শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৬:৪১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ভাষা শহিদ বরকত নেই, আছে স্মৃতি!

ভাষা শহিদ বরকত নেই, আছে স্মৃতি!
সংগৃহীত

আজ থেকে ৭২ বছর আগে কথা। ১৯৫২ সাল। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে থমথমে ঢাকার রাজপথ। দাবি আদায়ের গতি মন্থর করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেই ১৪৪ ধারা ভেঙে ফেলে ছাত্র জনতা। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন ভাষা শহিদদের অন্যতম আবুল বরকত। 

তলপেটে গুলি লাগে। নীল হাফ শার্ট, খাকি প্যান্ট ও কাবুলী স্যান্ডেল লাল রক্তে মেখে যায়। সেখান থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। অবশেষে রাত ৮টার দিকে বরকত ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতি স্বরূপ আবুল বরকতকে ২০০০ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।

 

১৯৫১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান লাভ করে তিনি অনার্স পাশ করেন।

১৯৫১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান লাভ করে তিনি অনার্স পাশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রিয়জনরা ডাকতেন ‘আবাই’ নামে। ১৯২৭ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পাশের গ্রাম তালিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রবেশিকা (এসএসসি) পাশ করেন। এরপর বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে তিনি এইচএসসি পাশ করেন। 

১৯৪৮ সালে বরকত চলে আসেন পূর্ব বাংলায় অর্থাৎ বাংলাদেশে। ঢাকার পল্টনে বিষ্ণুপ্রিয়া ভবনে তার মামা আব্দুল মালেকের বাড়িতে তিনি থাকতে শুরু করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৪৮ সালে বরকত ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৫১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান লাভ করে তিনি অনার্স পাশ করেন। এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করার জন্য ভর্তি হন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

 

বরকত এ দেশের সন্তান না, তারপরেও দেশে প্রতি ভালোবাসাতে বরকত আমাদেরই একজন। তিনি না থাকার ৭২ বছর আজ। আজও তার স্মৃতি রয়েছে। বাবাকে লিখা তার আবেগমাখা সেই চিঠি রয়েছে।

স্মৃতির প্রতি সম্মানার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জহরুল হক ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংলগ্ন পলাশী মোড়ের পাশে শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা চালু করা হয়। এখানে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের আলোকচিত্র, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের খবর রয়েছে এমন পত্র-পত্রিকার অংশ বিশেষ, ১৯৪৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৯ সালের ২ জুলাই, ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বরে বাবাকে লিখাকে বরকতে চিঠি, বরকতের মরণোত্তর একুশে পদকসহ তার ব্যবহৃত সামগ্রী স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরটিতে।

 

আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতি স্বরূপ আবুল বরকতকে ২০০০ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।

আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতি স্বরূপ আবুল বরকতকে ২০০০ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।

জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিনা বেতনে এই জাদুঘরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বরকতের জন্ম মুর্শিদাবাদে। কয়েক বছর আগে নিজ উদ্যোগে মুর্শিদাবাদ গিয়েছি। সেখানে বরকতের জন্মভূমিসহ স্মৃতি বিজড়িত জায়গা ঘুরে দেখেছি। কিছু স্থিরচিত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো দিয়ে বরকত কর্নার গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ