ইসলামে সুশাসন ও ন্যায়পরায়ণতার গুরুত্ব

ইসলামি বিধানের উদ্দেশ্য হলো মানবকল্যাণ তথা জীবন সুরক্ষা, সম্পদ সুরক্ষা, জ্ঞান সুরক্ষা, বংশপরম্পরার পবিত্রতা সুরক্ষা এবং এসবের মাধ্যমে ধর্ম সুরক্ষা। হাশরের দিন যারা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআরার আরশের ছায়ায় স্থান পাবেন, তাদের মধ্যে প্রথম হলেন ‘ন্যায়পরায়ণ শাসক’।
আল্লাহ তাআলার একটি নাম হলো ‘আদল’ অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ। আদালত অর্থ ন্যায়ের স্থান। মানবজীবনে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অপরিসীম।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার পরিচয় দেওয়া হয়েছে, ‘তিনি বিচার দিবসের মালিক’। (সূরা: ফাতিহা, আয়াত: ৩) যা আমরা প্রতিদিন বহুবার পাঠ করে থাকি। আল্লাহর একটি নাম ‘হাকিম’ বা ন্যায়বিচারক। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক নন’। (সূরা: ত্বিন, আয়াত: ৮) ‘তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক’। (সূরা: ইউসুফ, আয়াত: ৮০)
সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও নিরাপত্তা বিধানে ন্যায়বিচার ও সুশাসন অপরিহার্য। মানবিকতা, ন্যায়নীতি ও সুবিচার ইসলামের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান এবং ‘আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনবিধান’। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৯)
ইনসাফ অর্থ সমান দুই ভাগ করা, বেশি বা কম না করা। এ জন্য বিচারককে বলা হয় ‘মুনসিফ’। সুবিচার প্রাপ্তি সব নাগরিকের অধিকার ও ন্যায়বিচার আল্লাহর হুকুম ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, ইহা তাকওয়ার নিকটতর’। (সূরা: ৫ মায়িদা, আয়াত: ৮)
ন্যায়ের বিধান সর্বকালের ও সব সমাজের জন্য কাম্য। সব আসমানি কিতাবে এই নির্দেশ রয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম; তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো; নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইহুদিদিগকে তদনুসারে বিধান দিত, আরো বিধান দিত রব্বানিগণ ও বিদ্বানগণ, কারণ, তাদের আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল তার সাক্ষী।
সুতরাং তোমরা নির্বোধ লোকদের ভয় কোরো না, আর শুধু আমাকেই ভয় করো। আমার আয়াতের বিনিময়ে সামান্য সম্পদ ক্রয় কোরো না। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তবে তারাই‘কাফির’। আমি তাদের জন্য উহাতে বিধান দিয়ে ছিলাম যে প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম। অতঃপর কেহ তা ক্ষমা করলে উহাতে তারই পাপ মোচন হবে। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তবে তারাই‘জালিম’। ইঞ্জিল অনুসারীগণ যেন আল্লাহ উহাতে যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তবে তারাই ‘ফাসিক’। (সূরা: ৫ মায়িদা, আয়াত: ৪৪-৪৭)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সাত ধরনের ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তার ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়বান শাসক, আল্লাহর ইবাদতে আনন্দ পাওয়া যুবক, ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে যুক্ত থেকে বের হওয়ার পর ফিরে আসা পর্যন্ত, এমন ২ ব্যক্তি যারা আল্লাহর জন্য একে অন্যকে মহব্বত করে, এরই ওপর একত্র হয় এবং এরই ওপর পৃথক হয়, এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী রমণী (অন্যায়) আহ্বান করলেও সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, এমন লোক যারা এমন গোপনে দান করে, তার ডান হাত কী দান করল তা তার বাঁ হাত জানতে পারে না, আর ওই ব্যক্তি যে নির্জন–নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণ করে তার দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়’। (মুত্তাফাকুন আলাইহি-বুখারি: ৬৬০, মুসলিম: ১০৩১, তিরমিজি: ২৩৯১)
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ