শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

দাবদাহে এসি বিক্রি তুঙ্গে

দাবদাহে এসি বিক্রি তুঙ্গে

টানা কয়েক দিনের তীব্র গরমে পুড়ছে দেশ। ঘরে-বাইরে অসহনীয় গরম, অতিষ্ঠ জনজীবন। অসহনীয় গরমে সামর্থ্যবানদের পাশাপাশি এখন মধ্যবিত্তরাও ঝুঁকছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের (এসি) দিকে। ফলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসির শোরুমগুলোতে এক মাসের ব্যবধানে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বিক্রি। একই সঙ্গে বেড়েছে এয়ারকুলার, সিলিং ফ্যান ও চার্জার ফ্যানের বিক্রিও।

বিক্রেতারা বলছেন, অতিষ্ঠ গরমে ঘর বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঠাণ্ডা রাখতে এখন এসি কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। কিস্তি সুবিধা থাকার কারণে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তরাও এখন এসি কিনতে ভিড় করছেন। এসি এখন আর বিলাসী পণ্য নয়, এটি অতি প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে উঠেছে বলেও বিক্রেতারা জানান। গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসির শোরুম ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

শোরুমগুলো ঘুরে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি প্রায় প্রতিটি ব্র্যান্ডের এসিতে চলছে আকর্ষণীয় ছাড়। নগদ কেনার ক্ষেত্রে এসিতে চলছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। একই সঙ্গে বিশাল ছাড়ে গ্রাহকদের পুরনো এসি পাল্টে নতুন এসি কেনারও সুযোগ দিয়েছে কম্পানিগুলো। প্রায় সব ব্র্যান্ডের এসিতে রয়েছে কিস্তির সুবিধা। ছয় থেকে ১২ মাসের কিস্তিতে পরিশোধ করা যাচ্ছে এসির দাম।

রাজধানীর বাড্ডায় বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের শোরুমে গিয়ে ক্রেতার সমাগম দেখা গেছে। জানতে চাইলে শাখার ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম  বলেন, ‘আমাদের শোরুমে স্যামসাং, ইকো প্লাস, হায়ার ও এলজি ব্র্যান্ডের এসি বিক্রি হয়। এবার অস্বস্তিকর গরমের কারণে মানুষ এসি কিনতে ছুটে আসছেন। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে এসির বিক্রি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গরম থেকে বাঁচতে এখন নিম্ন মধ্যবিত্তরাও এসি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সব ব্র্যান্ডের এসি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। কম্প্রেসার ওয়ারেন্টি ১০ বছর এবং এক বছরের সার্ভিসিং সুবিধা রয়েছে। নগদে এসি কিনলে ১ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত নিশ্চিত ডিসকাউন্ট সুবিধা রয়েছে।’

রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকায় ওয়ালটন শোরুমের ম্যানেজার মোস্তফা কামাল সোহাগ বলেন, ‘তীব্র দাবদাহের কারণে এবার এসির চাহিদা প্রচুর। গত বছরের তুলনায় এবার প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬০ শতাংশ। ওয়ালটনের যেকোনো এসিতে ১০ শতাংশ নগদ ডিসকাউন্ট সুবিধা রয়েছে। পুরনো এসি পাল্টে নতুন এসিতে ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট রয়েছে।’ এসির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে আপাতত কিস্তির সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘আগে নিম্ন মধ্যবিত্তরা এয়ারকুলার ও সিলিং বা চার্জার ফ্যানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। কিন্তু এবারের অতিরিক্ত গরমে এসবে নজর না দিয়ে সবার নজর এসিতেই। কারণ এসির দাম নিম্ন মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যে থাকার কারণে তাঁরাও এসির ব্যবহারে ঝুঁকছেন।’

কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসি কিনতে এসেছিলেন শাহজাদপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন ২৪ ঘণ্টাই প্রচণ্ড গরম। বাসায় বয়স্ক মা-বাবা রয়েছেন, এই অতিরিক্ত গরমে তাঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই এসি কিনতে আসলাম।’

পুরনো এসি ঠিকমতো কাজ না করায় এটি পরিবর্তন করতে ওয়ালটনের এই শাখায় এসেছেন রামপুরার বাসিন্দা আব্বাস আলী। তিনি বলেন, ‘পুরনো এসির বদলে নতুন এসিতে ওয়ালটন ডিসাকউন্ট সুবিধা দিয়েছে। যার কারণে পুরনোটি দিয়ে দেড় টনের একটি এসি কিনে নিতে আসলাম।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন বিভাগ) তৌহিদুর জামান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে এ বছর ভিশন এসি বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। ভিশন ও ক্লিক সিলিং ফ্যান বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ এবং চার্জার ফ্যান বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ।’

দেশীয় ব্র্যান্ড মিনিস্টার এসি নগদ কেনার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। একই সঙ্গে মিনিস্টার এসির ওপর চলছে ‘এক্সচেঞ্জ’ অফার। যেকোনো গ্রাহক পুরনো এসি পাল্টে ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধায় মিনিস্টার নতুন এসি কিনতে পারবেন।

মিনিস্টার শোরুম মধ্যবাড্ডা শাখার সহকারী ম্যানেজার মো. রনি মোল্লা বলেন, ‘গত দুই মাসের তুলনায় মিনিস্টার এসির বিক্রি ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।’

সিঙ্গার শোরুম শাহজাদপুর শাখার ম্যানেজার মো. রাশেদুর রহমান বলেন, ‘এ বছর আমাদের এসি বিক্রিতে যে টার্গেট ছিল সেটি এখনই পূরণ হয়ে গেছে। এভাবে দাবদাহ চলতে থাকলে এসি বিক্রি আরো বাড়বে। গত এক থেকে দেড় মাসে ৫০ শতাংশের বেশি এসি বিক্রি বেড়েছে। সিঙ্গারের যেকোনো এসিতে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা রয়েছে। একই সঙ্গে কিস্তিতে ১২ মাসের ই-এমআই সুবিধাসহ ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১২ মাসের কিস্তির সুবিধাও রয়েছে।’

এসির দাম—ওয়ালটন ব্র্যান্ড : এক টন এসির দাম ৪২ হাজার ৯০০ টাকা, দেড় টন এসির দাম ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা এবং দুই টন এসির ৫৭ হাজার টাকা।

সিঙ্গার ব্র্যান্ড : এক টন এসির দাম ৪৯ হাজার টাকা (নন-ইনভার্টার), ৫৯ হাজার টাকা (ইনভার্টার), দেড় টন এসির দাম ৫৯ হাজার টাকা (নন-ইনভার্টার),  ৭৬ হাজার টাকা (ইনভার্টার), দুই টন এসির দাম ৯৩ হাজার টাকা (ইনভার্টার)।

মিনিস্টার ব্র্যান্ড : এক টন এসির দাম ৩৭ হাজার ৯০০ টাকা, দেড় টন এসির দাম ৫৯ হাজার ৯০০ থেকে ৭২ হাজার ৯০০ টাকা এবং দুই টন এসির দাম ৬৯ হাজার টাকা থেকে ৮২ হাজার ৯০০ টাকা।

ইকো প্লাস ব্র্যান্ড : এক টন এসির দাম ৪৫ হাজার টাকা, দেড় টন এসির দাম ৬৯ হাজার টাকা এবং দুই টন এসির দাম ৮৩ হাজার টাকা।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ