• রোববার ২৮ মে ২০২৩ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১৪ ১৪৩০

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৪

প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোরআন-হাদিসের করণীয় আমল

দৈনিক গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৩  

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৯ জেলায় পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তাই নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ- যথা ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি বা খরা, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, বরকত-শূন্যতা প্রভৃতি মানুষেরই কর্মের ফল। ধর্মীয় ও নৈতিক অবক্ষয়ে পৃথিবী ভারাক্রান্ত। ঝড়, ভারী বর্ষণ, সাইক্লোন, খরা, শৈত্যপ্রবাহ এরই পরিণাম।

পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

> ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদেরই কর্মফল। তিনি অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।’ (সূরা: আশ্-শূরা, আয়াত: ৩০)।

> ‘আর যখন তোমাদের ওপর মুসিবত এলো, যার দ্বিগুণ তোমরা ঘটিয়েছ, তখন তোমরা বললে, এটা কোত্থেকে এলো! (হে নবী) আপনি বলে দিন, এ তো তোমাদের পাপ থেকেই; নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়েই সর্বশক্তিমান।’ (সূরা: আল ইমরান, আয়াত: ১৬৫; মারেফুল কোরআন: ৬৭৫৩)

> ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে ফ্যাসাদ প্রকাশ পায়, যার ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা: রুম, আয়াত: ৪১)

গুনাহ বেশি হলে সবকিছু থেকে বরকত উঠে যায়। ফ্যাসাদ শুরু হয়ে যায়। বিপদ ও বালা-মুসিবত একের পর এক আসতেই থাকে। যুগে যুগে মানুষকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন আজাব-গজব দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন, সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

> ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফল-ফলারির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।

তওবা-ইস্তিগফার আজাব ও গজব প্রতিরোধের শ্রেষ্ঠ উপায়

বিপদের সময় অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা সুন্নাত। যতক্ষণ বান্দা তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহর আজাব আসে না; তাই আমাদের তওবা ও ইস্তিগফার বেশি বেশি করতে হবে এবং নির্দিষ্ট মাসনুন দোয়াগুলো পড়তে হবে।

ঝড়-তুফানের সময় পড়ার দোয়া

‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা, ওয়া লা আলাইনা’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নিন, আমাদের ওপর দেবেন না’। (মুসলিম, তিরমিজি)। প্রচণ্ড ঝড়ের সময় আজান দেওয়া সুন্নাত।

বৃষ্টির সময় পড়ার দোয়া

‘আল্লাহুম্মা সাইয়েবান নাফিআ’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি দিন’। (তিরমিজি)।

বজ্রপাতের সময় পড়ার দোয়া

‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিআযাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিগদাবিকা ওয়া আফিনা কাবলা যালিকা’

অর্থ: হে আল্লাহ! আজাব ও গজব দিয়ে আমাদের ধ্বংস ও নিঃশেষ করে দেবেন না; তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দিন’। (আবু দাউদ)

তাকবির তাহলিল ও আজান

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু; আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করতে শিখিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া বইলে রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে যেতেন, আজান দিতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন। (মিশকাত: ৬৯৬)

সাহাবিদের জীবনে আমরা দেখি, বিপদে-মুসিবতে তারা নামাজে দাঁড়াতেন, ধৈর্য ধারণ করতেন। আমরা যদি নবী করিম (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের মতো মসজিদমুখী হই, গুনাহ পরিত্যাগ করি, তবে প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ থেকে আমরা পরিত্রাণ পাব। (মিশকাত: ৫৩৪৫)

বান্দার গুনাহ যখন বেশি হয়ে যায়, আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। তখন তিনি আজাব-গজব নাজিল করেন। আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সঠিকভাবে দীনের ওপর চলতে হবে। নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা ইত্যাদি ভালো কাজ করতে হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে-

> ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি: ৬০০)

আল্লাহ তাআলা অযথা কাউকে শাস্তি দিতে চান না; বরং মানুষের ওপর যে বিপদ আসে, তা তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেন-

> ‘তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে, তা তোমাদের কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি মাফ করে দেন।’ (সূরা: আশ্-শূরা, আয়াত: ৩০)

> ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। যাতে তিনি তাদের কৃতকর্মের কিছু আস্বাদন করান এবং যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা: রুম, আয়াত: ৪১)

যখন অন্যায়-অনাচার, ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়, অন্যের হক ভূলুণ্ঠিত হতে থাকে, মাপে কম দেওয়া ও চোরাচালানি প্রভৃতির প্রাচুর্য পরিলক্ষিত হয়, তখন দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আসমানি গজব একের পর এক নামতে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নামে। (রুহুল মাআনি: ১১/৭৩; মারেফুল কোরআন: ৬/৭৫৩)

হাদিস শরিফে আছে- ‘যে ব্যক্তি মাপে কম দেবে সে দুর্ভিক্ষ, মৃত্যু-যন্ত্রণা এবং শাসক কর্তৃক জুলুমের শিকার হবে। অন্য হাদিসে আছে, যে জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, সেখানে (ক্রমাগত) অনাবৃষ্টি দেখা দেবে। হজরত আবু সুফিয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনি ইসরাইল বংশ ৭ বছর ধরে দুর্ভিক্ষে নিপতিত ছিল। তারা ক্ষুধার জ্বালায় মৃত প্রাণী ভক্ষণ করেছিল। এরপর তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারল এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিকল্পে পাহাড়ে চলে গেল। সেখানে ক্রমাগত কান্নাকাটি ও আহাজারি শুরু করল। আল্লাহ তাআলা তার নবীর মাধ্যমে তাদের অবহিত করলেন, ‘যতক্ষণ না তোমরা অন্যের প্রাপ্য পরিশোধ করবে, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব না। তোমাদের প্রতি সদয়ও হব না।’ সুতরাং তারা যখন অন্যের হক আদায় করে দিল তখন আসমান থেকে বারিধারা বর্ষণ শুরু হলো। (মাজালিসে আবরার: ৪৫/২৭৪)

ভূমিকম্পের সময় করণীয় সুন্নত আমল

ভূমিকম্পের সময় কিছু আমল করার মধ্য দিয়ে ক্ষতি থেকে বাঁচার সুযোগ রয়েছে। এসব আমল করতে করতে মারা গেলেও ইমানি মউতের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে নাজাত ও জান্নাত পাওয়ার সুযোগ থাকছে। হাদিস শরিফে আছে-

‘যখন কোথাও ভূমিকম্প হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝোড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন মানুষের উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতি দ্রুত তওবা করা, তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা এবং মহান আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশে দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির (স্মরণ) করো, তার কাছে তওবা (ক্ষমা প্রার্থনা) করো।’ (বুখারি ২/৩০; মুসলিম ২/৬২৮)

সুন্নাত অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় আমাদের জন্য আমল হচ্ছে আল্লাহর জিকির, তওবা করা ও আজান দেওয়া। আর আল্লাহর জিকিরের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত বা দোয়া পড়া। দুর্যোগের সময় জিকিরের আরো উপায় হতে পারে দোয়া ও ইস্তিগফার পড়ার পর কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ বা জিকির করা।

তওবার দোয়া

> ‘আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি যাম্বিও ওয়া আতুবু ইলাইহি, লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।’

অর্থ: আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই সব পাপ থেকে এবং আমি তাঁর দিকেই ফিরে আসছি, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গোনাহ থেকে বাঁচার ও নেক কাজ করার কোনোই শক্তি নেই।

> ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহি।’

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক এবং আমি তার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি)।

দৈনিক গাইবান্ধা
দৈনিক গাইবান্ধা