শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২০ মে ২০২০

সিগারেটসহ সব তামাকপণ্যের উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় সাময়িক বন্ধ

সিগারেটসহ সব তামাকপণ্যের উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় সাময়িক বন্ধ

সিগারেটসহ সবধরনের তামাকজাতদ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও বিতরণ সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।

বুধবার (২০ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যসহায়ক পরামর্শক কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘সিগারেটসহ সবধরনের তামাকপণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ বন্ধের নির্দেশনা, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় নেয়া হয়। আজ শিল্প মন্ত্রণালয় মিটিং করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কিছু সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

যে সেক্টর থেকে ২৩ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা আয় হয় সেখানে একদিনের মাথায় এত বড় সিদ্ধান্তের ফলে রাজস্ব আয়ে প্রভাব ফেলবে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে বিপণন সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। যেহেতু সিগারেট করোনা রোগের সাথে সম্পৃক্ত তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও ইতোপূর্বে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা সে নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগেও তামাকজাতীয় পণ্য যেমন- ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোসহ সকলকে বিপণনসহ সবকিছুর বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। যেহেতু আমাদের বিশাল একটা রাজস্ব তাদের কাছ থেকে সরকার পেয়ে থাকে। নীতিগতভাবে বলতে গেলে, রাজস্ব বন্ধ করে তারপর তাদেরকে বলতে পারি। দ্বৈতনীতি তো হতে পারে না। কিন্তু আজকের পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় এটা একটি প্রেসক্রিপশন। এটা এখন একটা ওষুধের প্রেসক্রিপশন। যেহেতু এ মুহূর্তে তামাকজাত পণ্য আরও ক্ষতিকারক বিধায় সরবরাহ-বিপণন সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

কতদিন পর্যন্ত এটা কার্যকর থাকবে— জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সেটা সময় হোক, আমরা পরে বসে সিদ্ধান্ত নেব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই মিলে রিভিউ করে সিদ্ধান্ত নেব।

এর আগে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চায়। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ সই করা এক চিঠিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এ সহায়তা চান।

চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে। ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং কাশিজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণা পর্যালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়াও গবেষণা দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ধূমপায়ীর মৃত্যুঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি।

এতে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাময়িকভাবে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, সীসা বার, উন্মুক্তস্থানে পানের পিক ফেলার মতো বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সরকার কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ক্রমবর্ধমান কোডিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের তামাক কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ অনুমতিপত্র প্রদান করা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।

চিঠিতে বলা হয়, জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাস করতে প্রণীত সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এ সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে বাজার, গণজমায়েত সাময়িকভাবে বন্ধ, দেশের অভ্যন্তরে একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনার অজুহাতে এ আইন লঙ্ঘন করে চলেছে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এগিয় নিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর ৩ কোটি ৭৮ লাখ তামাক সেবন করে (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০১৭) ও তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক লোক মারা যায় (দ্য টোবাকো এটলাস, ২০১৮)।

তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয়ের চাইতে তামাকজনিত রোগব্যাধির চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে এবং এর আলোকে ২০১৩ সালে ‘ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ এর সংশোধনী পাশ ও ২০১৫ সালে বিধিমালা জারি করেছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত সাউথ এশিয়ার স্পিকার্স সামিট ২০১৬ এর সমাপনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে করোনা ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তামাক কোম্পানিকে দেয়া অনুমিত প্রত্যাহারসহ সকল তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য চিঠির শেষ অংশে অনুরোধ করা হয়েছে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু