চিরুনিতে চুল দেখেই আঁতকে ওঠেন?
দিন দিন মাথার চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে, ঝরে যাচ্ছে, টাক পড়ে যাচ্ছে—এমন কথা অনেকের মুখেই শোনা যায়। চুল পড়া, চুল উঠে যাওয়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই। ছেলে-মেয়ে সবাই এর শিকার। মনে রাখা দরকার, চুল পড়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। নারী-পুরুষ উভয়ই এ সমস্যা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভোগে। তবে অল্পমাত্রার চুল পড়া স্বাভাবিক। মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়লে এবং বিষয়টি টাকের পর্যায়ে চলে গেলে চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।
প্রথমেই জানা প্রয়োজন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অংশ। চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুনিতে চুল দেখে আঁতকে ওঠার কোনো দরকার নেই। চুল প্রতি মাসে আধা ইঞ্চি করে বড় হয়। স্বাভাবিকভাবে একটি চুল দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত বড় হতে থাকে। এরপর বৃদ্ধি কমে যায়। সাধারণত সবার ক্ষেত্রেই খুশকি বড় সমস্যা।
চুল কেন পড়ে?
মূলত হরমোনজনিত কারণে মানুষ সবচেয়ে বেশি চুলপড়া সমস্যায় ভোগে। এটার আরেকটা নাম আছে প্যাটার্ন হেয়ার লস বলে এটাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঠিক মাথার দুপাশ দিয়ে চুলটা চলে যেতে থাকে এবং ধীরে ধীরে দেখা যায় যে মাথার ঠিক মাঝখানটা খালি হয়ে যায়। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে যেটা হয় ঠিক সিঁথির মাঝ বরাবর সিঁথি চওড়া হতে থাকে; চুল হালকা হতে থাকে এবং মাথা টাক হতে থাকে।
এছাড়া খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণেও চুল পড়ে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন পরিমিত পরিমাণে না থাকলে চুল পড়ে যায়। ছত্রাক সংক্রমণ বা খুশকি হলো চুল পড়ার অন্যতম কারণ; যেটাকে আমরা ড্যানড্রাফ বলে থাকি। সে ক্ষেত্রে ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করতে হয়। এর জন্য ওষুধ খেতে হতে পারে। সংক্রমণ ভালো হয়ে গেলে চুল আবার গজায়।
দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়তে পারে। এমনকি টাক হওয়ার চিন্তায় নাকি টাক হয়। এমনি অ্যানিমিয়া, কোভিড, টাইফয়েড, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে চুল পড়ে যেতে পারে।
চুল পড়া বন্ধে পরামর্শ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হলে অনেক ক্ষেত্রেই চুল পড়া বন্ধ হয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের ধূমপানের বিষয়টার দিকে একটু খেয়াল রাখা দরকার। ধূমপান কিন্তু চুল পড়ার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা পালন করে। সুতরাং ধূমপানের অভ্যাস পরিহার করা উচিত।
যাদের খুশকির সমস্যা আছে, তারা কিটোকোনাজল ২% সমৃদ্ধ শ্যাম্পু নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মাথার তালুতে লাগিয়ে তিন থেকে পাঁচ মিনিট রেখে একটু ফেনা তুলে যদি ধুয়ে ফেলা যায় তাহলে দেখা যায় মাথার ত্বকটাও পরিষ্কার থাকে। এতে অতিরিক্ত তেল জমে না এবং খুশকির সমস্যাও সমাধার হয়।
চুল পড়ার বিষয়ে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নেয়ার আগে বোঝার দরকার যে আমাদের দৈনিক চুল পড়ার ব্যাপারটা স্বাভাবিক কি-না। যদি প্রতিদিন দুইশ বা তিনশ চুল পড়ে যায় এবং চুল বড় হচ্ছে না বা নতুন চুল গজাচ্ছে না—এরকম অবস্থার যদি সৃষ্টি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে একজন চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা যায়, তাহলে চুল পড়ার সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে সমাধান সম্ভব।
নতুন চুল কখন গজায়
বয়স যদি ৪০ বছরের কম হয় এবং মাথার তালুতে ফলিকলের অবস্থা ভালো থাকে, তবে কিছু নিয়ম মেনে চললেই গজাবে নতুন চুল। আমাদের হেয়ার গ্রোথের একটা সাইকেল আছে। সাইকেলটা হচ্ছে যে একটা ফলিকিউর থেকে একটা চুল প্রথমে গজায়।সাধারণত দেখা যায় যে এক হাজার দিন বা তিন বছর পর্যন্ত একটা চুল গজায়।এবং একটা চুল যখন গজিয়ে সেটা একেবারে পূর্নতা লাভ করে তারপর এটা তিনমাস যাবত বেঁচে থাকে তারপর পড়ে যায়।
সাধারণত ক্যাস্টর অয়েল চুল গজাতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই খোসাসহ গোটা পেঁয়াজ রস করে নিতে হবে। এই রসের সঙ্গে পানি বা অন্য কোনো উপকরণ মেশানো যাবে না। এবার পরিষ্কার মাথার ত্বকে তুলো দিয়ে পেঁয়াজের রস লাগাতে হবে। যতক্ষণ না শুকায়, ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মাথার তালু শুকিয়ে এলে ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। একই পদ্ধতিতে আদার রসও ব্যবহার করতে পারেন। এই পদ্ধতি নতুন চুল গজাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
লেখক: চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ