বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

সুচিত্রা সেনের প্রয়াণ দিবস আজ, পাবনায় নানা কর্মসূচি

সুচিত্রা সেনের প্রয়াণ দিবস আজ, পাবনায় নানা কর্মসূচি

পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেন ওরফে রমা ওরফে কৃষ্ণা। যার অনবদ্য অভিনয় এবং অপরূপ সৌন্দর্য আজও দাগ কেটে আছে কোটি দর্শকের হৃদয়ে। অভিনয়গুণে যিনি হয়ে উঠেছিলেন দুই বাংলার চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের কাছে মহানায়িকা।

সেই মহানায়িকার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এদিন তার জন্মস্থান পাবনায় রোববার (১৭ জানুয়ারি) তার ৮ম প্রয়াণ দিবস পালিত হলো নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে।

সকালে শহরের গোপালপুর মহল্লায় হিমসাগর লেনে মহানায়িকার পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আয়োজনে তার ভাস্কর্যে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান সঞ্জীব কুমার ভাটিসহ সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যরা।

পরে পাবনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা। সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি এম সাইদুল হক চুন্নু’র সভাপতিত্বে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার রাজশাহী সঞ্জীব কুমার ভাটি।

সভায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষক ড. মো. হাবিবুল্লাহ, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ মধু, প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে সুচিত্রা সেনের গান ও উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মহানায়িকার প্রয়াণ দিবস পালন করে।

সুচিত্রা সেন পাবনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (বর্তমানে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন ভারতে চলে যান এবং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন ওই সময়ের মহাকালী পাঠশালায়, যেটি বর্তমানে পাবনা টাউন গার্লস হাইস্কুল।

তার বাবা পাবনা পৌরসভায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদ থেকে অবসর নেন এবং ৫০ দশকে সপরিবারে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িটি প্রথমে শত্রু সম্পত্তি এবং পরে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকে।

১৯৮৭ সালের দিকে বাড়িটি জামায়াত পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয়া হলে সেটি তারা দখলে রাখেন। জামায়াতের দখল থেকে বাড়িটি মুক্ত করে এটি মহানায়িকার সংগ্রহশালা বা স্মৃতিকেন্দ্র করার দাবিতে সাংবাদিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে নামেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাড়িটি দখলমুক্ত হলে সেটি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে জেলা প্রশাসনের হেফাজতে দেয়। এখন শত শত নারী-পুরুষ প্রতিদিন বাড়িটি দেখতে আসেন।

সম্প্রতি বাড়িটিতে দর্শনার্থীদের দেখার জন্য ভিডিও প্রজেকশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ির চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে সুচিত্রা সেনের ভাস্কর্য। সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি সংস্কার করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ছোট পরিসরে স্মৃতি সংগ্রহশালা করা হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে সুচিত্রা সেন স্মৃতি আর্কাইভ বা সংগ্রহশালাসহ বাড়িটি আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন পাবনার সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার বালিগঞ্জে স্বেচ্ছা নির্বাসনে প্রায় তিন যুগ লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী। অনেক দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।

পাবনার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রমা বনেদি পরিবারের বধূ হয়ে ঘর-সংসারের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। কিন্তু এটি মুক্তি পায়নি। ১৯৫৩ সালে নায়িকা হিসেবে তার প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ মুক্তি পায়। এর পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় রমা নাম বদলে রাখেন ‘সুচিত্রা সেন’।

১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত টানা অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন। স্বামীর প্রবল আপত্তি থাকলেও মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন তিনি। ৫৬টি বাংলা ও হিন্দি ৭টি মিলিয়ে ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হন এই স্বপ্নসুন্দরী। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন তিনি।

১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন সুচিত্রা সেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। এ ছবিতে তার নায়ক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ২০০৫ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহণ করেননি।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ