শিক্ষার দুর্দশা: ১৩৪ প্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ, বাল্যবিবাহ বড় কারণ

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দেশের ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে ৮৬টি মাদ্রাসা ও ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি, যা দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার এক অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শূন্য পাস করা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৪টি, কুমিল্লায় ১টি, যশোরে ২টি, চট্টগ্রামে ১টি, বরিশালে ১৬টি, দিনাজপুরে ১৩টি, ময়মনসিংহে ১১টি বিদ্যালয় রয়েছে।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের নিয়ে একটি জরিপ করেছিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এতে দেখা গিয়েছিল, জরিপের আওতায় আসা অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন শূন্য পাস করা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও একটি বড় অংশ বিবাহিত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলের কালিয়া আড়াইপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দুই পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও এ চিত্রই দেখা গেছে।
বরগুনার সদর উপজেলার পুরাকাটা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর ১৭ জন ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল; কিন্তু সবাই ফেল করেছে।
পুরাকাটা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসরাত জাহান বলেন, ‘প্রতিবছরই আমাদের বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো হয়। কিন্তু এবার আমাদের সব অর্জন শেষ। ১৭ জন ছাত্রীর মধ্যে বাল্যবিবাহ হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন ছাত্রীর। এ ছাড়া তারা ক্লাসে অনিয়মিত ছিল। আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিয়েছি। তবে দু-একটি কারণে ফেল করে না। ফেল করার অনেক কারণ আছে।’
এ অবস্থাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শুধু শূন্য পাস নয়, ১০ থেকে ২০ শতাংশ পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটির সভাপতি অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির জানিয়েছেন, এসব শূন্য পাসকারী প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও খারাপ ফলাফলের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তরকে।
প্রসঙ্গত, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩০ হাজার ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে মাত্র ৯৮৪টি, যা গতবারের তুলনায় প্রায় দুই হাজার কম। গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে আগের বছরের তুলনায়।
শিক্ষাবিদদের মতে, এই ফলাফল শুধু সংখ্যার নয়—এটি শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার একটি স্পষ্ট প্রতিবিম্ব।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক