শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩১ মে ২০২০

পুরুষ বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি ভ্যাসেকটমি

পুরুষ বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি ভ্যাসেকটমি

ভ্যাসেকটমি বা পুরুষকে কীভাবে স্থায়ীভাবে সন্তান জন্মদানে অক্ষম করতে হয় তা কি আমাদের জানা আছে? গত প্রায় কয়েকদশক ধরেই পুরুষকে স্থায়ীভাবে সন্তান জন্মাদানে অক্ষম করার এই পদ্ধতি চালু রয়েছে।

কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষই এই ব্যাপারে জানেন। এই পদ্ধতিটির চিকিৎসাগত নাম ভ্যাসেকটমি। আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ভ্যাসেকটমি খুবই কম আগ্রাসী ও কম ক্ষতিকর একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শুধু ছোট্ট একটি অপারেশন বা সার্জারি করে একজন পুরুষকে স্থায়ীভাবে সন্তান জন্মদানের জন্য নারীর জননাঙ্গে বীর্য নিঃসরণে অক্ষম করে দেওয়া হয়। শুক্রাণু অণ্ডকোষ থেকে মূত্রাশয়ে যাওয়ার নালীগুলো কেটে দেওয়া এই পদ্ধতিতে।

একজন পুরুষের দুটি অণ্ডকোষেই শুক্রাণু উৎপাদিত হয়। এরপর সেসব শুক্রাণু একটি নালী দিয়ে মূত্রাশয় হয়ে জননাঙ্গ দিয়ে বের হয়ে আসে। ওই নালীগুলো কেটে ফেলার পর দুটো অণ্ডকোষই স্টিচ বা সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই কাজটি করার সময় অণ্ডকোষেও একটু ছোট কাটা-ছেঁড়া করতে হয়।

প্রথমদিকে এই পদ্ধতিটিই অনুসরণ করা হত। তবে ১৯৭৪ সালে এক চীনা সার্জন আরো উন্নত পদ্ধতিতে ভ্যাসেকটমি করার পন্থা উদ্ভাবন করেন। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতির নাম নো-স্ক্যালপেল ভ্যাসেকটমি। এই পদ্ধতিতে খুবই ছোট্ট ছিদ্র করে অণ্ডকোষদ্বয় থেকে মূত্রাশয়ে শুক্রাণু চলাচলের নালী দুটো কেটে ফেলা হয়। এতে কোনো সেলাইও লাগে না। আর ছিদ্রটি নিজে নিজেই সেরে যায়।

এই পদ্ধতিটিই গত ৪০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সবচেয়ে বেশি। কারণ এতে রক্তপাত ও ব্যথা হয় খুবই কম।

ভ্যাসেকটমি অপারেশন করতে মাত্র ১৫ থেকে ৩০ মিনিটি সময় লাগে। ইউরোলজিস্টরা একজন অ্যানেসথেসিস্ট এর সহায়তায়ই এই অপারেশন করতে পারেন সহজে। এর জন্য অত বড় অপারেশন থিয়েটার বা টেবিলও দরকার হয় না।

তবে ভ্যাসেকটমি করানোর সঙ্গে সঙ্গেই একজন পুরুষ সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়েন না। কারণ তখনও মূত্রাশয়ে শুক্রাণু থেকে যেতে পারে। সুতরাং বীর্যে শুক্রাণুর হার একেবারে শুন্যে নেমে না আসা পর্যন্ত অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ এড়াতে সাবধান থাকতে হবে। এর জন্য বীর্যস্খলনের সময় নিয়মিতভাবে বীর্যে শুক্রাণুর হার কত তা পরীক্ষা করাতে হবে।

ভ্যাসেকটমি করানোর অন্তত দুই মাস পরে গিয়ে বা ১০ থেকে ২০ বার বীর্য নিঃসরণের পরে গিয়ে শুক্রানু আর থাকে না। এরপর আর কন্ডোম ছাড়াও যৌন মিলন করলেও আর সন্তান উৎপাদন হবে না। জীবনে আর কখনো জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্য কোনো পদ্ধতিও অবলম্বন করতে হবে না।

শুক্রাণু উৎপাদন ব্যহত হয় না!

ভ্যাসেকটমি করানোর পরও অণ্ডকোষে শুক্রাণু উৎপাদন চলতে থাকে। প্রাত্যহিক কাজ হিসেবেই দেহ এই শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া জারি রাখে। কিন্তু নালী কেটে ফেলায় এখন আর শুক্রানু বের হয়ে আসতে পারে না। এই যা। আপনি যতদিন চাইবেন ততদিন এই বের না হয়ে আসা অব্যাহত রাখা যাবে।

বের না হতে পারলে উৎপাদিত শুক্রাণু যায় কোথায়?

ভ্যাসেকটমি করানোর পর অণ্ডকোষে উৎপাদিত শুক্রাণু একটা সময়ের পর দেহ শুষে নেয়।

পুরুষালী জীবনীশক্তিও অক্ষত থাকে!

পুরুষদের পুরুষালী সব বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী হলো টেস্টোস্টেরন নামের একটি হরমোন। একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে ভ্যাসেকটমি করানোর পর টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ কমে যায়। কিন্তু এই ধরণাটি ঠিক নয়। ভ্যাসেকটমি করানোর পরও আগের মতোই স্বাভাবিকহারেই টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ হয় পুরুষদের দেহে। আরও বিস্ময়ের বিষয় হলো এতে যৌনশক্তিরও কোনো ক্ষয় হয় না। এবং যৌনাকাঙ্খাও কমে না। পুরুষের লিঙ্গোত্থান এবং বীর্য নিঃসরণের হারও ভ্যাসেকটমির পরও আগের মতোই স্বাভাবিক থাকে।

ভ্যাসেকটমি এবং এসটিআই

ভ্যাসেকটমি এবং এসটিআই বা যৌনতাবাহিত রোগের মধ্যেও কোনো যোগসাজশ নেই। এর মূল উদ্দেশ্য হলো শুক্রাণু বের হতে না দেওয়া। সতুরাং ভ্যাসেকটমি করানোর পর যদি কারো যৌনতাবাহিত কোনো রোগ হয় তার জন্য ভ্যাসেকটিমিই দায়ী এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। যৌনতাবাহিত রোগ ঠেকানোর জন্য নিরাপদ যৌনমিলন পূর্বশর্ত।

শুক্রাণুবাহী নালীগুলো পুনরায় জোড়া দিয়ে সন্তান জন্মদেওয়াও সম্ভব!

ঠিকই শুনেছেন। ভ্যাসেকটমি করানোর সময় অণ্ডকোষ থেকে শুক্রাণুবাহী নালীগুলো কেটে ফেলার বহু বছর পরও সেগুলো জোড়া লাগিয়ে চাইলে আপনি পুনরায় সন্তান জন্মদানে নিজের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারবেন। ফের জোড়া লাগানোর পর একবার নালীগুলো শুক্রানু চলাচলের জন্য পরিষ্কার হয়ে গেলেই পুনরায় আপনি সন্তান জন্মদানে সক্ষম হবেন। এভাবে পুনরায় জোড়া লাগানোর পর মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভধারণের নজির দেখা গেছে।

ঝুঁকি কম

অন্য আর যে কোনো সার্জারি বা অপারেশনের তুলনায় ভ্যাসেকটমিতে ঝুঁকি অনেক কম। তবে অণ্ডকোষের যেখানে ফুটো করা হবে সেখানে ফুলে যাওয়া বা জখম হতে পারে।

এছাড়া অণ্ডকোষে ইনফেকশন বা সংক্রমণ, নালী দিয়ে শুক্রাণু লিক করা বা উপচে পড়া, নালীগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।

ভ্যাসেকটমি করানোর পর একজন পুরুষ মাত্র এক সপ্তাহ বা এমনকি মাত্র ১-৩ দিন পরই পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে বা কাজে ফিরে যেতে পারেন।

খরচও কম!

ভ্যাসেকটমি শব্দটি শুনে অনেকেরই মনে হতে পারে এটি একটি হাই-প্রোফাইল মেডিকেল টার্ম। এতে হয়তো এই ধারণাও হতে পারে যে, এটি বুঝি খুবই ব্যয়বহুল। কিন্তু নাহ! এটি একদমই ব্যয়বহুল নয়।

এবং আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেন তারচেয়ে এর খরচ অনেক কম।

নারীদের টিউবাল লাইগেশনের মাধ্যমে বন্ধাকরণ পদ্ধতির চেয়ে ভ্যাসেকটমির খরচ পাঁচগুণ কম!

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু