শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১১ মার্চ ২০২৩

নেপিয়ার ঘাস চাষ করে কোটিপতি পলাশবাড়ির আব্দুল গফুর শেখ

নেপিয়ার ঘাস চাষ করে কোটিপতি পলাশবাড়ির আব্দুল গফুর শেখ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আব্দুল গফুরের ধারণাই ছিল না ঘাস চাষ তার জীবনকে বদলে দেবে। উন্নত জাতের ঘাসের চাহিদা দেখে ২০০৭ সালে স্থানীয় এক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের ৫ শতক জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ শুরু করেন তিনি। ভালো ফলন হওয়ায় তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ঘাষের চাষ শুরু করেন।

এক যুগের ব্যবধানে কোটিপতি হয়েছেন এক সময়ের বর্গাচাষী আব্দুল গফুর। ঘাস চাষে পাওয়া লাভ দিয়ে আব্দুল গফুর শেখ গড়ে তুলেছেন মাঝারি আকারের একটি গরুর খামার। কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১৭ সালে কৃষি উন্নয়নে অবদানের জন্য আব্দুল গফুর রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এই এলাকার অনেকেই এখন যুক্ত হয়েছেন ঘাস চাষে।

আব্দুল গফুর শেখ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করেই প্রতিদিন আমার এখন দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়। আশপাশে খামার থাকায় আগে থেকেই ভালো ঘাসের চাহিদা রয়েছে।"

পলাশবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু জানান, পলাশবাড়ী উপজেলার সুলতানপুর, বাড়ইপাড়া, কিশোরগাড়ী, প্রজাপাড়া, বড় শিমুলতলা, দীঘলকান্দি, কাশিয়াবাড়ীসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩শ একর জমি জুড়ে চাষ হচ্ছে নেপিয়ার ঘাসের।

শুধু গাইবান্ধাই নয়, সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেপিয়ার, পাকচং, রেড পাকচং, পারা ও জাম্বু নামের বিভিন্ন জাতের ঘাসের চাষ হচ্ছে।

বিভিন্ন দেশ থেকে ঘাস নিয়ে এসে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) গবেষণা করে স্থানীয়ভাবে উন্নত জাত উদ্ভাবন করে এবং সেটি মাঠে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস)। 

বিএলআরআই এর তথ্য বলছে, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ভারত থেকে নেপিয়ার ঘাস নিয়ে আসা হয়। পরে সেটি স্থানীয়ভাবে চাষাবাদের উপযোগী করে প্রথম দেয়া হয় মিল্ক ভিটাকে। মিল্ক ভিটা সারাদেশে তাদের জমিগুলোতে এই ঘাসের চাষ শুরু করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে ঘাসের চাষ ছড়াতে থাকে। 

বিএলআরআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার টিবিএস-কে বলেন, "বিএলআরআই গবেষণার মাধ্যমে জাত উদ্ভাবন করে তা কৃষকদের মাঝে দিচ্ছে। সারাদেশে উন্নত জাতের ঘাস চাষের পেছনে বিএলআরআইয়ের গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।"

বিএলআরআই ও ডিএলএস সূত্রে জানা গেছে, দেশে গরুর খামার করে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ধীরে ধীরে চাষের জমি কমে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে ঘাসের উৎপাদনও অনেক কমে গেছে। এই প্রেক্ষাপটেই বাজার তৈরি হয়েছে, বাণিজ্যিকভাবে ঘাসের চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়ছে।

তারা জানান, ঘাস চাষের পাশাপাশি এর প্রক্রিয়াজাতজকরণেরও কাজও করছে অনেকে। এখন পর্যন্ত এ কাজের জন্য ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। 

তবে সারাদেশে কি পরিমাণ জমিতে, কতটুকু ঘাস চাষ হচ্ছে এবং কতটুকু প্রসেসিং হচ্ছে তার মোট হিসেব ডিএলএস এর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার অনেক কৃষক বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রজাতির ঘাস চাষ করেন। 

 স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়  সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রথম ৫ মাসে ১০৫ জন চাষী উপজেলার ১০ একর জমিতে নেপিয়ার, পাকচং, রেড পাকচং, পারা ও জাম্বু নামের উন্নত জাতের ঘাস চাষ করেন। তবে বেসরকারি হিসাবে চাষের পরিমাণ আরও বেশি, কারণ অনেক খামারী ব্যক্তি উদ্যোগে ঘাস চাষ করেন।

উন্নত জাতের ঘাস উৎপাদনে জড়িত কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমির ঘাস চাষে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং বিক্রি করে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা আয় পাওয়া যায়। প্রতি আটি ঘাস ১০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। প্রতি ছয় সপ্তাহ পর পর ঘাস কাটার উপযোগী হয়।

ফকিরহাটে বানিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বড় ঘাস চাষের খেত রয়েছে রাজপাট এলাকার তানজির হাসানের। প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমিতে জাম্বু, লাল পাকচং, পাকচং-১, নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। 

তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদিত ঘাস বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকেটজাত করে গুদামে সংরক্ষণ করেন। বছরের জুলাই, আগস্ট মাসে তিনি এ ঘাস তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি করেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পুস্পেন কুমার শিকদার বলেন, "চারণ ভূমি কমে যাওয়ায় খামারীদের যে পরিমাণ ঘাসের প্রয়োজন তা পূরণে উন্নত জাতের ঘাস চাষের বিকল্প নাই। এ বাস্তবতায় আমরা কৃষকদের বিনামূল্যে উন্নত জাতের ঘাসের কাটিং সরবরাহ করি।"

"ঘাসের বাণিজ্যিক মূল্য অনুধাবন করে আমরা একটি বিপণন কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে শীঘ্রই একটি বিপণন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে," বলেন তিনি। 

বিএলআরআই সূত্রে জানা যায়, তারা ডিএলএস থেকে পাওয়া বিভিন্ন জাতের গবেষণা করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন উপযোগী বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। এরমধ্যে রেড নেপিয়ার, জারা নেপিয়ার, পাকচুন, নেপিয়ার ১, নেপিয়ার ২, নেপিয়ার ৩, নেপিয়ার ৪।

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ২০০৮-০৯ সালে গরু, ছালল, মহিষ ও ভেড়ার সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৯৫ লাখ। যা ২০২০-২১ এ দাড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৩ লাখ, গরুর সংখ্যাই ২ কোটি ৪৫ লাখ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারেই কমবেশি গরু-ছাগল পালন করা হতো। এখন এটা কমে এসেছে।  বেশিরভাগ মানুষ এখন গরু-ছাগল পালন করছেন বাণিজ্যিকভাবে।

বিএলআরআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার বলেন, "দেশে অনেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে খামার  করছেন। অন্যদিকে ঘাসের উৎপাদন কম। এ কারণেই খামারি ও কৃষকরা ঘাষ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।"

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনসুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কিবৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলাসবাই ঈদের নামাজে গেলে শাহনাজের ঘরে ঢুকে প্রেমিক রাজু, অতঃপর...