পুরুষের উত্থান ত্রুটি কেন হয়, প্রতিকার কী
![পুরুষের উত্থান ত্রুটি কেন হয়, প্রতিকার কী পুরুষের উত্থান ত্রুটি কেন হয়, প্রতিকার কী](https://www.dainikgaibandha.com/media/imgAll/2021 July/Screenshot_56-2208140729.jpg)
ইরেকটাইল ডিজফাংশন বা পুরুষের উত্থান ত্রুটিকে সহজ ভাষায় বলা হয় যৌন অক্ষমতা বা দুর্বলতা। পুরুষদের জন্য খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয় এটি। যৌনমিলনের পূর্বশর্ত পুরুষাঙ্গের যথাযথ উত্থান। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, মিলনের পূর্বে পুরুষের লিঙ্গের পর্যাপ্ত উত্থান ঘটছে না কিংবা ঘটলেও বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। ফলে পরিপূর্ণ ও সফল যৌনমিলনও সম্ভব হচ্ছে না।
এ ধরনের সমস্যায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন দম্পতি। আবার সংকোচ ও দ্বিধার কারণে চিকিৎসকের কাছে যান না, বাজারচলতি চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে কবিরাজি হারবাল বা টোটকা চিকিৎসা নিয়ে আরও জটিলতায় পড়েন। তাই সংকোচ ভেঙে এ সমস্যা নিয়ে সঠিক পরামর্শ নিতে হবে।
প্রথমেই জানা যাক, কেন হয় ইরেকটাইল ডিজফাংশন। পুরুষের লিঙ্গের উত্থান মূলত যৌন উদ্দীপনার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর পুরুষের যৌন উদ্দীপনা খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া, যেটির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে তাদের মস্তিষ্ক, হরমোন, আবেগ, স্নায়ু, পেশি ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের। এগুলোর যেকোনো একটির সমস্যা বা অস্বাভাবিকতার কারণে ইরেকটাইল ডিজফাংশন হয়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া মানসিক চাপ, বিষণ্নতা বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার ফলেও ইরেকটাইল ডিজফাংশন হতে পারে। ইরেকটাইল ডিজফাংশনের পেছনে শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের কারণই প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন কোনো একটি অসুস্থার কারণে সাময়িকভাবে যৌন উদ্দীপনার মাত্রা কমে যেতেই পারে। কিন্তু এ নিয়ে আপনি এত বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লেন বা মানসিক চাপে ভুগতে শুরু করলেন যে পরবর্তী সময়ে সমস্যা আরও বাড়তে শুরু করল। এভাবেই শারীরিক সমস্যার সঙ্গে মানসিক সমস্যা যোগ হয়ে ইরেকটাইল ডিজফাংশনের মাত্রা বাড়তে থাকে।
কখন বুঝবেন সমস্যা দেখা দিয়েছে
যদি আপনি নিয়মিত নিম্নোক্ত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে থাকেন—
-
লিঙ্গের যথাযথ উত্থান ঘটাতে না পারা।
-
লিঙ্গের উত্থান যথেষ্ট সময় ধরে রাখতে না পারা।
-
যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পাওয়া কিংবা কখনোই আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত না হওয়া।
-
দ্রুত বীর্যপাত হওয়া।
-
বিলম্বে বীর্যপাত হওয়া।
-
অ্যানোরগাজমিয়া দেখা দেওয়া অর্থাৎ পর্যাপ্ত উত্তেজনা সত্ত্বেও অর্গাজম লাভে ব্যর্থ হওয়া।
এ ছাড়া মনস্তাত্ত্বিক চাপ-অবসাদ, দুশ্চিন্তা ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা, মানসিক চাপ, অন্যমনস্কতা, সম্পর্কের অবনতি বা অধারাবাহিকতার কারণে উদ্ভূত চাপ, আত্মবিশ্বাসহীনতা ও ভীতি।
লিঙ্গের উত্থানের পেছনে মস্তিষ্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্ক থেকে পাওয়া সংকেতের মাধ্যমেই একজন পুরুষ তার দেহে যৌন উদ্দীপনা অনুভব করতে থাকেন, তার মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন আসতে থাকে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে তার লিঙ্গের উত্থান ঘটে। কিন্তু মস্তিষ্ক যদি স্বাভাবিক না থাকে, এই প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়ে। এ কারণে সৃষ্টি হয় ইরেকটাইল ডিজফাংশন। এ ছাড়া পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পুরুষাঙ্গে রক্ত চলাচল ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রমও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। একটি সফল যৌনমিলনের জন্য এই সব কটি সুস্থ আর স্বাভাবিকভাবে হতে হবে।
কী করবেন
কোনো ব্যক্তি যদি ইরেকটাইল ডিজফাংশনের শিকার হন, তবে হতাশা বা সংকোচে না ভুগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক সঠিক কারণটি খুঁজে বের করে সঠিক সমাধান বাতলে দিতে পারবেন। অনেক সময় স্রেফ মানসিক চাপমুক্ত হলে বা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলেই উন্নতি সম্ভব। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এসব রোগে স্নায়ু ও রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মিলনে সমস্যা হয়। ধূমপান পুরোপুরি বর্জন করুন, অ্যালকোহল গ্রহণের মাত্রা সীমিত করুন এবং অবৈধ নেশা দ্রব্য ব্যবহার করবেন না। ওজন ঠিক রাখুন ও নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ করুন। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো ও বিশ্রাম নেওয়া, মানসিক চাপ, অবসাদ, দুশ্চিন্তা বা অন্যান্য সমস্যাকে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রেই ইরেকটাইল ডিজফাংশন কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা নয়, বরং সাময়িক একটি জটিলতামাত্র। এই সমস্যার চিকিৎসায় অনুমোদিত ওষুধ বা ইনজেকশন ও সার্জারি রয়েছে, তবে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। টোটকা বা অপচিকিৎসা নেবেন না।
দৈনিক গাইবান্ধা