শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:৫১, ১৯ আগস্ট ২০২১

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণ যেমন হওয়া জরুরি

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণ যেমন হওয়া জরুরি

স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। স্ত্রীদের প্রতি উত্তম আচরণ ও সার্বিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক অনুকরণীয় আদর্শ। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি ঘরে (স্ত্রীদের সহযোগিতায়) কাজ করতেন? উত্তরে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের মানুষদের সেবায় নানা কাজে অংশ নিতেন। নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন। (বুখারি)

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে তাঁর কাপড় সেলাই করতেন; নিজের জুতা মেরামত করতেন এবং সাংসারিক যাবতীয় কাজে অংশ গ্রহণ করতেন।’ (ফতহুল বারি)

কুরআনুল কারিমে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পর এক বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোনো পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক। (সুরা ইমরান : আয়াত ১৯৫)

সুতরাং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর সদাচরণ যেমন জরুরি তেমনি স্ত্রীর প্রতিও স্বামীর সদাচরণ এবং সহযোগিতা আরও বেশি জরুরি। পারিবারিক জীবনে সুখ-শান্তি বজায় রাখতে স্বামী যেমন তাঁর স্ত্রীকে সম্মান ও মর্যাদা দেবে ঠিক স্ত্রীও স্বামীকে তার কাজ ও অবস্থানে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেবে। তবে সংসার জীবনে বিরাজ করবে জান্নাতি পরিবেশ।

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর করণীয়
মনে রাখতে হবে, একজন স্বামীর সবচেয়ে বড় গুণ হলো স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ করা; স্ত্রীকে তার কাজে সহযোগিতা ও সম্মান করা। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী করণীয়গুলো এমন হওয়া উচিত-
১. স্ত্রীর সঙ্গ সবসময় ভালো আচরণ করা।
২. স্ত্রীর কোনো কথা বা কাজে কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করা।
৩. স্ত্রী উচ্ছৃঙ্খল, বেপর্দা চলাফেরা করতে থাকলে বার বার তাকে নম্র ভাষায় বোঝানো।

৪. সামান্য বিষয় নিয়ে অজুহাত পেলেই স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ না করা; কথায় কথায় ধমক না দেয়া এবং রাগ না করা।
৫. স্ত্রীর আত্মমর্যাদায় আঘাত আসে এমন বিষয়ে কথা না বলা বরং সম্পর্কিত কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হলে সংযত থাকা।

৬. সন্দেহবশতঃ অকারণে স্ত্রীর প্রতি কুধারণা না করা।
৭. স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন ও খোঁজ-খবর রাখাসহ যথাযথ আদর-যত্নে উদাসীন না থাকা।
৮. সামর্থ্যানুযায়ী স্ত্রীকে যথাযথা খোরপোষ দেওয়া। আবার খোরপোষের নামে অযথা অপচয় যেন না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা।

৯. স্ত্রীকে নামাজ এবং দ্বীনের আহকাম মেনে চলার ব্যাপারে উৎসাহিত করা।
১০. স্ত্রীকে পবিত্রতা ও দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা ও নিয়ম-কানুনগুলো ভালোভাবে শেখানোর ব্যবস্থা করা। ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা।
১১. যদি কারো একাধিক স্ত্রী থাকে তবে সবার মাঝে সমতা রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।

১২. স্ত্রীর চাহিদানুযায়ী তাদের সাঙ্গে মেলামেশা করা। তাদের চাহিদার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। এমনকি তাদের কল্যাণকর মতামতের ব্যাপারেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
১৩. স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া (মেলামেশায়) আজল না করা। অর্থাৎ মেলামেশার সময় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাভাবিক স্থান ত্যাগ না করা।
১৪. একান্ত নিরুপায় না হলে স্ত্রীকে তালাক না দেওয়া। কেননা ইসলামে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ হলো তালাক। যদি তালাক দিতেই হয় তবে ইসলামি শরিয়তের আলোকে তালাক প্রদান করা।

১৫. স্ত্রীর স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করা।
১৬. স্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝে স্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া। স্বামী যদি একান্তই সময় না পায় তবে অন্তত স্ত্রীকে তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়া।
১৭. কোনোভাবেই স্ত্রীর ব্যাপারে কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশার বর্ণনা বা চিত্র অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করা।

১৮. স্ত্রীর অধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরও যদি স্ত্রী বেপরোয়া হয় তবে প্রয়োজনে স্ত্রীকে প্রথমে বারবার সতর্ক করা। অতঃপর ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে হালকা শাসন করা। তবে ইসলামি শরীয়ত যতটুকু অনুমতি দিয়েছে তার চেয়ে বেশি শাসন না করা। সর্বোপরি সমযোতার মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া।

সুখ-শান্তিময় পারিবারিক দাম্পত্য জীবনের জন্য সব স্বামীর উচিত, তাদের স্ত্রীদের কাজের মৌখিক স্বীকৃতি ও প্রশংসার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে সামান্য সময়ের জন্য হলেও স্ত্রীর সহযোগিতা করা। তবেই স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। পারিবারিক জীবনে অনিন্দ্য সুন্দর শান্তিপূর্ণ সংসারের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব স্বামীকে স্ত্রী প্রতি সদাচরণ ও সহযোগিতা ও সম্মান করার তাওফিক দান করুন। শান্তিপূর্ণ পরিবার গঠনে স্ত্রীর প্রতি সার্বিক সমর্থন, সদাচরণ ও সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ