরা নির্বোধ এবং তারা হিদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত। তারা যা করছে তা তাদেরকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে। এরপর মুসা আ. তার সম্প্রদায়কে আল্লাহর নিয়ামতরাজি এবং সমকালীন বিশ্বর জাতিগুলোর মাঝে তাদের জ্ঞান, শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি তাদের আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে, অত্যাচারী ফেরাউনের কবল থেকে আল্লাহ তাদের মুক্ত করেছেন তাই তাদের উচিত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং তার কাছেই নিজেদের প্রয়োজন পূরণের আবেদন করা।
পবিত্র কোরআনে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে—
فَانۡتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡ فَاَغۡرَقۡنٰهُمۡ فِی الۡیَمِّ بِاَنَّهُمۡ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ كَانُوۡا عَنۡهَا غٰفِلِیۡنَ وَ اَوۡرَثۡنَا الۡقَوۡمَ الَّذِیۡنَ كَانُوۡا یُسۡتَضۡعَفُوۡنَ مَشَارِقَ الۡاَرۡضِ وَ مَغَارِبَهَا الَّتِیۡ بٰرَكۡنَا فِیۡهَا ؕ وَ تَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ الۡحُسۡنٰی عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ۬ۙ بِمَا صَبَرُوۡا ؕ وَ دَمَّرۡنَا مَا كَانَ یَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَ قَوۡمُهٗ وَ مَا كَانُوۡا یَعۡرِشُوۡنَ وَ جٰوَزۡنَا بِبَنِیۡۤ اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ مُتَبَّرٌ مَّا هُمۡ فِیۡهِ وَ بٰطِلٌ مَّا كَانُوۡا قَالَ اَغَیۡرَ اللّٰهِ اَبۡغِیۡكُمۡ اِلٰـهًا وَّ هُوَ فَضَّلَكُمۡ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَاِسۡرَآءِیۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتَوۡا عَلٰی قَوۡمٍ یَّعۡكُفُوۡنَ عَلٰۤی اَصۡنَامٍ لَّهُمۡ ۚ قَالُوۡا یٰمُوۡسَی اجۡعَلۡ لَّنَاۤ اِلٰـهًا كَمَا لَهُمۡ اٰلِـهَۃٌ ؕ قَالَ اِنَّكُمۡ قَوۡمٌ وَ اِذۡ اَنۡجَیۡنٰكُمۡ مِّنۡ اٰلِ فِرۡعَوۡنَ یَسُوۡمُوۡنَكُمۡ سُوۡٓءَ الۡعَذَابِ ۚ یُقَتِّلُوۡنَ اَبۡنَآءَكُمۡ وَ یَسۡتَحۡیُوۡنَ نِسَآءَكُمۡ ؕ وَ فِیۡ ذٰلِكُمۡ بَلَآءٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ عَظِیۡمٌ تَجۡهَلُوۡنَ
সুতরাং আমি তাদের হতে প্রতিশোধ নিলাম এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে মারলাম, কেননা তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, আর এই ব্যাপারে তারা ছিল সম্পূর্ণ গাফিল বা উদাসীন।
আর আমি দুর্বল করে রাখা লোকেদেরকে সেই যমীনের পূর্বের আর পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম যাতে আমি কল্যাণ নিহিত রেখেছি। এভাবে বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে তাদের ধৈর্য ধারণের কারণে তোমার প্রতিপালকের কল্যাণময় অঙ্গীকার পূর্ণ হল আর ফিরাউনের ও তার লোকজনের গৌরবময় কাজ ও সুন্দর প্রাসাদগুলোকে ধ্বংস করে দিলাম।
বনী ইসরাঈলকে আমি সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম, অতঃপর তারা এমন এক জাতির নিকট এলো যারা ছিল প্রতিমা পূজারী। মূসার লোকজন বলল, হে মূসা! আমাদের জন্যও ‘কোন দেবতা বানিয়ে দাও যেমন তাদের দেবতা আছে।
মূসা বলল, তোমরা হলে এমন এক সম্প্রদায় যারা মূর্খদের মতো আচরণ করে।’ এ সব লোক যে কাজে লিপ্ত রয়েছে তাতো ধ্বংস করা হবে, আর তারা যা করছে তা অমূলক ও বাতিল বিষয়। তিনি আরো বললেন, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের জন্য আমি কি অন্য ইলাহ খোঁজ করব অথচ তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টিকুলের উপর শ্ৰেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?
স্মরণ কর সেই সময়টির কথা, যখন আমি তোমাদেরকে ফিরাউনের অনুসারীদের দাসত্ব হতে মুক্তি দিয়েছি, যারা তোমাদেরকে অতিশয় মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক ও ন্যাক্কারজনক শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বিরাট পরীক্ষা। (সূরা আরাফ, আয়াত : ১৩৬-১৪১)
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট