শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১১:১১, ৭ মে ২০২১

মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?

মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?

সুরা যারিয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা মানুষ এবং জিন জাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন মর্মে ঘোষণা দেন। যেন মানুষ জীবনের প্রতিটি কাজই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)

আজ ২৪ রোজার প্রস্তুতির তারাবিহ পড়বে রোজাদার মুমিন মুসলমান। আজকের তারাবিহতে পড়া হবে সুরা যারিয়াত, তুর, নঝম, ক্বামার, রাহমান এবং ওয়াক্বিয়াসহ সুরা হাদিদ। এসব সুরায় মানুষের জন্য তৈরি করা মহান রবের অসংখ্য নেয়ামতরাজির বর্ণনাসহ অনেক সতর্কবার্তাও তেলাওয়াত হবে হাফেজে কুরআনদের কণ্ঠে। সে সঙ্গে ২৭তম পারার তেলাওয়াত শেষ হবে। সংক্ষেপে সুরাগুলোর আলোচ্য বিষয় তুলে ধরা হলো-

সুরা যারিয়াত : আয়াত ৩১-৬০

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। একত্ববাদ, নবুয়ত ও হাশরের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে সুরাটিতে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত এবং হাশরের ময়দানের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এ সুরায় মানবজাতিকে আল্লাহ তাআলা শুধু ইবাদত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন সে ঘোষণাও রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)

আল্লাহ তাআলা মানুষের কাছে জীবিকা চান না। চান শুধু ইবাদত-বন্দেগি ও আনুগত্য। এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে। আবার যারাই আল্লাহর হুকুম পালন তথা অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে তাদের কঠিন পরিণতির কথা বর্ণনায় শেষ হবে সুরা যারিয়াত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَا أُرِيدُ مِنْهُم مِّن رِّزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَن يُطْعِمُونِ - إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ

‘আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে। আল্লাহ তাআলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৭-৫৮)

فَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذَنُوبًا مِّثْلَ ذَنُوبِ أَصْحَابِهِمْ فَلَا يَسْتَعْجِلُونِ - فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا مِن يَوْمِهِمُ الَّذِي يُوعَدُونَ

‘অতএব, এই জালেমদের প্রাপ্য তাই, যা ওদের অতীত সহচরদের প্রাপ্য ছিল। কাজেই ওরা যেন আমার কাছে তা তাড়াতাড়ি না চায়। অতএব, কাফেরদের জন্যে দুর্ভোগ সেই দিনের, যেদিনের প্রতিশ্রুতি ওদেরকে দেয়া হয়েছে।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৬০)

সুরা তুর (৪৯)

সুরা তুর মক্কা অবতীর্ণ হয়। এ সরায় তিনটি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। আর তাহলো-

> পরকালীন জীবনের সত্যতার বর্ণনা।

> সত্যদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে কঠের সতর্কবাণী ও হুশিয়ারি।

> পরকালীন জীবনে সত্য-সাধকদের জন্যে পুরস্কারের শুভ সংবাদ।

এছাড়াও মুমিনের ঈমানের মজবুতির জন্য তাওহিদ, রেসালাত এবং কেয়ামাতের ভয়াবহতার আলোচনা রয়েছে এ সুরায়।

সুরা নঝম (৬২)

সুরা নঝম মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত ও রেসালাতের প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি কথাই যে মানবজাতির জন্য অনুসরণীয়, সে ঘোষণাও এসেছে এ সুরায়।

বিশেষ করে বিশ্বনবির পবিত্র জবান থেকে যা বের হয় তা শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহি, তাও বলা হয়েছে।

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্য নবি হওয়া এবং তাঁর প্রতি অবতীর্ণ ওহিতে সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ না থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। অতপর মুশরিকদের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

সুরা ক্বামার (৫৫)

এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। সুরাটিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বিশেষ মুযেজার উল্লেখ রয়েছে। যা বিশ্বনবি নবুয়তের  দলিল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।

সুরা ক্বামারের অন্যতম আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-

> ক্বিয়ামাত নিকটবর্তী হওয়ার ঘোষণা।

> তাওহিদ এবং রেসালাতের দলিল প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।

> ঈমান এবং নেক আমলের জন্য পুরস্কারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আল্লাহর নাফরমানির শাস্তি সম্পর্কেও সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।

সুরা রাহমান (৭৮)

মাদিনায় অবতীর্ণ শ্রুতিমধূর ও ব্যাপক পরিচিত ও তিলাওয়াতকৃত সুরা আর রহমানে দুনিয়া ও আখিরাতের আল্লাহর অনন্ত অসীম নিয়ামাতের বর্ণনা করা হয়েছে। এ সুরার মূল বক্তব্য হলো-

> বিশ্বলোকের গোটা ব্যবস্থাপনা এক আল্লাহর ছাড়া আর কারো কতৃত্ব নেই;

> গোটা বিশ্বলোকের ব্যবস্থাপনা পূর্ণ ভারসাম্যের সঙ্গে ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কোনোভাবে এ ভারসাম্য বিনষ্ট হবে না;

> আল্লাহ তাআলার কুদরত ও বিস্ময়কর কার্যকলাপের কথা বলার সঙ্গে মানব-দানবরা আল্লাহর যে নিয়ামাত ভোগ করছে, তার দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে;

> মানুষ ও জিন জাতিকে তার কর্মের হিসাবের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এ সুরায় পৃথিবীর নাফরমান মানুষ ও জিনের মর্মান্তিক পরিণতির কথা বলা উল্লেখ করা হয়েছে।

> মানব ও দানবদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে, পরকালকে ভয় করেছে, তাদেরকে প্রদেয় নিয়ামাতের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হয়েছে এ সুরায়।

সুরা ওয়াক্বিয়া (৯৬)

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। আল্লাহ তাআলার অনন্ত অসীম শক্তি ও অপূর্ব মহিমার বিস্তারিত বিবরণ স্থান পেয়েছে সুরা ওয়াক্বিয়ায়। বিশেষ করে পরকালে মানুষের সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি অবশ্যই ভোগ করতে হবে।

জন্মের ন্যায় মৃত্যু যেমন সত্য, ঠিক মৃত্যুর ন্যায় পরকাল, হাশরের ময়দানে পুনরুত্থানও সত্য। যার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে এ সুরায়। সর্বোপরি এ সুরার শেষে আখিরাতের আলোচনা বর্ণনা করা হয়েছে।

সুরা হাদিদ (২৯)

মদিনায় অবতীর্ণ সুরা হাদিদে ইসলামি শরিয়তের বুনিয়াদি বিধি-নিষেধ এবং মৌলিক আক্বিদা তথা তাওহিদ সম্পর্কে হিদায়াত রয়েছে এবং উত্তম চরিত্র অর্জনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ সুরার মূল বক্তব্য হলো-

> বিশ্বজগৎ এক আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি ভূ-মণ্ডল ও নভোমণ্ডল সব কিছুর একচ্ছত্র অধিপতি। সবকিছুই তার কর্তৃত্বাধীন। তাঁর কর্তৃত্বের কোনো কিছুতেই শরিক নেই।

> সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য; আল্লাহর দ্বীনকে কায়েম করার জন্য মানুষের কর্তব্য হলো- আত্মত্যাগের পরিচয় দেয়া।

> দুনিয়ার ধন-সম্পদ, সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী বিষয়। দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের সম্বল সংগ্রহে ব্যয় করাই কল্যাণকামী মানুষের কর্তব্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ