তাওবা ও ইস্তেগফারের মাস রমজান
রমজানুল মুবারককে সাইয়্যেদুশ শুহুর অর্থাৎ সকল মাসের সরদারও বলা হয়েছে। এ মাস অগনিত বরকতের মাস। চৌদ্দশত বছর পূর্ব থেকে কোটি কোটি পুণ্যাত্মা এ মাস থেকে বরকত মণ্ডতি হয়ে এসেছে আর বর্তমানেও কোটি কোটি পবিত্রাত্মা এ মাস থেকে লাভবান হচ্ছে। এ দিনগুলোতে নিষ্ঠাবান রোজাদারদের দোয়া কবুলিয়্যতের মর্যাদা লাভ করে।
রমজান যেমন আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে রোজাদারদের আল্লাহ নিকটবর্তী করে, তেমনি পরিশুদ্ধির মাধ্যমে তাওবার দ্বারা পবিত্রতা ও শুদ্ধতায় উপনীত করে। মাহে রমজানের পবিত্র-নিষ্কলুষ পরিবেশে ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক আবহে খোদাপ্রেম, আত্মশুদ্ধি, আমল, আখলাক, কোরআনচর্চা, হাদিসচর্চা, দান, সাদাকা ও তাওবার মতো মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রেরণা ও প্রণোদনা সৃষ্টি হয়।
পবিত্র রমজানের মুবারক পরিবেশে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের একটি অম্লান বাণী বিপন্ন, অসহায় ও উভ্রান্ত মানুষের হৃদয়ে আশাবাদের সুতীব্র দোলা দেয়। মুক্তি ও কল্যাণের আশা জাগ্রতকারী পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘হে নবী, আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছো, তারা আল্লাহর তায়ালার রহমত থেকে কখনোই নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা যুমার: আয়াত ৫৩)।
পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার অফুরন্ত ভাণ্ডারের দরজা খুলে যায়। রমজান মাসে দিনে রোজা আর রাতে নামাজের মাধ্যমে মুসলমানগণ রহমত ও ক্ষমার সুযোগ লাভ করেন।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ রাতের বেলা তার হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের অপরাধীরা তাওবা করতে পারে। আর তিনি অনুরূপ দিনে তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যাতে অপরাধীগণ তাওবা করতে পারে। এমন চলতে থাকে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭৫৯)।
মহান আল্লাহ তায়ালার ক্ষমাশীলতার সীমা-পরিসীমা নেই। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ক্ষমার মহাসমুদ্রের কথা বার বার বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার অনুগত বান্দার লক্ষণ হলো, তারা কখনোই গোনাহের উপর অটল হয়ে বসে থাকে না। ভুল করলেই ভুল বা অপরাধের স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চায়। অপরাধের জন্য লজ্জিত হয়। আল্লাহ তায়ালা অনুতপ্ত, লজ্জিত, তাওবাকারীকে ভালোবাসেন ও ক্ষমা করেন। একটি হাদিসের শিক্ষাও এই প্রসঙ্গে মনে রাখা বিশেষভাবে জরুরি, ‘সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান মাস পেলো, অথচ নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারলো না’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪৫)।
পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে:, ‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা), যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের উপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, সঙ্গে সঙ্গেই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কে আছে যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? তদুপরি এরা জেনে বুঝে এদের গোনাহের উপর অটল হয়ে বসে থাকে না।’ (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৩৫)
ফলে প্রকাশ্যে বা গোপনে, জেনে বা না-জেনে নানা ধরনের ছোট ও বড় গোনাহ বা অপরাধে জর্জরিত মানুষের উচিত মহান সৃষ্টিকর্তা ও মালিক আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা করে নেয়া।
দৈনিক গাইবান্ধা