শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ || ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৬:১৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ইউরোপ যাচ্ছে বাগেরহাটের কাঠের সাইকেল

ইউরোপ যাচ্ছে বাগেরহাটের কাঠের সাইকেল
সংগৃহীত

বাগেরহাটে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কাঠের বেবি ব্যালান্স সাইকেল। চাকা থেকে শুরু করে এর পুরো কাঠামোই তৈরি কাঠ দিয়ে। এসব সাইকেল বাংলাদেশের কোনো বাজারে বিক্রি না হলেও সরাসরি যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে। এগুলোকে দেখে অবিকল খেলনা বলে মনে হলেও পরিবেশবান্ধব এ ‘বেবি ব্যালেন্স’ ইউরোপে ব্যবহার হচ্ছে দৈনন্দিনের যাতায়াতের বাহন হিসেবে।

কাঠ দিয়ে নিপুন হাতে বেবি ব্যালেন্স সাইকেলটি তৈরি করছেন বাগেরহাটে। স্থানীয় ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক মিলে প্রতিদিন তৈরি করেন অন্তত ৩০টি সাইকেল। কাঠের তৈরি সাইকেল যা চলে য়ায় যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। 

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ন্যাচারাল ফাইবার নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সাইকেল তৈরি ও রফতানি করে। শুধু এই সাইকেল নয়, কাঠ দিয়ে তারা তৈরি করছে সান বেড, হোটেল বেড ও কুকুর বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব আরো বেশকিছু আকর্ষণীয় ফার্নিচার। যার চাহিদা তৈরি হয়েছে বিশ্ববাজারে। প্রথমবারের মতো নিজ দেশের পণ্য ইউরোপের বাজারে রফতানি করতে পেরে খুশি শ্রমিকরা। এদিকে দেশীয় পণ্যের বিদেশের বাজারে রফতানি করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে চায় বিসিক কর্তৃপক্ষ।

কাঠ দিয়ে সাইকেল তৈরি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ তৈরি করছেন ফ্রেম, কেউ চাকা, কেউ আবার হ্যান্ডেল। এভাবেই তৈরি হচ্ছে কাঠের সাইকেল। সবশেষে শ্রমিকদের নিপুন হাতে কাঠের সাইকেলে দেওয়া হয় রং। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা কাঠ দিয়ে গত ছয়মাস ধরে তৈরি করা হচ্ছে এসব সাইকেল। এই কাজে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। প্রতিদিন এই কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে প্রায় ৪০টি সাইকেল। যার মূল ক্রেতা গ্রীসের বিখ্যাত কোকো মেট কোম্পানি। 

কারখানায় সুপার ভাইজান আব্বাস বলেন, আকাশমণি, মেহগনি ও গামারিসহ বিভিন্ন ভালো মানের কাঠ দিয়ে বিদেশি শিশুদের জন্য বেবি ব্যালেন্স সাইকেল তৈরি করি। এই সাইকেল তৈরি করতে দেড় থেকে দুইদিন লেগে যায়। সাইকেলটি তৈরি করতে ১১টি পার্টের প্রয়োজন হয়। কারখানার বিভিন্ন স্থানে পার্টগুলো তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট একটি স্থানে পার্টগুলোকে একত্রে করে একটি সাইকেলে রুপান্তরিত করা হয়। পরে রং করে বিদেশি শিশুদের জন্য তৈরি হয় বেবি ব্যালেন্স সাইকেল। 

কারখানায় নারী শ্রমিক রুপা সেন বলেন, আমাদের হাতে তৈরি করা সাইকেল বিদেশে যায়, এটাই আমাদের অনেক খুশি। এই কারখানায় কাজ করে যে, বেতন পাই তাতে আমার সংসার এবং ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া খরচ চলে। 

রংমিস্ত্রি মামুন শেখ বলেন, কারখানায় প্রতিদিন তৈরি করা হচ্ছে প্রায় ৩০টি সাইকেল। কাঠের সাইকেল তৈরির কাজগুলো করে আনন্দিত আমি। ভাবতেই অবাক লাগে আমার হাতের রঙের ছোঁয়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। আমাদের দেশে যদি এসব কাজের সুযোগ আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। 

ন্যাচারাল ফাইবার প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মুজাহিদ আহম্মেদ বলেন, আমরা সাধারণতো নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে পণ্য তৈরি করতাম। অতি সম্প্রতি ইউরোপের কাস্টমার পেয়েছি, যারা পরিবেশবান্ধব পণ্য বাজারজাত করতে আগ্রহী। যারা কাঠের কিছু প্রোডাক্ট নিতে চায়, তাদের কাছ থেকে কাঠের বেবি ব্যালেন্স সাইকেল অর্ডার পাই। তারা ৪০ হাজার পিস অর্ডার দিলে আমরা ২০ হাজার পিস এক্সপোর্ট করেছি। আরো ২০ হাজার পিস খুব দ্রুত পাঠানো হবে। 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বাগেরহাটের প্রমোশন অফিসে শরিফ সরদার বলেন, বিসিক শিল্প নগরীতে মুস্তাফিজুর রহমান সবসময়ই ইউনিক আইডিয়ায় কাজ করেন। বর্তমানে কাঠের সাইকেল তৈরি করে ইউরোপে রফতানি করছে। এর মাধ্যমে যে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে সেটা নয়, স্থানীয়ভাবে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। আমরা সব সময় উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে যাচ্ছি। এ ধরনের পণ্য বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম বাড়ে। দেশীয় পণ্য বিদেশের বাজারে রফতানি করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ