ঘরে রাখা যে গাছগুলো দীর্ঘজীবী হয়

ঘরের এক কোণে সবুজ পাতার নীরব উপস্থিতি যেমন মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়, তেমনি দীর্ঘস্থায়ী একটি গাছ বছরের পর বছর একটি পরিবারের অংশ হয়ে উঠতে পারে। অনেকেই গৃহসজ্জার জন্য বা মানসিক প্রশান্তির খোঁজে ঘর সাজান বিভিন্ন গাছ দিয়ে। তবে অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, যত্নের ঘাটতি, আলো-পানির অনুপযোগিতা কিংবা আবহাওয়ার কারণে সেগুলো দীর্ঘদিন টিকে থাকে না।
তবে এমন কিছু গাছ আছে, যেগুলো শত বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে সঠিক যত্ন পেলে। গৃহে রক্ষিত কিছু উদ্ভিদ শুধু শোভাবর্ধন নয় বরং দীর্ঘকালীন সম্পর্কের নিদর্শন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এগুলোর জীবনচক্র যদি বোঝা যায় এবং সঠিক যত্ন দেওয়া যায়, তবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মেও এদের স্থানান্তর করা যায়।
রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ দীর্ঘদিন দিন টিকে থাকা এই গাছগুলো নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ প্রতিবেদন। বিদেশি এই গাছগুলো ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’ হিসেবে বাংলাদেশেও জনপ্রিয়।
ক্রিসমাস ক্যাকটাস
নামের মধ্যে ক্রিসমাস থাকলেও এই গাছ বছরের যে কোনো সময়েই ঘরের শোভা বাড়াতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রে এই গাছের জীবনকাল এক শতাব্দী পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে গাছটি একাধিকবার ফুল ফোটাতে সক্ষম। একবার শীতকালে এবং আবার বসন্তের শেষ দিকে বা গ্রীষ্মের শুরুতে।
ক্রিসমাস ক্যাকটাস বাংলাদেশের ভেতরেও ঘরে রাখা যায় যদি সরাসরি রোদ থেকে রক্ষা করে আলোযুক্ত স্থানে রাখা হয় এবং পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ততা এড়ানো যায়।
যত্নের টিপস: আলোকযুক্ত কিন্তু সরাসরি রোদের সংস্পর্শ নয় এমন জায়গায় রাখতে হবে। মাঝারি তাপমাত্রায় ও মাটি যেন সবসময় স্যাঁতসেঁতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জেড প্ল্যান্ট
বাংলাদেশে অনেকেই একে ‘মানি ট্রি’ বা ‘সৌভাগ্যের গাছ’ নামেও চেনেন। এটির মোটা, চকচকে পাতা শুধু দেখতে সুন্দরই নয়, বরং এটি দীর্ঘজীবীও বটে। সঠিক যত্নে জেড প্ল্যান্ট ৫০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। শুধু দীর্ঘজীবীই নয় বরং ঘরে অক্সিজেন সরবরাহের একটি চমৎকার উৎস। এই গাছ শহরের অ্যাপার্টমেন্টেও সহজে মানিয়ে নিতে পারে।
যত্নের টিপস: উজ্জ্বল কিন্তু পরোক্ষ আলো। গ্রীষ্মকালে নিয়মিত পানি। শীতকালে মাসে একবার। ড্রেনেজযুক্ত পাত্র ব্যবহার করতে হবে।
সাগো পাম
ডাইনোসরের যুগের একটি উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত এই গাছকে বলা হয় ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’। এটির আয়ু দুইশ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এর ঘন পাতাও অনেকটা ফার্ন-জাতীয় দেখতে হলেও এটি আসলে পাম পরিবারের। সাগো পাম একটি অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল গাছ। এর বৃদ্ধি ধীর হলেও জীবনকাল অত্যন্ত দীর্ঘ।
বাংলাদেশে এই গাছ শহরের বাগান বা বড় পাত্রে ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’ হিসেবে রাখা যায়, তবে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা ভালো। কারণ এর অংশবিশেষ বিষাক্ত হতে পারে।
যত্নের টিপস: উজ্জ্বল আলোতে রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে পানি দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা এড়াতে হবে। বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
কাস্ট আয়রন প্ল্যান্ট
নামের মধ্যেই এর পরিচয়। ‘কাস্ট আয়রন’ মানে লোহার মতো টেকসই। এই গাছ এমনকি অবহেলাতেও টিকে থাকতে পারে। প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে, আর সঠিক যত্নে এটি শতবর্ষীও হতে পারে। গাছটি কারও ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে ভালো মানিয়ে নিতে পারে। কম আলো, কম পানি, সবই সহ্য করে।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় যেখানে অনেক সময় ঘরের ভেতর সরাসরি রোদ পাওয়া যায় না, সেখানে এই গাছ আদর্শ।
যত্নের টিপস: কম আলোতেই ভালো থাকে। মাঝেমধ্যে পানি দিলেই যথেষ্ট। তাপমাত্রা খুব বেশি ওঠানামা না হওয়াই ভালো।
সূত্র: bdnews24