শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১০:০৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত মাতৃভাষা: প্রধানমন্ত্রী

শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত মাতৃভাষা: প্রধানমন্ত্রী
সংগৃহীত

সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার মাধ্যম মাতৃভাষা হওয়া উচিত। পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শিক্ষারও সুযোগ থাকতে হবে। বুধবার বিকালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় এ তাগিদ দেন তিনি। তিনি এ দিবস উপলক্ষে চার দিনের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "শিক্ষার জন্য মাতৃভাষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃভাষায় শিক্ষা নিতে পারলে সেই শিক্ষা জানা বোঝা গ্রহণ করা অনেক সহজ হয়। তবে কর্মক্ষেত্রে অনেক ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন আছে। আমি মনে করি আমাদের শিক্ষার মাধ্যম মাতৃভাষা হওয়া উচিত। পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শিক্ষারও সুযোগ থাকতে হবে। কারণ পৃথিবীর সব দেশে এটা থাকে। সে সুযোগ করে দিতে পারলে আমাদের দেশের মানুষের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না।

“কিছু কিছু পরিবার হঠাৎ টাকা-পয়সার মালিক হয়ে গেছেন। এখন মনে করে ছেলে মেয়েরা ইংরেজিতে কথা বললে খুবই দক্ষ হয়ে গেল। ইংরেজি ভাষায় বললে, ‘স্মার্ট’ হয়ে গেল। বাংলা ভাষায় ছয় হাজারের উপর বিদেশি শব্দ আছে। সব তো আমরা নিয়ে নেই, আমরা গ্রহণ করে ফেলি, সেটা ঠিক আছে কিন্তু স্মার্ট হতে হলে একটা ল্যাংগুয়েজ শিখতে হবে বা সেই ভাষায় কথা বলতে হবে সেটা মনে করি না।“

নিজের ভাষা শিখেও অন্যের ভাষা শেখা যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের অনেকে হয়তো ভালোভাবে ভাষা জানে কিন্তু বলতে পারছেন না, লজ্জা পান, এখানে লজ্জার কিছু নেই।“

বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষা যে হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলো যাতে হারিয়ে না যায় সে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এগুলো সংরক্ষণ করা, গবেষণা করা, জীবন জীবিকার জন্য মানুষকে অনেক ভাষা শিখতে হয়। মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা, এটা প্রত্যেকটা জাতির কর্তব্য বলে আমি মনে করি। সেই লক্ষ্য থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলব।

“আজকে সেই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ইউনেস্কো কর্তৃক ক্যাটাগরি দুই'তে উন্নীত হতে পেরেছি।"

তিনি বলেন, "এক সময় আমাদের কিছু জ্ঞানী গুণী বলেছিলেন যে অনুবাদের দরকার নেই। আমি কিন্তু সেটা বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি অনুবাদ একান্তভাবে দরকার। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষা আমাদের শিল্প, আমাদের সাহিত্য, আমাদের লেখা, সেগুলো যত বেশি অনুবাদ হবে, বাংলাদেশের বা বাঙালি জাতিকে মানুষ তত জানতে পারবে। তত বেশি বুঝতে পারবে। তথ্য বেশি শিখতে পারবে৷ পাশাপাশি আমরাও অন্য ভাষাকে মাতৃভাষা পড়ব সেটাকে যতটা অন্তরে উপলব্ধি করতে পারব, সেটা অন্য কোনো বাসায় পারব না।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৃগোষ্ঠীর ভাষায় অনুবাদ করা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মাতৃভাষা পিডিয়া ও বহুভাষী পকেট অভিযান উন্মোচন করেন। ছবি: পিআইডি

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৃগোষ্ঠীর ভাষায় অনুবাদ করা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মাতৃভাষা পিডিয়া ও বহুভাষী পকেট অভিযান উন্মোচন করেন। ছবি: পিআইডি

"এখন আমাদের ডিজিটাল যুগ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সও বাংলা ভাষায় ঢুকে যাবে-এসে গেছে, ব্যবহার হচ্ছে। প্রযুক্তি যত আসবে তার সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ভাষাটাকেও সেইভাবে সামঞ্জস্যভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এখন ডিজিটাল ডিভাইসে অনুবাদ করতে গিয়ে এমন কিছু উদ্ভট কিছু লিখে ফেলে, শেষে তার অর্থই খুঁজে পাওয়া যায় না। এই বিষয়গুলো তো নজর দেওয়া দরকার। অনুবাদ করতে গিয়ে আমাদের ভাষাটাকে বিকৃত করা হয়। ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে অনুবাদ করার পর আপনাদের দেখা উচিত, সংশোধন করা উচিত। যথাযথ সংশোধন করে যাতে বাজারে আসে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।"

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মাতৃভাষা রক্ষায় যারা আত্মত্যাগ করেছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বাঙালি জাতি রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা দিয়ে গেছে। নিজের ভাষা রক্ষা করার মধ্য দিয়ে একটা জাতীয় উন্নত জীবন পেতে পারে। আমাদের মাতৃভাষার কথা বলার অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। একটা বিজাতীয় ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তখন এই দেশে মানুষ মেনে নেয়নি।

“মাতৃভাষার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার আইন বিভাগের ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নেন, তিনি ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। আরও কয়েকটি প্রগতীশীল সংগঠনকে নিয়ে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। জাতির পিতার উদ্যোগের ফলে এবং তার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের পথ দিয়েই আমরা আমাদের স্বাধীকার পেয়েছি। স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র বাংলাদেশ হচ্ছে একটি ভাষার রাষ্ট্র। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা নেতৃত্বে আমরা এই মর্যাদা অর্জন করেছি।"

তিনি বলেন, "জাতির পিতাকে হত্যা করার পর মূলত বাংলাদেশ, বাঙালির জাতি, বাঙালি সংস্কৃতিটা অনেকটা হারিয়ে যেতে বসে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলা দেওয়া হয়েছিল এগুলো পরিবর্তন করে একটা ভিন্ন ভাষা নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালানো হয়। সেই জায়গা থেকে আজকে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি।

সূত্র: bdnews24

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ