শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৮:০৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

বাংলা একাডেমি পুরস্কার: পুরোনো বিতর্কের নতুন মাত্রা

বাংলা একাডেমি পুরস্কার: পুরোনো বিতর্কের নতুন মাত্রা
সংগৃহীত

কয়েক বছর ধরে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ঘোষণার পরই কিছু না কিছু বিতর্ক সামনে আসছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের যোগ্যতা, কর্ম ও লবিং-তদবির নিয়ে আলোচনা হয়েই তা শেষ হয়ে যায়। এরপর অপেক্ষা নতুন বছরের। কিন্তু এবার আর থামেনি সেখানে। পুরনো বিতর্ক পেয়েছে নতুন মাত্রা। 

রোববার দুপুরে এ মাত্রা যুক্ত করেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান- ২০১৪ সালে পাওয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার তিনি ফেরত পাঠিয়েছেন। সঙ্গে প্রাপ্ত সম্মানী ১ লাখ টাকার একটি চেকও পাঠিয়েছেন এই কথাসাহিত্যিক। পুরস্কার ফেরত সংক্রান্ত চিঠির একটি অংশ ও চেকের ছবিও জাকির তালুকদার যুক্ত করেন ঐ ফেসবুক পোস্টে। সঙ্গে সঙ্গেই আলোচনা তুঙ্গে। 

মন্তব্যঘরে সবাই এর কারণ জানতে চাইলে তিনি এখনই কিছু জানাতে চান না বলে উত্তর দেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক ডেইলি বাংলাদেশ জাকির তালুকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রহীনতা, আমলাতান্ত্রিকতা, প্রতিষ্ঠানের মানের নিম্নগামিতা এবং আড়াই দশক ধরে নির্বাচন না দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো লোক দিয়ে একাডেমি পরিচালনায় নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়।’

তিনি আরো বলেন, বাংলা একাডেমি নিজেদের মতো অ্যাডহক কমিটি গঠন করে কাজ চালায়। তারাই নির্ধারণ করে আলোচনা সভাগুলোতে কারা আসবেন, কারা প্রবন্ধ পাঠ করবেন। কোন ধরনের বই বের হবে, পুরস্কার কমিটিতে কারা থাকবেন- এগুলো তারাই ঠিক করেন। এসব কারণে বাংলাদেশের সচেতন মানুষের কাছে বাংলা একাডেমির বিশেষ মর্যাদা আর নেই। যে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নেই, সে প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার আমি আর বয়ে বেড়াবো কেন? প্রতিষ্ঠানের মান যখন নিম্নগামী হতে থাকে, তখন এই পুরস্কার অর্থহীন হয়ে যায়। এজন্যই আমি পুরস্কার ফেরত পাঠিয়েছি।’

জাকির তালুকদারের এমন সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন, কবি সাজ্জাদ কাদির, কবি নিলয় রফিক, আলী সিদ্দিকী, শেখ ফজলে এলাহি, আয়শা করীম মুন্নী, জব্বার আল নাঈমসহ অনেকেই ঐ পোস্টের মন্তব্যঘরে সমর্থন জানিয়েছেন। 

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন দীর্ঘ ১০ বছর পরে পুরস্কার ফেরত দেওয়ায়। কবি শিমুল মাহমুদ লিখেছেন, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়ে সবাই একবার টক অব দা টাউনে পরিণত হন। কিন্তু পুরস্কারটি ফেরত দিয়ে আরো একবার মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব- এ বুদ্ধিটি অভিনব। ১০ বছর ব্যবধানে পুরস্কারের এমন উভমুখী নিপুণ সদ্ব্যবহার এ যাবৎ আর কেউ করেননি।’

আবদুল কুদ্দুস নামে একজন লিখেছেন, ‘জাকির তালুকদার বাংলা একাডেমির পুরস্কার কয়েক বছর আগে গ্রহণ করে এখন আবার ফেরত দিয়েছেন। এটাকে অনেকেই মহৎ কর্ম বলছেন! জাকির তালুকদার যখন বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়েছিলেন তখন কি বাংলা একাডেমি খুবই ধোঁয়া তুলসী পাতা ছিল?’

আবার কবি ব্রাত্য রাইসু লিখেছেন, ‘পুরস্কার না নেয়া সাহিত্যগতভাবে মর্যাদা রক্ষার উপায়। নিয়ে ফেরত দেওয়াটা-১০ বছর পরে হইলেও- বৈপ্লবিক। যেমন বদরুদ্দীন উমর নেননি, এর দ্বারা তিনি খারাপ সংসর্গ হইতে নিজেকে বাঁচিয়েছেন। এটা এলিট উপায়। জাকির তালুকদার নিয়ে ফেরত দিয়েছেন। এই দেওয়া তিনি বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে একটা কার্যকর অ্যাকশন নিলেন। যেটা বদরুদ্দীন উমর নেননি। নিলে আজকে এই দশা হতো না বাংলা একাডেমির। বদরুদ্দীন উমরের গা বাঁচানোর দৃষ্টান্তের চেয়ে জাকির তালুকদারের এই খেয়ে বমি করার উদাহরণ বেটার।’

এ বছর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ঘোষণা হয়েছে আফরোজা পারভীনের নাম। তিনি এই পুরস্কার সম্পর্কে ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আমাদের মনন, সাংস্কৃতিক চিন্তাচেতনা কর্মকাণ্ডের বীজঘর; কোনো একক ব্যক্তি পুরস্কার দেন না। অনেকগুলো প্রক্রিয়া পার হয়ে তবেই পুরস্কার চূড়ান্ত হয় বলে শুনেছি। এ প্রক্রিয়ায় অনেকের অংশগ্রহণ থাকে।’

বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০২৩ প্রাপ্তদের মধ্যে একজন মাসুদ পথিক। তিনি নাটক ও নাট্যসাহিত্যে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। জাকির তালুকদারের পুরস্কার ফেরত সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেইলি বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘যখন গ্রহণ করেন তখন তো তিনি সম্মত ছিলেন। পুরস্কার তো এক ধরনের প্রচার। এই প্রচার গ্রহণ করলেন, সব সুবিধা ভোগ করলেন, আর ১০ বছর পর ফেরত দিলেই কি হবে? পুরস্কারদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত যারা পুরস্কার গ্রহণ করবেন তাদের থেকে লিখিত নেয়া যে, ভবিষ্যতে কখনো তা ফেরত দেওয়া যাবে না।’

বাংলা একাডেমি পুরস্কার বিতর্ক নিয়ে কথা হয় কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটি পুরস্কার পাওয়ার জন্য যেমন অনেকে দৌড়ঝাঁপ করেন, একইভাবে কেউ তা ফেরতও দিতে পারেন। পৃথিবীর বহু বড় বড় পুরস্কার ফেরত দেওয়ার নজির আছে। এতে পুরস্কারের কিছু হয়ে যায় না। এসব নিয়ে ভাববার সময় আমার নেই। আমার কোনো ইন্টারেস্টও নেই।’

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ