শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৭:৫৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সবুজের সঙ্গে হ্রদ পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি

সবুজের সঙ্গে হ্রদ পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি
সংগৃহীত

শুষ্ক মৌসুমে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে জেগে ওঠে অসংখ্য ছোট ছোট চর। এসব চরকে জলেভাসা জমি বলা হয়। পলি ভরাট এসব চরে লাঙলের সেচ ছাড়াই বোরো ধানের চাষ করছেন পাহাড়ি চাষিরা। তবে সেচ সংকট আর কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। পাশাপাশি, নির্ধারিত সময়ের আগে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও করছেন তারা।

কাপ্তাই এবং বিলাইছড়ি উপজেলা সংলগ্ন হ্রদের বেশ কিছু অংশে দেখা গেছে, বোরো ধানের সবুজ আবরণে ছেয়ে গেছে কাপ্তাই হ্রদের চারপাশ। এ  যেন সবুজের সঙ্গে হ্রদ পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি। চারদিকে বোরো ধানের চারা লাগানোর সমারোহ। সেই সঙ্গে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার স্থানীয় চাষিরা। কেউ কেউ কাপ্তাই হ্রদের পাশে জেগে ওঠা এই ছোট বড় চরগুলোকে চাষের উপযোগী করে তুলছে আবার অন্যদিকে অনেক চাষি সেইসব চরে বোরো ধানের চারা লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।

রাঙ্গামাটি কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায়  ৮ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে । এতে উফশী ধানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে । এতে ৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে এবং হাইব্রিড জাতের ধানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে। এদিকে, উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন ধান। 

এতে উফশী ধানের উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন  এবং  হাইব্রিড জাতের ধানের উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন । বর্তমানে বোরো ধানের আবাদের অগ্রগতি শতকরা ৯৩ ভাগ সস্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় ৫৫৮ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান ও ২৪৩ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ধানের আবাদের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হেয়েছে ১৮৯০ মেট্রিক টন।

বোরো ধান চাষি রহমান আলী জানান, এক সময় তিনি কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন মাছ ধরা কমে গিয়ে আয় কমে যেত। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। এরপর তিনি মাছ ধরার পাশাপাশি বছরের শুষ্ক মৌসুমে যখন কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে আসবে তখন জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। 

তিনি আরো জানান, তবে সেচ সংকট আর কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। পাশপাশি, নির্ধারিত সময়ের আগে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।

এরকম কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমির মংবাচিং মারমা, সমিরন তঞ্চঙ্গ্যা, সুমি বেগমসহ কয়েকজন কৃষক জানান, তারা অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বিশেষ করে জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হ্রদের এই জলে ভাসা জমিগুলো পলি ভরাট থাকার ফলে লাঙল ছাড়াই চাষাবাদ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া মাটি নরম থাকার ফলে পরিশ্রম যেমন কম হয় তেমনি চাষাবাদে খরচও অনেকটা সাশ্রয়ী হয়।

তবে কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদে জড়িত এসকল চাষিদের বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করে আসছে কৃষিবিভাগ। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি চাষিদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়ে থাকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল চাষিদের যারা জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে তাদের কৃষিবিভাগ থেকে সহযোগিতা করে থাকি।  প্রতিবছর বোরো মৌসুমে কাপ্তাই উপজেলায় জলে ভাষা ৪০ থেকে ৪৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়ে থাকে। এবং  আশা করছি, প্রতিবছরের মতো এবারো কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে ফসলের ব্যাপক ফলন হবে।

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রতিবছরই জলে ভাসা জমিতে ভালো ফলন হয়ে থাকে। চাষিরা যাতে জলে ভাসা জমিতে চাষ করে আরো ভালো ফলন করতে পারে, এজন্য তাদের বিভিন্নভাবে দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কাপ্তাই হ্রদে জেগে ওঠা জলে ভাসা জমিতে বোরো ধানের চাষ।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ