শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৭:৩১, ২ মার্চ ২০২৪

বসন্তে সজনে ফুলের শ্বেতশুভ্র সৌরভ

বসন্তে সজনে ফুলের শ্বেতশুভ্র সৌরভ
সংগৃহীত

শ্বেতশুভ্র পাপড়ির মাঝে গ্রামীণ নববধূর মূল্যবান অলংকার নাক ফুলের মতোই স্বর্ণালী মহামূল্যবান শোভা। শুভ্র পরাগদণ্ডের শেষ প্রান্তে স্বর্ণালী সৌন্দর্যের আবরণে পরাগধানী। যেটিকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয়ে থাকে পুংকেশর। গর্ভকেশর, বৃতি, পুষ্পাক্ষ একটি আদর্শ ফুলের সকল গুণের সঙ্গে মনমুগ্ধকর সৌরভও রয়েছে এ ফুলের।

যে সৌরভ সন্ধ্যার পর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগের মনবৃত্তি না থাকলে সচরাচর ধরা দেয় না। আর এ কারণেই হয়তো দেশের কৃষিতে অপ্রচলিত সবজির তালিকায় নাম ওঠা ‘সজিনা’ ফুলের সৌরভ হয়তো কবি-সাহিত্যিকদের মনেও খুব একটা জাগরণ তৈরি করতে পারেনি। 

তবে বর্তমান নগরীর সজনে ফুলের সৌন্দর্য দেখলে হয়তো প্রকৃতির কবি হিসেবে খ্যাত জীবনানন্দ দাশ বসন্তে কবিতার মালা গাঁথতেন সজনে ফুলের মুগ্ধতা ছড়ানো সৌরভ দিয়েই!

সজনে ফুল দেশের গ্রামীণ সৌন্দর্য ও পুষ্টির অন্যতম অনুসঙ্গ হলেও কবি-সাহিত্যিকরা খুব বেশি এ ফুল কিংবা গাছ নিয়ে কথা বলেননি। তবে বিস্তর আবেদন না পাওয়া গেলেও বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতির কবি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বাতাসে ধানের শব্দ শুনিয়াছি’ কবিতায় সজনে ফুলের কথা পাওয়া যায়। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘…আনারস বন; ঘাস আমি দেখিয়াছি; দেখেছি সজনে ফুল চুপে চুপে পড়িতেছে ঝরে’। তার এ কবিতায় সকলকে মনে করিয়ে দেয় প্রিয় শ্যামল বাংলার প্রকৃতিতে ফাল্গুনে গাছে গাছে দুলছে নান্দনিক সজনে ফুল। 
আবার ঝরে পড়ে নিজের ছায়াতল সাজিয়ে তুলছে। তবে সজনের মায়াবী সৌন্দর্যের বন্দনা করতে আগামী দিনের কবিদের অপেক্ষার প্রহর হয়তো গুনেছেন তার কবি মন!

বসন্তের শুরুতেই নগরীর সজনের গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। থোকায়-থোকায় ঝুলছে কোটি কোটি ফুল। গাছে গাছে ফুলের পরিমাণ এতোটাই বেশি যে গাছের পাতা পর্যন্ত দেখার উপায় নেয়। অনেক গাছ ফুলের ভারে নুয়ে পড়েছে। কোনো কোনো গাছের ডাল ফুলের ভারে ভেঙেও পড়েছে। কেউ কেউ অতিরিক্ত ফুলের ভারে যেন গাছটিই না পড়ে যায়; এ শঙ্কায় কিছু ডাল ছেঁটে দিয়েছেন। কেউ দিয়েছেন বাঁশের ঠেকা (সাপোর্ট) দিয়েছেন। আর এ অতিভারে বিপর্যস্ত গাছের ফুলে ফুলে যেন আর্শীবাদ হয়ে ভ্রমরের আগমন। 

সঙ্গে উপকারী অন্য পোকারাও রয়েছে। ভ্রমর ও মৌমাছি সংগ্রহ করছে মধু। তাদের যখন মধু সংগ্রহে ব্যস্ততা, তখন পরাগায়ণ করে ফুল থেকে পরিপূর্ণ সজনে ডাটায় পরিণত হওয়ার সংগ্রাম চলছে ফুলেদের মাঝে। কারণ প্রতি মুহূর্তেই ঝরছে ফুল। ঝরেপড়া এ ফুলগুলোর মূল্যহীন গন্তব্য।

 অপরদিকে, টিকে থেকে যে ফুলগুলো আনবে ফল; দিনশেষে তা আনবে চাষির মনে তুষ্টি। কারণ ফুল নিয়ে সৌন্দর্য পিপাসু, বিশেষজ্ঞ ও কবির আগ্রহ থাকলেও চাষির আগ্রহ ফল ও পাতা। কারণ ফুলের গুণ এখনো অজানা চাষিদের।

সজনে ফুল গবেষকদের কাছে মহামূল্যবান। এটা নিয়ে দেশীয় পর্যায়ে গবেষণাও চলমান। কৃষি খাতের অপ্রচলিত সবজি নিয়ে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা’র সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চলমান। গবেষণার প্রথম পর্যায়ে সজনে পাতা ও বীজ নিয়ে বিষ্ময়কর সফলতা এসেছে। এখন অপেক্ষা ফুল নিয়ে। গবেষকরা সজনে পাতাকে ‘নিউট্রিশন্স সুপার ফুড’ এবং সজনে গাছকে বলা ‘মিরাকেল ট্রি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন।

রাজশাহীতে কয়েক দশকে সজনের আবাদ বেড়েছে। রাস্তার পাশে সজনের সাদা ফুল পথচারীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করছে। নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় রাস্তার পাশে সারি সারি বেশকিছু সজনে গাছের সৌন্দর্য যাত্রী ও পথচারীদের চোখ এড়াতে পারছে না। এখানকার প্রতিটি গাছ ফুলের ভারে নুয়ে পড়েছে।

এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন মো. ইয়াসিন আলী। তিনি বলেন, শহরের মধ্যে এতো ফুলসহ সজনে গাছ অন্য কোথাও দেখিনি। গত বছরও প্রচুর ফুল ছিল। এবার আরো বেশি ফুল। নব-নির্মিত রাস্তার পাশে এই সৌন্দর্য আরো চমৎকার হয়ে উঠেছে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ