ট্রেন দুর্ঘটনা
যাত্রীবেশে চিকিৎসা নেন সেই ঘাতক চালক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের পর ঘাতক ট্রেন তূর্ণা নিশীথার চালকরা যাত্রীবেশে হাসপাতালে চিকৎসা নেন। এরা হলেন- (লোকোমাস্টার) তাহের উদ্দিন (৫৫) ও সহকারী চালক অপু দে (৩৫)।
জানাযায়, আহত যাত্রীর বেশে অ্যাম্বুলেন্সে করেই আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে আসেন আন্তঃনগর মহানগর তূর্ণা নিশীথার চালক (লোকোমাস্টার) তাহের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দে। হাসপাতালের কেবিনেই অবস্থান করছিলেন তারা। পরে সুযোগ বুঝে হাসপাতাল ছেড়ে যান উভয়েই।
রাতেই তারা ঢাকায় ফিরে তদন্ত কমিটির মুখোমুখী হন। বুধবার সকালে পূর্বাঞ্চলীয় রেলের তদন্ত কমিটির কাছে জবানবন্দি দিতে চট্টগ্রামের পথে ঢাকা ছাড়েন বলে জানা গেছে।
সকালে ঢাকা থেকে ছেড় আসা চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের (ঢাকা) চালক শরীফুল ইসলাম (৪৫), আবু তাহের (৫০) এবং সহকারী চালক মো. ইদ্রিস আলী (৪০) তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক তাহের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু’দের ছবি দেখে নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের খোঁজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে জানা যায়, পুরুষ কেবিনে দু’জন ব্যক্তি ভর্তি রয়েছেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একই বেডে দু’জন ব্যক্তি শুয়ে আছেন।
আপনারা কি ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন- এমন প্রশ্নে প্রথমে কোনো জবাব মিলেনি। একই প্রশ্ন একাধিকবার করার পর মেলে উত্তর। একপর্যায়ে অপু দে বলেন, প্লিজ, আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের একা থাকতে দিন।
নাম ঠিকানা জানতে চাইলে অপু দে বলেন, তিনি ভোলার বাপদা গ্রামের বাসিন্দা কৃপাচার্য্য দে’র ছেলে। অপরজন তার বাড়ি মানিকগঞ্জ বলে জানান।
এ সময় তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেন, ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন তারা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। এর বেশি কথা বলতে নারাজ উভয়ই। তবে কথা বলার সময় তাহের উদ্দিন তার হাত দিয়ে বার বার কপাল চাপরাচ্ছিলেন। তখন তাদের ভীষণ হতাশাগ্রস্ত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মনে হচ্ছিল।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে তাদের বহনকারী আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত একাধিক ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়ার উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুলেন্সে করে আখাউড়ায় নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই দু’জন আখাউড়া হাসপাতালে ছিলেন। তবে ওরা যে তূর্ণা নিশীথার চালক (লোকোমাস্টার) তাহের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দে আমি বুঝতে পারিনি। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়ার পর ওদের নাম ঠিকানা মিডিয়াতে জানাজানি হলে পরে তা বুঝতে পারি।
এ বিষয়ে ঢাকা লোকোসেড ইনচার্জ (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মো. আলাউদ্দিন বলেন, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের দুই চালক তাহের উদ্দিন ও অপু দে মঙ্গলবার রাত ১০টায় তদন্ত কমিটির কাছে হাজির ছিলেন। বুধবার সকাল ১০টায় তাদের দু’জনকে চট্টগ্রাম তদন্ত কমিটি ডেকে পাঠিয়েছে। চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য সকালেই ঢাকা ছেড়েছেন তারা।
গত মঙ্গলবার ভোর রাত পৌনে ৩টার দিকে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়।
দৈনিক গাইবান্ধা