সুন্দরগঞ্জে ভিক্ষার পরিবর্তে ঈদ সামগ্রী পেলেন তারা
প্রতিদিন ভিক্ষার ঝোলা হাতে বেরিয়ে পড়েন সত্তর বয়সী বৃদ্ধা রমিজান। এক টাকা থেকে ৫ টাকা সর্বোচ্চ ভিক্ষা পান তিনি। সারাদিনের রোজগার বলতে দুই কেজি চাল আর একশ টাকা।
কোন দিন তাও জোটেনা রমিজানের ভাগ্যে। বৃদ্ধ স্বামী আর নাতিপুতি নিয়ে সামান্য আয়ে চলে যায় তাদের দিন। প্রতিদিনের মতো আজও ভিক্ষার ঝোলা হাতে বেরিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু ভিক্ষার পরিবর্তে পেলেন ঈদ সামগ্রী। শুধু রমিজান নয়, এমন শতাধিক ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করার ব্যতিক্রমী উদ্যােগ নিয়েছেন এক পোল্ট্রি চিকিৎসক।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ (কর্ণিপাড়া) এলাকার পোল্ট্রি চিকিৎসক ডা. একেএম এনামুল হক রুবেল ভিক্ষার পরিবর্তে ঈদ সামগ্রী উপহার দিচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে অন্তত শতাধিক ভিক্ষুকদের মাঝে এসব ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি। ডাক্তার এনামুল হক রুবেল উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের ইমামগঞ্জ (চৈতন্য বাজার) গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে। পেশায় তিনি বিশেষজ্ঞ প্রাণি চিকিৎসক।
শুক্রবার (৭ মে) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভিখারিদের ডেকে ঈদ সামগ্রী উপহার দিচ্ছেন তিনি। মীরগঞ্জ বাজারের এন আর এগ্রো ল্যাব নামে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভিক্ষা নিতে আসা দুস্থ ও অসহায় নারী-পুরুষের মাঝে ঈদের সামগ্রী বিতরণ করেন। এতে প্রত্যেককে সেমাই, চিনি, দুধ ও কিচমিচ দেওয়া হয়।
দুস্থ রমিজান বেগম বলেন, শুক্রবার করি মুই ভিক্ষা করবার বাড়াম। সবাই ১/২ টাকা করি দেয়। এই দোকানত ভিক্ষা চাবার আসি দেখোম তাই সেমাই-চিনি দিলে। এমার সেমাই-চিনি দিয়া হামার ঈদ হইবে। মনোয়ারা বেগম নামে আরেক বৃদ্ধা জানান, রোজা থাকি তো বেশি দুর ঘুরবার পাম না বাপো। সারাদিন দম (বিশ্রাম) নিয়া গ্রামত ঘুরি দুই-তিন কেজি চাউল আর ৫০-৬০ ট্যাকা পাম। তাকে দিয়া কোন রকম মোর পেট চলে। ঈদের সেমাই-চিনি কেনার মতো সামর্থ্য মোর নাই। আজকে বাবার দোকানোত ভিক্ষা নিবার আসি দেখোম ঈদের সেমাই-চিনি দিলে। এগলা দিয়া এবার ঈদ হইবে হামার।
ডাক্তার একেএম এনামুল হক রুবেল বলেন, আমি প্রতিবছর অনেক মানুষকে ঈদের সামগ্রী বিতরণ করি। কিন্তু এবার আমার মাথায় আইডিয়া আসলো ভিক্ষা করে সংসার চালানো মানুষ গুলোর ঈদের বাজার করার সামর্থ্য নেই, তাই তাদের জন্য কিছু করা দরকার। তাই আমার ল্যাবে ভিক্ষা চাইতে আসাদের ভিক্ষার পরিবর্তে তাদের প্রত্যেককে ঈদের বাজার করে দিচ্ছি। আমি এ পর্যন্ত একশ'রও বেশি মানুষকে দিয়েছি। আমার টার্গেট আরো দেড়শোর মতো মানুষকে দেয়ার।
দৈনিক গাইবান্ধা