শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ০৭:৪৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের অনন্য পদক্ষেপ

অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের অনন্য পদক্ষেপ

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ দেশবাসীকে আশান্বিত করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আলোচিত বড় প্রকল্পগুলো একে একে চালু করছে সরকার। এটা এক বিস্ময়কর নজির। পাশাপাশি প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ঘিরে দলীয় সমাবেশ ডেকে রাজনীতির মাঠে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করছে ক্ষমতাসীন দল। তা ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এসব প্রকল্প উদ্বোধনের কাজ শেষ করতে চায় সরকার। তফসিল ঘোষণার আগে ১১ প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে।

১১টি প্রকল্পের মধ্যে ১০টিই যোগাযোগ খাতের। বাকিটি রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র। এই ১১ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। রাশিয়া, চীন, জাপান, ভারত ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এসব প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে। যোগাযোগের প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের আছে চার প্রকল্প। এর তিনটিই শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। ইতোমধ্যে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করেছে দেশের রাজধানী। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপেসওয়ে বিমানবন্দর-বনানী-তেজগাঁও সাধারণের যান চলাচল শুরু হয়েছে রবিবার ভোর ৬টা থেকে। নির্ধারিত টোল দিয়ে ব্যবহার করা যাবে এ উড়ালপথ। আশা করা যাচ্ছে, এতে যানজট থেকে রাজধানীবাসীর স্বস্তি মিলবে। প্রকল্পের পুরো অংশ কুতুবখালী পর্যন্ত চালু হবে আগামী বছরের জুনে। এর ফলে দেশের যোগাযোগ খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন অনুভূত হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব তথা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বদৌলতে রাজধানীর যানজট একদিকে যেমন কমবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ২০ কিলোমিটারের সড়ক ২০ মিনিটে পার হওয়ার সুযোগ মিলবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের এ প্রকল্পটি দেশের উন্নয়নের একটি অনুকরণীয় মডেল বলেও বিবেচিত হবে। শিল্পায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদু্যৎ ও জ্বালানির পাশাপাশি দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যাপক মনোনিবেশ করে। পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন, বিদ্যমান মহাসড়কগুলো চার লেন করা, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাসর্ যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি, ঢাকা মহানগরীতে মেট্রোরেলসহ আরও অনেক মেগাপ্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মেট্রোরেলের আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বা শুরু হবে শিগগিরই। বিদ্যমান দুটি বন্দরের উন্নয়নের পাশাপাশি মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল ও কক্সবাজারে আধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণসহ আরও অনেক কার্যক্রম এরই মধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ফলে শুধু ঢাকা মহানগর নয়, সারাদেশেই যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

\হদেশের রাজধানীর পৃথক বৈশিষ্ট্য থাকে। শহরটিকে হতে হয় আধুনিক ও নান্দনিক। নাগরিক সুবিধা থাকে সুবিস্তৃত ও বহুমুখী। সেইসঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও হতে হয় সুগম ও বহুমাত্রিক। আবার শহর থেকে শহরের উপকণ্ঠ ও শহরতলিতে নিত্য যাতায়াতেরও সুবিধা থাকতে হবে। এ সবের জন্য চাই সুষ্ঠু ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যোগাযোগ অবকাঠামোর পরিকল্পিত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, উন্নয়নের এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, এটি অপার সম্ভাবনার নাম। একটি দেশের মর্যাদার ও অহংকারের প্রতীক, অর্থনীতির নতুন সোপান। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই পদ্মা সেতু। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকার। যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে। উলেস্নখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল। এই চ্যালেঞ্জে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছেন। প্রকৃত পক্ষেই এটা বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ যেভাবে যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষও সেভাবে পারছে। এবার তাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মাসেতু দিয়ে ট্রেন চলবে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে এ টানেল প্রকল্পের সমীক্ষা হয় ২০১৩ সালে। খুব তাড়াতাড়ি এই টানেল খুলে দেয়া হবে।

রাজধানীতে যত সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে যানজট সমস্যা অন্যতম। এর ফলে নগরবাসীর কেবল কর্মঘণ্টাই নষ্ট হয় না, তাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটিয়ে দিতে হয় নগরবাসীকে। যানজট সমস্যা নিরসনের জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানীতে নির্মাণ করা হয়েছে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল। যানজট নিরসনে জাদুর কাঠি হিসেবে কাজ করছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল।

মেট্রোরেল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদু্যৎচালিত রেল। বাংলাদেশে এই প্রথম বিদু্যৎচালিত কোনো রেল চালু হয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ অচিরেই চালু হবে।

সরকারের মেগা প্রকল্প দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনের মাইলফলক। দেশের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী সুফল বয়ে আনবে বলে আমাদের বিশ্বাস। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব যে সত্যি সত্যিই বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছে, এ সব বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক তার আপন মহিমা নিয়ে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ