শনিবার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ || ২২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ০৫:২৭, ৫ জুলাই ২০১৯

জ্বালানি তেলের তীব্র সংকটে ভোগান্তি চরমে

জ্বালানি তেলের তীব্র সংকটে ভোগান্তি চরমে

কুড়িগ্রামের চিলমারীর ভাসমান ডিপোতে জ্বালানি শূন্য রয়েছে দীর্ঘ দেড় মাসেরও অধিক সময়। ফলে ডিপো’র ওপর জ্বালানি নির্ভরশীল রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে ডিজেল সংকট। 

এ সুযোগে চড়া দামে ডিজেল বিক্রি করছে খুচরা দোকানদাররা। জ্বালানি নির্ভর সব কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। চিলমারী ভাসমান ডিপোতে তেল না থাকার সুযোগে স্থানীয় হাটবাজারে খুচরা তেল বিক্রেতারা ৬৫ টাকার প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি করছে ৭০ টাকায়। 

নাম প্রকাশে অনেক খুচরা বিক্রেতা জানান, চিলমারী ভাসমান ডিপোতে তেল নেই। এ অজুহাতে এখানকার এজেন্সি ও পাইকারি তেল বিক্রেতারা আমাদের কাছে তেলের দাম বেশি নিচ্ছেন। আমরা বেশি দামে তেল কিনে তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করছি। কারণ আমাদের তো ব্যবসায় লস করা যাবেনা। চিলমারী ভাসমান ডিপোতে তেল আসলে আমরা খুচরায় কম দামে বিক্রি করতে পারবো। ব্যবসায়ীরা চিলমারী ভাসমান তেল ডিপোতে তেল সরবরাহের জন্য দাবি জানান।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন’র (বিপিসি) অধীনে চিলমারী ভাসমান ডিপোতে যমুনা ও মেঘনা ওয়েল কোম্পানি তেল বিক্রি করে। এ ডিপো ওই তিন উপজেলা ছাড়াও জামাল জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিশাল এলাকার ডিজেলের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু গত ১২ মে থেকে যমুনা ওয়েল কোম্পানির জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর মেঘনা ওয়েল কোম্পানিতেও ডিজেল শূন্য হয়ে পড়ে। জ্বালানি শূন্য হয়ে যাওয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও ওই দুই কোম্পানি চিলমারী ভাসমান ডিপোতে জ্বালানি সরবরাহ করছে না। 

কোন কারণে জ্বালানি শূন্য হয়ে আছে এর সঠিক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি ডিপো ইনচার্জদের কাছ থেকে। কবে নাগাদ তেল আসবে সেটাও বলতে পারছেন না তারা। এ অবস্থায় এখানকার শতশত জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।

রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী উপজেলার জ্বালানি ডিলাররা অভিযোগ করেন যমুনা ও মেঘনা ওয়েল কোম্পানির ডিপো ইনচার্জদের অবহেলা আর গাফিলতির কারণে চিলমারী ভাসমান ডিপোতে জ্বালানি শূন্যের ঘটনা ঘটেছে। এখন নদীতে পানি রয়েছে। জ্বালানি ভর্তি জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা নেই। তারপরও ডিপো ইনচার্জ জ্বালানি আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
 
চিলমারী ডিপোতে তেল না থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ডিজেল আনতে হচ্ছে পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ি থেকে। এতে তেল আনার খরচের টাকা অনেকটা কৃষকের ওপর তুলছে ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, চিলমারী ভাসমান ডিপোতে দেড় মাস ধরে তেল শূন্যতা একটি বিশাল সমস্যা। এই শূন্যতায় আমরা স্থানীয়রাসহ পাশ্ববর্তী উজেলা রাজবিপুর, চিলমারী ও জামারপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাবাসী ক্ষতির মধ্যে পড়েছি। এখান থেকে আমরা সরকারি সাশ্রয়-মূল্যে তেল কিনে জ্বালানি চালিত মেশিনে সেচসহ চাষাবাদ করি। ভাসমান ডিপোতে তেল না থাকায় আমাদের বাড়তি মূল্যে তেল কিনতে হচ্ছে। তিনি চিলমারী ভাসমান ডিপোতে তেল সরবরাহের জোড় দাবি জানান।

রাজীবপুর উপজেলার জ্বালানি পরিবেশক তৈয়ব আলী জানান, চিলমারীতে ডিজেল না থাকার কারণে আমাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা খরচ করে পাবর্তীপুর ও সিরাগঞ্জের বাগাবাড়ি থেকে ডিজেল সংগ্রহ করতে হচ্ছে আমাদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক। তিনি চিলমারী ভাসমান ডিপোতে দ্রুত সময়ে তের সরবরাহ করে এর সংকট কাটিয়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

রৌমারীর উপজেলার জ্বালানি পরিবেশক প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, তারা চিলমারী ডিপো থেকে তেল কিনলে নৌ-পথে সহজেই তেল পরিবহন করা যায়। চিলমারী ডিপোতে তেল না থাকলে আমাদের পরিবহন খরচ অনেক বেশি গুণতে হয়। অতিরিক্ত পরিবহন খরচের কারণে লিটারে এক টাকা করে বাড়তি দামে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে তেল বিক্রি করতে হয়।

চিলমারী ভাসমান ডিপোর যমুনা কোম্পানির ডিপো ইনচার্জ (ডিএস) তফাজ্জল হক জানান, আমি তেলের জন্য কোম্পানিতে বার বার আবেদন করছি। কিন্তু চট্রগ্রাম থেকে তেল সরবরাহ করতে বিলম্ব হওয়ায় চিলমারী ভাসমান ডিপোতে তারা তেল আনা যাচ্ছে না।

মেঘনা অয়েল কোম্পানি ডিপো ইনচার্জ (ডিএস) আবু সাঈদ জানান, চিলমারী ভাসমান ডিপোতে তেল শূন্যতার বিষয়ে তাদের কোনো অবহেলা বা গাফিলতি নেই। তারা স্ব-স্ব কোম্পানিতে চিলমারী ভাসমান ডিপোতে তেল সরবারাহে আবেদন করেছেন। বরাদ্দ আসলেই এখানকার তেলের সংকট কেটে যাবে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ