রোববার   ০১ জুন ২০২৫ || ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দৈনিক গাইবান্ধা

প্রকাশিত : ১৮:৩০, ২৭ মে ২০২৫

মন ভালো রাখার কাজ

মন ভালো রাখার কাজ
সংগৃহীত

মানসিক সুস্থতা কোনো একদিনের চর্চা নয়, এটা আজীবনের অভ্যাস। প্রতিদিনকার কর্মকাণ্ড, জীবনযাপন পদ্ধতি, এবং অভ্যাসগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মন ভালো রাখার চাবিকাঠি।

যথেষ্ট ঘুম, সুষম খাদ্যাভ্যাস আর আনন্দদায়ক কাজের সঙ্গে নিয়মিত যুক্ত থাকা- এইসবই মস্তিষ্কে ‘ডোপামিন’ নামক এক বিশেষ রাসায়নিকের নিঃসরণ ঘটায়, যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ডোপামিন কী?

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে অবস্থিত ‘কাইজার পার্মানেন্ট’য়ে কর্মরত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জেসিকা রেডি রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলছেন, “ডোপামিন হল এমন এক মস্তিষ্কের রাসায়নিক যা অনুপ্রেরণা, মনোযোগ এবং পুরস্কারের অনুভূতি তৈরি করে।”

অনেকেই একে শুধুমাত্র আনন্দের সঙ্গে যুক্ত করেন। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি ভবিষ্যৎ সুখের প্রত্যাশা তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

লস অ্যাঞ্জেলেস ভিত্তিক বৈবাহিক ও পারিবারিক থেরাপিস্ট এবং পেশাদার ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলর শেরিল গ্রসকপফ বলেন, “ডোপামিন হল শিকারির মতো। এটি মূলত ভবিষ্যতের আনন্দের আশায় আগ্রহী করে তোলে।”

যখন ডোপামিন স্তর কমে যায়, তখন মানসিকভাবে অবসন্ন, অমনোযোগী হয়ে পড়তে হয়। এর কারণ হতে পারে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, খারাপ খাদ্যাভ্যাস বা কিছু মানসিক সমস্যা।

তবে ভয়ের কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক কার্যকলাপ রয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবেই ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ায়।

নাচ

প্রিয় গানটি বাজলেই যদি শরীর নিজে থেকে নড়েচড়ে ওঠে, তাহলে সেটি সুখবর।

ডা. রেডি বলেন, “নাচ মস্তিষ্কের পুরস্কার ব্যবস্থাকে উদ্দীপ্ত করে, কারণ এতে আন্দোলনের সঙ্গে তাল, নতুনত্ব এবং আনন্দ একত্রিত হয়।”

গ্রসকপফ আরও বলেন, “নাচ একসঙ্গে মস্তিষ্কের মোটর সেন্টার ও আবেগীয় স্মৃতির অংশ সক্রিয় করে, যা স্বাভাবিকভাবেই ‘মুড’ বা মেজাজ ভালো করে।”

সবচেয়ে ভালো ফল পেতে হলে এমন গানেই নাচতে হবে যেটি ভালোবাসেন। শুধু শরীরচর্চার জন্য নয়। চাইলে টিকটকে কিছু কোরিওগ্রাফিও শিখে নেয়া যায়। শিখতে গেলে ডোপামিন আরও নিঃসরিত হয়, ফলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও উন্নত হয়।

হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (এইচআইআইটি)

এই ব্যায়াম পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে তীব্র শারীরিক অনুশীলনের পর বিশ্রাম নেওয়া হয়।

গ্রসকপফ বলছেন, “এই ধরনের অনুশীলনে স্বল্প সময়ের জন্য তীব্র প্রচেষ্টা মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন, অ্যাড্রেনালিন এবং এন্ডরফিনস নিঃসরিত করে, যা মানসিক সুস্থতায় সহায়ক।”

কম সময়ে অধিক উপকারের জন্য এইচআইআইটি একটি দারুণ পছন্দ হতে পারে।

প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটা

শুধু হাঁটা নয়, প্রকৃতির মাঝখানে হাঁটলে মনের ওপর প্রভাব হয় আরও গভীর।

গ্রসকপফ বলছেন, “নিয়মিত হাঁটার সঙ্গে রোদ ও গাছপালার পরিবেশ— এই তিনের সম্মিলনে ডোপামিন, সেরোটোনিন বাড়ে এবং কর্টিসল (চাপের হরমোন) কমে।”

রেডি বলেন, “হাঁটার সময় হৃদস্পন্দন বাড়ে, নিয়মিত গতি থাকে। এই সংকেতগুলো মস্তিষ্ককে ভালো রাসায়নিক নিঃসরণে উদ্দীপ্ত করে।”

পার্ক, পাহাড়ি পথ বা নদীর পাড় যে কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশেই চেষ্টা করুন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে।

খেলাধুলাভিত্তিক মজা

খেলাধুলার মতো কার্যকলাপও ডোপামিন নিঃসরণ করে।

গ্রসকপফ বলেন, “ট্রাম্পোলিনে লাফানো, স্কেটিং, কুকুরের সঙ্গে খেলা বা পানিতে নেমে জলকেলি এসব কাজ ডোপামিন বাড়ায়। কারণ এতে মজা আছে, চাপ নেই, এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে আনন্দ আছে।”

যদি বেশি নিয়ম-কানুন মাফিক শরীরচর্চায় অভ্যস্ত হলে, প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে যে কোনো মজাদার খেলাধুলাকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে শুরু করা উচিত।

নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে রাখতে হবে যেন মজাটাও নিয়মিত হয়।

যোগব্যায়াম

যোগব্যায়াম কেবল শরীর নয়, মনকেও শান্ত করে।

ডা. রেডি বলেন, “যোগব্যায়াম ডোপামিন নিঃসরিত করে। কারণ এতে স্ট্রেস বা চাপ হরমোন কমে এবং ‘বর্তমান মুহূর্তে’ মনোযোগী হওয়া যায়।”

শ্বাস-প্রশ্বাসের গভীরতা এবং ধীরতা সেরোটোনিন বাড়ায়, যা মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে।

গ্রসকপফ বলেন, “সকালে বা সন্ধ্যায় যোগব্যায়াম করলে প্রাকৃতিকভাবে ডোপামিনের প্রয়োজনীয়তা মেটানো যায়।”

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ