শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৬:৪২, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

কিশোরীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দিলো আইএইচডব্লিউ

কিশোরীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দিলো আইএইচডব্লিউ
সংগৃহীত

‘বিদ্যালয়ে অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার, নীরব মহামারিতে কিশোরীরা’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশের পর মেয়েদের পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্কুল ক্যাম্পেইন করে বেসরকারি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ওয়েলফেয়ার’ (আইএইচডব্লিউ)৷ ক্যাম্পেইনে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করে সংগঠনটি৷

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনশ্রীর হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অডিটোরিয়ামে এ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়। এ ক্যাম্পেইনের মিডিয়া পার্টনার ছিল ঢাকা পোস্ট।

ক্যাম্পেইনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৮ লাখ নারী মাসিকের সময় অপ্রতুল সেবার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মাসিক চলাকালীন এই অপ্রতুল সেবার কারণে যে সমস্যাগুলো হয় তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রজনন গ্রন্থিগুলোর ইনফেকশন। প্রজনন গ্রন্থি, টিউব এবং জরায়ুতে যে ইনফেকশনগুলো হয় পরে কিশোরীরা বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে। এ সমস্যা যে শুধু কৈশরকালীন হয় তা কিন্তু নয়। যেহেতু সঠিকভাবে মাসিক ব্যবস্থাপনা করা না গেলে কিশোরীদের প্রজনন গ্রন্থিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেহেতু তাদের বাচ্চা নেওয়ার সময় এ সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে। আমাদের মা, মেয়ে এবং বোনদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখনই একটি টেকসই পরিকল্পনা প্রয়োজন৷ এক্ষেত্রে সরকার এবং সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে৷

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. তারেক এম হোসেন বলেন, দেশের বেশিরভাগ স্কুলগুলোতে মাসিক ব্যবস্থাপনার সুযোগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এসব বিষয় নিয়ে ভাবেন বলেও মনে হয় না। দেশের অভিজাত স্কুলগুলোতেও একটি ওয়াশ রুম গড়ে ৬০ জনের বেশি ব্যবহার করেন। যে ওয়াশ রুমে একদিনে ৬০ জন শিক্ষার্থী যায় সেখানে নিশ্চয়ই টিস্যু, সাবান বা আনুষঙ্গিক উপকরণ থাকে না। এছাড়া ঢাকনাযুক্ত বিনের ঘাটতিও স্পষ্ট। সুতরাং গণহারে যেখানে সবাই ব্যবহার করছে সেখানেই মাসিক চলাকালীন কিশোরীদের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করা কতটা প্রাসঙ্গিক এটা সবাই বুঝবে। সুতরাং এখনই সময় মেয়েদের জন্য পৃথক বাথরুমের পাশাপাশি পৃথক হাইজিন কর্নার চালু করা। যেখানে মেয়েরা মাসিকের সময়ে ব্যবহার করবে। এটা করতে না পারলে নানা ধরনের সংক্রমণ দেখা দেবেই। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে প্রতিবছর যত কিশোরীদের ইউরিন ইনফেকশন হয় তার সিংহভাগ হয় এই নোংরা পরিবেশে মাসিক ব্যবস্থাপনার কারণে। মাসিক চলাকালীন অপরিচ্ছনতায় গর্ভে সমস্যার পাশাপাশি ৯৭ শতাংশ নারীর কোনো না কোনো সময়ে সার্ভিক্যাল ইনফেকশন সমস্যায় ভোগেন।

ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জসিম উদ্দীন বলেন, স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীদের মাসিক ব্যবস্থাপনায় এখনো সেইভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। মাসিক ব্যবস্থাপনায় স্কুলের যেমন একটা দায়িত্ব রয়েছে তেমনি শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদেরও একটা ভূমিকা রয়েছে। স্কুল পর্যায়ে মেয়েদের হাইজিন মেইনটেইন করে প্যাড পরিবর্তনের  সুযোগ করে দেওয়া কিন্তু খুব বড় কোনো ইনভেস্টমেন্টের বিষয় নয়। এটি আসলে ইচ্ছার ব্যাপার। তবে এই ইচ্ছার জায়গাতেই আমাদের খুব ঘাটতি আছে। সঠিক পরিবেশ না পেয়ে মেয়েদের ঋতুকালীন এ প্রক্রিয়ায় তারা যদি স্কুলে আসতে না পারে তাহলে মাসে গড়ে পাঁচ থেকে সাত দিন তাদের অনেকের স্কুল মিস হয়ে যায়। এর ফলে সে শিক্ষার একটা অংশ থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।

হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ড. মনির আল দ্বীন বলেন, ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ওয়েলফেয়ারের এ আয়োজন নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। আগামীতেও সংগঠনটি তাদের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মানুষের পাশে থাকবে আমার বিশ্বাস৷

সভাপতির বক্তৃতায় ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ওয়েলফেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা মাহফুজা বলেন, ছেলে-মেয়েদের আলাদা টয়লেট মেইনটেইন করা খুব কঠিন কিছু না। এটার একটা ডিসপোজাল অ্যারেঞ্জমেন্ট লাগবে। যাতে বাচ্চারা সেটি ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এই জিনিসটা আমার কাছে মনে হয়েছে খুব কঠিন কিছু নয়। সিম্পল একটা উদ্যোগ নিলেই এটা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন খুব যে ব্যয়বহুল তাও নয়। কিছু কিছু স্কুল কিন্তু সেটি করছে।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ