শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ০৪:৫১, ২৫ মে ২০২৩

শ্রম বিক্রির হাট; অপেক্ষা নিজেকে বিক্রি করার!

শ্রম বিক্রির হাট; অপেক্ষা নিজেকে বিক্রি করার!

গাইবান্ধা জেলার তিস্তা বাজার মোড়ের হাট। কেউ আসছেন সাইকেলে আবার কেউ হেঁটে। তাদের কারও কাছে কোঁদাল, পাসুন বা নিড়ানি। কারও কাছে ডালি ও কাস্তে। এই মোড়ে আলাদা আলাদা দলবেধে বসে থাকা মানুষগুলো অপেক্ষা করছে ক্রেতা বা খরিদ্দারের। পণ্য তারা নিজেরাই।

খরিদ্দার এসে পছন্দ মতো লোক, সংখ্যা ও দাম বললে নির্দিষ্ট একটা কাজ বা পুরো দিনের জন্য নিজেদের বিক্রি করে দেন। এভাবেই বিক্রি হয়ে চলে তাদের পরিবারের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা। সম্প্রতি এমনি এক চিত্র দেখা গেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা বাজার মোড়ে। এখানে প্রতিদিন বসে শ্রম কেনা-বেচার হাট। এ হাটে ভোরবেলা থেকে মানুষ আসা শুরু করে। শ্রমজীবীরা অপেক্ষায় থাকে নিজেকে বিক্রির জন্য। ক্রেতা এসে পছন্দ ও দরদাম করে নিয়ে যায় তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, নজিম উদ্দিন, কোরবান আলী ও দুলাল মিয়া। এছাড়া আরও অনেকের হাতে নানা উপকরণ। তারা দলবেঁধে শ্রম বিক্রির জন্য বসে আছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। আর ক্রেতা এসে তাদের শ্রমের দরদাম করছেন। দাম ঠিকঠাক হলেই গৃহস্থালী কিংবা কৃষি কাজে নিয়োজিত হন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিদিন ভোরবেলা এই স্থানে শ্রমজীবীদের এ হাট বসে। চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত। কৃষি ও ভবন নির্মাণ শ্রমিকেরা আসেন এখানে। দিন চুক্তিতে তাদের কিনতে আসেন বেলকা, তারাপুর, হরিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, দহবন্দসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থরা।

দরদাম ঠিক হওয়া মাত্র শ্রমিকেরা রওনা হন মালিকের কাজে। দিন শেষে মজুরি বুঝে পেলে এখান দিয়েই ফেরেন বাড়ি। সঙ্গে কিছু টাকা এবং সদাই। এরপর আরও একটি ভোরের অপেক্ষা।

শ্রমিক কোরবান আলী ও দুলাল মিয়া বলেন, সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় খরচের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে স্ত্রী। কী কী বাজার করতে হবে, তাও বলে দিয়েছে। এ জন্য এই তিস্তা বাজার মোড়ে তার বিক্রি হওয়াটা জরুরি।

আরেক শ্রমিক নজিম উদ্দিনের হাতে কোনো টাকা নেই। তিস্তা বাজার মোড়ে নিজেকে বিক্রি করতেই হবে। না পারলে পুরো পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হবে। তা ছাড়া, আছে ছেলের পড়াশোনার খরচ। সে কারণে এখানে নিজেকে বিক্রি করতে পারাটাই জিতে যাওয়া।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শ্রমজীবী সংগঠনের সভাপতি আকবর আলী বলেন, এ হাটে কাজের ধরণ অনুসারে প্রতিদিনের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সঙ্গে দুপুরের খাবার। বৃষ্টি বাদলের দিনে এই অসহায় মানুষগুলোর বসার কোনো জায়গা নেই। বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয়। তিস্তাবাজার মোড়ে এই শ্রমিকদের বসার জন্য একটি জায়গার আবেদন করছি বলে জানান।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ