বেলারুশকে ঢাকায় দূতাবাস খোলার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

বাংলাদেশে নিযুক্ত বেলারুশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূতকে (নয়াদিল্লি ভিত্তিক) ঢাকায় দূতাবাস খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত বেলারুশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত মিখাইল কাসকো সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ অনুরোধ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৯২ সালে বেলারুশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দু'দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বিদ্যমান যা দিনদিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বেলারুশ থেকে অন্যতম সার আমদানিকারক দেশ। এসব কারণে দু'দেশের সাধারণ জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকায় বেলারুশের একটি অনারারি কনস্যুলেট রয়েছে। কিন্তু মূল দূতাবাস নয়াদিল্লিতে অবস্থিত হওয়ায় ভিসা ও কনস্যুলার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যয় বৃদ্ধি, হয়রানিসহ জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেজন্য ঢাকায় বেলারুশের একটি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস খোলা প্রয়োজন। উপদেষ্টা এ বিষয়ে বেলারুশের রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দূতাবাস খোলার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি অসম্ভব কিছু নয়। তবে এ বিষয়ে দু'দেশের সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ বেলারুশ থেকে সবচেয়ে বেশি এমওপি (মিউরেট অভ পটাশ) আমদানি করতো। ২০২১ সালে বেলারুশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ আমদানি করা সারের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। এরপর থেকে বেলারুশ থেকে বাংলাদেশে সার আমদানি বন্ধ রয়েছে।
সার আমদানির টাকা পরিশোধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সব দেশের সার আমদানির টাকা পরিশোধ করেছি। তিনি বলেন, যথোপযুক্ত প্রক্রিয়া খুঁজে বের করে বেলারুশের বকেয়া টাকাও দ্রুত পরিশোধ করা হবে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে বেলারুশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে টেলিফোনে নির্দেশ প্রদান করেন।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জেল থেকে বেলারুশের একজন নাগরিককে বন্দি প্রত্যর্পণের আওতায় ফেরত নেওয়ার অনুরোধ করলে উপদেষ্টা বলেন, বেলারুশের নাগরিক হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত। তাছাড়া মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। অধিকন্তু দুই দেশের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের কূটনৈতিক চ্যানেলে বিনিময় সংক্রান্ত কোনো চুক্তি নেই।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বেলারুশের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু অপরাধী অপরাধীই তা সে যে দেশেরই হোক। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বাধিক সহযোগিতা করা হবে।
বৈঠকে দু'দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ইস্যু, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ, ঢাকায় বেলারুশের পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস খোলা, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান ও কুশল বিনিময় করেন। রাষ্ট্রদূত এ সময় উপদেষ্টাকে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বেলারুশের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে ঢাকায় বেলারুশের অনারারি কনস্যুলেটের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ কে. রায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক-১) মু. জসীম উদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট