মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ || ২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১০ অক্টোবর ২০২০

৫০০ কোটি টাকার গেমিং পণ্যের বাজারে সাড়ে ৫ লাখ গেমার!

৫০০ কোটি টাকার গেমিং পণ্যের বাজারে সাড়ে ৫ লাখ গেমার!

এক প্রকার নীরবেই দেশে প্রযুক্তিপ্রেমীদের মাঝে বিপ্লব ঘটে গেছে। বিশেষ করে গেমারদের মধ্যে। হালে মোবাইলে গেম বেশি খেলা হলেও পিসি গেমিংয়েও দেশ এগিয়ে গেছে অনেক দূর। দেশের গেমাররা বিভিন্ন গেমিং টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। দেশ জয় করে বিদেশে যাচ্ছে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলতে। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে পিসি গেমারের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি। পেশাদার গেমারের সংখ্যাও বাড়ছে, বড় হচ্ছে দেশের গেমিং কমিউনিটি। এই কারোনাকালেও এসব থেমে নেই। গেম খেলার প্রবণতা বেড়েছে, বেড়েছে বিভিন্ন আয়োজনও।

দেশে পিসি গেমিং জনপ্রিয় হওয়া ও গেমারদের কমিউনিটি বড় হওয়ার পেছনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গেমিং ডিভাইসেরও বিশাল একটা ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে দেশের গেমিং ডিভাইসের বাজারের আকার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। প্রতি মাসে ৩৫-৪০ কোটি টাকার পণ্য ‍বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারকে বড় করার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন, গেমারস মিটআপ, গেমারদের পৃষ্ঠপোষকতাও করছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড।

পৃষ্ঠপোষক ও আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে পিসি গেমসে শীর্ষে রয়েছে রেইনবো সিক্স, ভ্যালোরেন্ট, ফোর্টনাইট, কাউন্টার স্ট্রাইক, ফিফা-২০২০, লেজেন্ড অব লিগ, ডোটা ইত্যাদি। আর মোবাইল গেমিংয়ে শীর্ষে রয়েছে পাবজি, ফ্রি ফায়ার ইত্যাদি।

গেমিং ডিভাইসে শীর্ষ স্থানে রয়েছে এমএসআই  ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডের ডিভাইসগুলোর মধ্যে রয়েছে— নোটবুক, মাদারবোর্ড, গ্রাফিকস কার্ড, মনিটর, মাউস,কি-বোর্ড,পাওয়ার সাপ্লাই, হেডফোন, গেমিং চেয়ার ইত্যাদি। দেশে এমএসআই  পণ্যের পরিবেশক ইউসিসি শুধু এসব পণ্য বিক্রি করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে না। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন, গেমার মিটআপ, গেমারদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন, গেমার দলকে নিয়মিতভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়াকে তারা নিজেদের অন্যতম দায়িত্ব বলে মনে করে।

দেশে এমএসআই  ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্যের পরিবেশক ইউসিসির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সারোয়ার মাহমুদ খান বলেন, ‘আমাদের গেমাররা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন অনলাইন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ভারত,থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মতো দেশে খেলতে যাচ্ছেন। এছাড়া দেশের শীর্ষ স্থানীয় গেম দল আরজি গেমিং, এমআরসিজেড, ভিটি গেমিং, ইনসটিংক্ট নামের গেমার দলগুলোকে নিয়মিতভাবে গেমিং চেয়ার, জার্সি, অ্যান্ট্রি ফি, হাত খরচ দিয়ে আমরা উৎসাহিত করার  চেষ্টা করি।’  তিনি জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর ঢাকার বাইরে গেমারদের নিয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করে থাকে। সেখানে নলেজ শেয়ারিং হয়। সর্বশেষ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় রংপুরে গত বছরের অক্টোবর মাসে। এ বছর করোনার জন্য সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান। তবে অনলাইনে গেমারদের মেন্টরিং, মিটআপ,গ্যাদারিং থেমে নেই।

তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে পেশাদার গেমারের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের বিভিন্ন কমিউনিটি রয়েছে। সেই কমিউনিটিতে গেম নিয়ে আলোচনা, ডিভাইস ব্যবহার করে তার ওপর রিভিউ প্রকাশ, বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া, গেমকে ও গেমিং ডিভাইসকে জনপ্রিয় করতে তাদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

প্রযুক্তি পণ্যের ব্র্যান্ড আসুস গেমিং ডিভাইসে বেশ জনপ্রিয়। এই ব্র্যান্ডের গেমিং ডিভাইসের দুটি ক্যাটাগরি রয়েছে, টাফ (টিইউএফ) আর আরওজি (রিপাবলিক অব গেমার) নামে। সম্প্রতি আরওজি ক্যাটাগরিতে জেড-ফাইরাস ডুয়ো মডেলের ল্যাপটপে রয়েছে দুটি স্ক্রিন বা ডিসপ্লে। সাড়ে চার লাখ টাকা দামের হলেও এই ল্যাপটপের প্রতি গেমারদের আগ্রহ তুঙ্গে। আসুসের টাফ সিরিজের পণ্য (ল্যাপটপ ও একসেসরিজ) নতুন গেমারদের জন্য এবং আরওজি পেশাদার গেমারদের জন্য বলে জানা গেলো।

আসুস গ্লোবালের ডিজিটাল ও পিআর বিশেষজ্ঞ নাফিজ ইমতিয়াজের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনার এই সময়ে সবাই ঘরে বসে আছেন। কেউ বাইরে বের হতে পারছেন না। ঘরে বসে থাকতে থাকতে তাদের যেন এক ঘেয়েমিতে পেয়ে না বসে, এজন্য আমরা একসঙ্গে চারটা গেমিং টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি। এর একটি মোবাইল গেমিং (পাবজি) ও পিসি গেম তিনটি। দুই মাস ধরে চলবে প্রতিযোগিতা। দুই লাখ টাকার প্রাইজমানিও রয়েছে এ জন্য। প্রতিটি গেমের টুর্নামেন্টের জন্য ৫০ হাজার টাকা প্রাইজমানি দিচ্ছি আমরা।’ তিনি জানান, এখন প্রতিযোগিতার নিবন্ধন চলছে। আসুস পিসি গেমিংয়ের ডিভাইস নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেও মোবাইল গেমারদের কথাও মাথায় রেখেছে। এবার থাকছে জনপ্রিয় মোবাইল গেম পাবজি।

নাফিজ ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমরা গেমিং নিয়ে এ ধরনের আয়োজনকে বলছি ই-স্পোর্টস। পেশাদার গেমাররাই মূলত এতে প্রধান ফোকাস। ই-স্পোর্টসে আমরা ২০২১ ও ২০২৪ সালকে ফোকাস করেছি। আমরা আশা করছি, এই দুই বছরে বাংলাদেশ ই-স্পোর্টসে দেশের জন্য অনেক ভালো ফল বয়ে আনবে।’ গেমারস অব বাংলাদেশ এ খাতের বড় একটি গ্রুপ বলে তিনি জানান। 

তিনি আরও বলেন, ‘ফেসবুকে এক জরিপের মাধ্যমে আমরা দেখেছি— দেশের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ পিসি গেমার রয়েছে।’ মোবাইল গেমারের কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পিসি গেমারের চেয়ে মোবাইল গেমারদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।

অপর গেমিং ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গিগাবাইটের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার খাজা মো. আনাস খান বলেন, ‘করোনাকালে গেমারদের উৎসাহ দিতে গেমারস মিট, ৬টি টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি।’ তিনি জানান, করোনাকালে গেমারদের গেম খেলার সময় বেড়েছে। দেশের গেমিং কমিউনিটি বেশ বড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দিন দিন এর আকার বড় হচ্ছে। গেমারদের কাছে গিগাবাইটের মাদারবোর্ড, গ্রাফিকস কার্ড, গেমিং চেয়ার, গেমিং মনিটর, মাউস সবসময়ই পছন্দের শীর্ষে।’ করোনাকালে এসবের চাহিদা আরও বেড়েছে বলে তিনি জানান।

এছাড়া জোটেক, সাফায়ার, ভিউসনিক, থার্মালটেক ইত্যাদি ব্র্যান্ড ‘গেমিং ব্র্যান্ড’ হিসেবেই পরিচিত। এসব ব্র্যান্ডের পণ্যও গেমারদের বেশ পছন্দ বলে প্রযুক্তি বাজার সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশে গেমারস অব বাংলাদেশ, লাইফ উইদ পিএস-ফোর গেমারস নামের গ্রুপ রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। রয়েছে আরজি গেমিং, এমআরসিজেড, ভিটি গেমিং ইত্যাদি নামের পেজ। গিগাবাইটের রয়েছে ক্লাব জি-ওয়ান আইটি নামের গ্রুপ। এখানে রয়েছে গিগাবাইট-প্রেমী গেমারদের মিলন মেলা। সূত্র আরও জানায়, এগুলো মূলত পেশাদার গেমারদের গ্রুপ। গেম সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ব্র্যান্ড এসব গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। এসবের বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে টিম তৈরি করে গেম খেলেন, যাতে পৃষ্ঠপোষকতা করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সন্তানরা। এরকম অন্তত দুটি টিমের সন্ধান পাওয়া গেছে। 

জানা যায়, গেমারদের সরকারি বা সাংগঠনিকভাবে সহায়তা করা হয় না। দেশের প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিসিএস বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন শহরে মেলার আয়োজন করে থাকে। সেসব মেলায় আয়োজকরা মেলা প্রাঙ্গণে গেম কর্নার বা গেমিং জোন রাখে। সেখানে পেশাদার ও সৌখিন গেমাররা ভিড় জমায়। যদিও সেসব পর্ব স্পন্সর করে গেমিং ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) যুগ্ম সম্পাদক মুজাহিদ আল বেরুনি সুজন বলেন, ‘বিসিএস’র নতুন ইসি কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পরে যে বিষয়গুলো অবহেলিত ছিল— সেগুলোকে ফোকাস করার চেষ্টা করছি। সমিতি এরইমধ্যে ১১টি বিষয় খুঁজে নিয়ে সেগুলোকে আরও কীভাবে জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায় সে কৌশলের খোঁজ করছে। এরমধ্যে একটি হলো দেশীয় গেমার। গেমারদের উন্নয়নের জন্য বিসিএস’র একটি টিম কাজ করছে।’ তিনি জানান, শিগগিরই গেমারদের নিয়ে কমিটির কাজ দৃশ্যমান হবে। গেমারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া, সরকারিভাবে কোনও সহযোগিতা করা যায় কিনা,সেসবও দেখবে বিসিএস। তিনি মনে করেন, গেমিং ডিভাইসের বাজার বড় হচ্ছে, কমিউনিটি বড় হচ্ছে। ফলে এখনই সময় এদিকে দৃষ্টি দেওয়ার।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিমাসে প্রযুক্তি বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার গেমিং ডিভাইস বিক্রি হয়। সে হিসাবে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার গেমিং ডিভাইস বিক্রি হয়। দিন দিন এই বাজার বড় হচ্ছে। বাজারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তৈরি গেমিং ল্যাপটপও পাওয়া যায়, যেগুলোর দাম ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত, দেশের বাইরে এরচেয়ে বেশি দামের ল্যাপটপও পাওয়া যায়।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনসুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কিবৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলাসবাই ঈদের নামাজে গেলে শাহনাজের ঘরে ঢুকে প্রেমিক রাজু, অতঃপর...