ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রেটিনার রক্তনালির পরিবর্তন ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামে পরিচিত। ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ এটি। অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে রেটিনার রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। এর ফলে রেটিনার রক্তনালিতে কিছু পরিবর্তন আসে। অনেক সময় রেটিনার রক্তনালি ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং এর জন্য অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া নতুন রক্তনালি তৈরি হওয়ার জন্য চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
ডায়াবেটিসের কারণে চোখে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। চোখের জটিল রোগ গ্লুকোমা হতে পারে এবং চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
কাদের ঝুঁকি বেশি
- যাঁদের অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিস আছে।
- ডায়াবেটিস যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত।
- ডায়াবেটিসের সঙ্গে যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে।
- যাঁরা ধূমপান করেন।
- রক্তে যাঁদের কোলেস্টেরল বেশি।
- যাঁদের কিডনি রোগ আছে।
- গর্ভাবস্থায় যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন
প্রতিরোধে যা করবেন
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- ধূমপান পরিহার করুন
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান
- চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন
চিকিৎসা কী
- নতুন রক্তনালি রোধ করতে চোখে ইনজেকশন দিতে হতে পারে।
- লেজার থেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
- রক্তক্ষরণ হলে রেটিনার অপারেশন করাতে হবে।
একসঙ্গে দুই চোখে সমস্যা
ডায়াবেটিস পুরো শরীরের একটিই রোগ। তাই ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি একসঙ্গে দুই চোখেই হতে পারে। প্রেশারের কারণে যে সমস্যা হয়, সেটি একই সঙ্গে দুই চোখে হওয়া স্বাভাবিক। তবে কখনো কখনো এক চোখেও হতে পারে।
লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায় রোগীদের কোনো লক্ষণ প্রকাশ না-ও পেতে পারে। ধীরে ধীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন:
- চোখের সামনে ভাসমান কিছু দেখা
- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
- চোখের রক্তক্ষরণের কারণে হঠাৎ এক চোখ দৃষ্টিহীন হয়ে যাওয়া
- চোখে ব্যথা অনুভব করা
যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের উচিত নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের পরামর্শে চলা। কারণ এই রোগের ফলে শরীরের যেকোনো অংশে, যেমন হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি সব জায়গায় সমস্যা হতে পারে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা মানে শুধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা নয়। এর কারণে যে সমস্যাগুলো হবে, সবগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি প্রতিরোধে ডায়াবেটিসের চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা উচিত।
লেখক: ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ
দৈনিক গাইবান্ধা