শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২২ নভেম্বর ২০২১

ইসলামের দৃষ্টিতে পতাকার মর্যাদা ও ব্যবহার

ইসলামের দৃষ্টিতে পতাকার মর্যাদা ও ব্যবহার

পতাকা মানে একখণ্ড বস্ত্রবিশেষ, যা কোনো গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠনের, এমনকি বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতীক তথা পরিচায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠনের মর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক। ইসলামের ইতিহাসেও পতাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নজির রয়েছে। পতাকার সম্মানকে সমুন্নত রাখতে ও নিজেদের গৌরবের প্রতীক পতাকাকে ভূলুণ্ঠিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন সাহাবায়ে কেরামের মতো শ্রেষ্ঠ মানুষরা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) খুতবা দিতে গিয়ে বলেন, জায়েদ পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত লাভ করেছেন, অতঃপর জাফর (রা.) পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাতবরণ করেছেন। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত লাভ করেছেন। অতঃপর খালিদ ইবনে অলিদ (রা.) মনোনয়ন ব্যতীতই পতাকা ধারণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে বিজয় দান করেছেন আর বলেন, এ আমার কাছে পছন্দনীয় নয় অথবা বর্ণনাকারী বলেন, তাদের পছন্দনীয় নয় যে তারা দুনিয়ায় আমার কাছে অবস্থান করত। বর্ণনাকারী বলেন, আর তাঁর (এ কথা বলার সময় নবীজির) চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৬৩)

পতাকার সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে সাহাবায়ে কেরামের সেদিনের আত্মত্যাগ কেমন ছিল, তা ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে বিস্তারিত আকারে পাওয়া যায়। মুতার প্রান্তরে মুসলিম বাহিনী পৌঁছার পর হজরত জায়েদ ইবনে হারেসা পতাকা হাতে যুদ্ধ শুরু করেন। তিনি শহীদ হলে পতাকা গ্রহণ করেন হজরত জাফর ইবনে আবু তালেব। যুদ্ধের তীব্রতা ও শত্রুর আক্রমণে তিনি এক হাত হারিয়ে ফেললে অপর হাতে পতাকা ধরে রাখেন। পরে যখন তাঁর দ্বিতীয় হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন তিনি দুই পা দিয়ে পতাকা উঁচু করে রাখেন। শত্রুরা তাঁর পা কেটে ফেললে তিনি মুখ দিয়ে কামড় দিয়ে পতাকা সমুন্নত রাখেন। তাঁর চার হাত-পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তিনি নিজে মাটিতে পড়ে গেছেন; কিন্তু পতাকা মাটিতে পড়তে দেননি। শত্রুর সর্বশেষ আঘাত যখন তাঁর দেহকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলে তখন পরবর্তী কমান্ডার আব্দুল্লাহ পতাকা গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে তৃতীয় কমান্ডার আব্দুল্লাহ শহীদ হয়ে যান। তখন আরেক সাহাবি হজরত সাবেত ইবনে আরকাম নিজে উদ্যোগী হয়ে পতাকা রক্ষায় এগিয়ে আসেন এবং রাসুলের পতাকা উঁচু করে রাখেন। তিনি মুসলিম বাহিনীর উদ্দেশে বলতে থাকেন, তোমরা তাড়াতাড়ি চতুর্থ কমান্ডার মনোনীত করো। উপস্থিত সাহাবিদের পরামর্শে হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) সেনাধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন। আল্লাহ তাআলার রহমতে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর হাতে মুতা প্রান্তরে মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জিত হয়। (ইবনে হিশাম : ২/৩৮০, আর-রাউযুল উনুফ : ৪/১২৬, আল-বিদায়াহ : ৪/২৪৫, আর-রাহীক্ব, তালিক্ব : ১৬৮)

পতাকার গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো অভিযানে যাওয়ার সময় সাহাবায়ে কেরাম আকাঙ্ক্ষা করতেন যে ইসলামের পতাকা ধারণের দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হোক। কেননা পতাকা ধারণের জন্য আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরই নির্বাচন করা হতো। সাহাল ইবনে সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি খায়বারের যুদ্ধের সময় মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দেব, যার হাতে বিজয় অর্জিত হবে। এরপর কাকে পতাকা দেওয়া হবে, সে জন্য সবাই আশা করতে লাগলেন। পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে হয়তো তাকে পতাকা দেওয়া হবে। কিন্তু নবী (সা.) বলেন, আলী কোথায়? তাঁকে জানানো হলো যে তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন তিনি আলীকে ডেকে আনতে বলেন। তাকে ডেকে আনা হলো। রাসুল (সা.) তাঁর মুখের লালা তাঁর উভয় চোখে লাগিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে তাঁর কোনো অসুখই ছিল না। তখন আলী (রা.) বলেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মতো হয়ে যায়। নবী (সা.) বলেন, তুমি সোজা এগিয়ে যাও। তুমি তাদের প্রান্তরে উপস্থিত হলে প্রথমে তাদের ইসলামের দিকে আহবান করো এবং তাদের করণীয় সম্বন্ধে তাদের অবহিত করো। আল্লাহর কসম, যদি একটি লোকও তোমার দ্বারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা তোমার জন্য লাল রঙের উটের চেয়েও শ্রেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৪৩)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সালামা ইবনে আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আলী (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে পেছনে থেকে যান, (কারণ) তাঁর চোখে অসুখ হয়েছিল। তখন তিনি বলেন, আমি কি আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে পিছিয়ে থাকব? অতঃপর আলী (রা.) বেরিয়ে পড়লেন এবং নবী (সা.)-এর সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। যখন সে রাত এলো, যে রাত শেষে সকালে আলী (রা.) খায়বার জয় করেছিলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দেব কিংবা (বলেন) আগামীকাল এমন এক ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করবে, যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ভালোবাসেন। অথবা তিনি বলেছিলেন, যে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসে। আল্লাহ তাআলা তারই হাতে খায়বার বিজয় দান করবেন। হঠাৎ আমরা দেখতে পেলাম যে আলী (রা.) এসে হাজির, অথচ আমরা তাঁর আগমন আশা করিনি। তারা বলেন, এই যে আলী (রা.) চলে এসেছেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁকে পতাকা প্রদান করলেন। আর আল্লাহ তাআলা তাঁরই হাতে বিজয় দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ২৯৭৫)

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু