পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই মারিয়ামের (আ.) সন্তান জন্মদানের ঘটনা
হজরত মারইয়াম (আ.) এর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অতি অলৌকিক ঘটনা ছিল ব্যতিক্রম এক দৃষ্টান্ত। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তাদের কাহিনীতে অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে। এগুলো তো কাল্পনিক কাহিনী নয়। বরং কোরআন হচ্ছে পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী ও প্রত্যেক বস্তুর বিস্তৃত বিবরণ এবং মুমিনদের জন্য হেদায়ত ও রহমত।’ (সূরা: ইউসুফ, আয়াত: ১১১)।
ইমরান (আ.) এর কন্যা মারইয়াম (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা সতীত্ব ও পবিত্রতার উচ্চ আসনে বসিয়েছিলেন। তার সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, ‘ইমরান কন্যা মারইয়াম তার লজ্জাস্থানকে পবিত্র রেখেছে। অতঃপর আমি তাতে আমার পক্ষ থেকে রূহ (জীবন) ফুঁকে দিলাম। সে তার পালনকর্তার বাণী ও কিতাবসমূহকে সত্যে পরিণত করলো। বস্তুত: সে অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।’ (সূরা: আত তাহরীম, আয়াত: ১২)।
পুরুষের স্পর্ষ ছাড়াই মারিয়ামের (আ.) সন্তান জন্মদানের ঘটনা:
ফেরেশতারা হজরত মারইয়ামকে নেক সন্তানের সুসংবাদ দিলেন। সন্তান জন্মদানের সুসংবাদ পেয়ে আল্লাহর কাছে আরজি পেশ করলেন, এ কী করে সম্ভব! যখন কোনো মানুষ (পুরুষ) আমাকে স্পর্শ করেনি। এ আরজির সমাধানে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন’
قَالَتْ رَبِّ أَنَّى يَكُونُ لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ قَالَ كَذَلِكِ اللّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاء إِذَا قَضَى أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
‘তিনি বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোনো মানুষ স্পর্শ করেনি। বললেন এ ভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন কোনো কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন যে, ‘হয়ে যাও’ অমনি তা হয়ে যায়।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: আয়াত: ৪৭)।
আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ:
হজরত মারইয়াম বললেন, হে আমার প্রভু! কিভাবে আমার সন্তান হবে, অথচ কোনো (পুরুষ) মানুষ (সহবাসছলে) আমাকে স্পর্শ করেনি! বৈধ পন্থায় পুরুষ ব্যতিত সন্তান জন্মগ্রহণ করতে পারে না। অতএব, আমি বুঝতে পারি না যে, শুধু আল্লাহর কুদরতে পুত্র জন্মগ্রহণ করবে, না কি আমাকে বিবাহের আদেশ দেয়া হবে?
আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের মাধ্যমে উত্তরে বললেন, পুরুষ ছাড়া এমনিভাবেই সন্তান হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা করেন, তাই সৃষ্টি করেন। কোনো মাধ্যম অথবা বিশেষ উপকরণের প্রয়োজন হয় না তাঁর। কোনো কিছু সৃষ্টির জন্য তাঁর ইচ্ছাই যথেষ্ট। বরং তার ইচ্ছার পন্থা এই যে, তিনি যখন কোনো বস্তু পয়দা করতে চান, তখন বলেন, ‘কুন’ সৃষ্টি হয়ে যাও; তখনই ’ফাইয়াকুন’ বা সৃষ্টি হয়ে যায়। (মারেফুল কোরআন)।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা:
আয়াতে উল্লেখিত হজরত মারইয়ামে বিস্ময় যথার্থ। তাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আর সাধারণত পুরুষের স্পর্শ ছাড়া সন্তান জন্মদানও সম্ভব নয়। সে অর্থে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, আমার সন্তান এটা কীভাবে সম্ভব!
তবে আল্লাহর কুদরতের কাছে পুরুষের স্পর্শ ছাড়া সন্তান জন্মদান একেবারেই সম্ভব। এটা এমন কোনো দুরূহ ব্যাপার নয়। কেননা তিনি বাবা-মা ছাড়া হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও হাওয়া আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন তিনি স্বাভাবিক অবস্থার ও সূত্রসমূহের ধারা শেষ করে ‘কুন’-এর নির্দেশ দ্বারা মুহূর্তের মধ্যেই তা বাস্তবায়ন করেন।
সে কথা ব্যক্ত করতেই আল্লাহ তায়ালা বলেন, কাজালিকা অর্থাৎ এভাবেই পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই হয়ে যাবে। স্বাভাবিক অবস্থার বিপরীত বলে তুমি বিস্মিত ও আশ্চর্য হইও না।
ঈমানদারদের মনে রাখতে হবে-
আল্লাহ তায়ালা যা চান, যখন চান, যেভাবে চান তিনি সেভাবেই কার্য সম্পাদন করে থাকেন। কেননা তাঁর ক্ষমতার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তিনি কোনো কাজের ইচ্ছা করলেই তার কুদরতে তা হয়ে যায়। কেননা তিনি কোনো মৌল পদার্থের মুখাপেক্ষী নন এবং তিনি আসবাব-উপকরণেরও অধীন নন।’ (তাফসিরে ওসমানি)।
উল্লেখ্য, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে তার ক্ষমতা, শক্তি ও সৃষ্টির কৌশল দেখিয়েছেন। তিনি বাবা-মা ছাড়া মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি হলেন হজরত আদম আলাইহিস সালাম।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা মানুষ থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ বাবা-মা ছাড়া হজরত আদমের পাঁজরের হাড় থেকে তার স্ত্রী হজরত হাওয়া আলাইহিস সালামকেও সৃষ্টি করেছেন।
অতঃপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের মাধ্যমে স্বাভাকি প্রক্রিয়া রীতিতে জোড়া জোড়ায় নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন।
তারপর তিনি পুরুষ ছাড়া শুধু নারী থেকেও মানুষ সৃষ্টি করে তাঁর ক্ষমতা ও শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আর এ সব কার্য সম্পাদন তাঁর কাছে কঠিন কোনো বিষয় নয়। যা তিনি হজরত মারইয়ামের মাধ্যমে সংঘটিত করে হরজত ঈসা আলাইহিস সালামকে দুনিয়াতে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন।
এ সবই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার কুদরতের নিদর্শন।
দৈনিক গাইবান্ধা