শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

দুর্নীতির বরপুত্র হলেন তারেক রহমান

দুর্নীতির বরপুত্র হলেন তারেক রহমান
তারেক রহমান- দুর্নীতির রাজপুত্র কিংবা বরপুত্র। যার সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট কল্পকথাকেও হার মানিয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়া ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠপুত্র এখন থানা হাজতে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদেশে টাকা পাচারসহ অভিযোগের পাহাড় জমে আছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তারেক রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে বনানীর হাওয়া ভবনে বসে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশাপাশি তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে নেপথ্যে সরকারি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেন। এ সময় থেকে তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবনকে ঘিরে দলের তরুণ নেতা ও ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়। তারেক রহমানের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের সদস্যরাও তার নাম ব্যবহার করে শত শত কোটি কোটি কামিয়ে নেন। ক্ষমতা চিরদিনের নয়- তারেক রহমান এ কথা ভুলে গিয়েছিলেন। তারেক রহমান ১৯৮৭ সালে প্রথম মামা মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার ও বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে ডান্ডি ডায়িং লিমিটেডের মাধ্যমে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। পরে তিনি ডান্ডি ডায়িং থেকে পৃথক হয়ে বন্ধু মামুনকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কোকো লঞ্চসহ নামে-বেনামে একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তারা। পাশাপাশি নেপথ্যে থেকে তিনি দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও ভূমিকা রাখছিলেন। ফলে ২০০১ সালের নির্বাচনে তার সুপারিশে দলের বেশ কয়েকজন তরুণ ও ব্যবসায়ী দলীয় মনোনয়ন পান। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পরে তার সুপারিশে কয়েকজনকে মন্ত্রীসভার সদস্য করা হয়। তরুণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার করতেন। মোটা অংকের সরকারি সব ক্রয় তারেক রহমানের মাধ্যমে করতে হয়েছে। বন্ধু মামুনসহ আরও বেশকিছু বন্ধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তিনি নানা ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলেন। মামুনের নামে যে ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে তার নেপথ্যে মালিকও তারেক রহমান বলে জানা গেছে। জোট সরকারের শুরুতে তারেক রহমানের দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও সরকারে হস-ক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ২০০২ সালের প্রথমদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে তাকে মনোনীত করা হয়। এরপর থেকে তারেক রহমানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বনানীর হাওয়া ভবনে নিয়মিত বসতেন। সেখানে তিনি ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও নিয়োগ দেন। তারা দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতেন। বিদ্যুতের খাম্বাসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সরকারের বড় বড় কেনাকাটা- সবই তারেক রহমানের মাধ্যমে হয়েছে। তারেক রহমান ব্যবসায়ী বন্ধুদের মাধ্যমে বিনা প্রতিযোগিতায় সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন। এমনকি মোটা অংকের টাকা মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করতে গিয়ে ধরা পড়েন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ টাকা হিসেবে মালয়েশীয় সরকার তা বাজেয়াপ্ত করেছে বলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেন। তারেক রহমানের পাশাপাশি হাওয়া ভবনের অনেক কর্মকর্তাও তাকে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন প্রশাসনে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় তারা প্রভাব বিস-ার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। পাঁচ বছরে অনেকে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। ঢাকা শহরে একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে যান তারা। আবার হাওয়া ভবনকে ঘিরে দলের তরুণ নেতাদের একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। তারা তারেক রহমানকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন। পৈতৃক বাড়ি হিসেবে তারেক রহমান বগুড়ায় প্রথম দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। পরে আসে- আসে- সারাদেশে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যাপৃত করেন। এভাবে সারাদেশে দলের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এতে দলের সিনিয়র নেতারা ক্ষুব্ধ হন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) অলি আহমদ দীর্ঘদিন ধরে তারেক রহমানসহ দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিকার না পেয়ে অলিসহ দলের বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি এলডিপিতে চলে যান। তারেক রহমান শুধু ঢাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম করেননি, বগুড়ায় ব্যাপক নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তিনি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। বগুড়ায় তারেক রহমানকে ঘিরে নেতাকর্মীরা খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়ে। চিহ্নিত অপরাধী ও সামজবিরোধীদের সঙ্গে তারেকের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মেলে ১৯৯ পৃষ্ঠার তারেক রহমান শীর্ষক ছবির অ্যালবাম ও কিছু আলোকচিত্রে। বগুড়ায় উন্নয়নের নামে লুটপাট করে তারেকের অনুসারীরা পাঁচ বছরে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে যান। তারেকের স্বেচ্ছাচারিতার অনেক নজির রয়েছে বগুড়ায়। তারেকের পছন্দ না হওয়ায় বগুড়ার পুরনো শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন অগ্রাহ্য করে নতুন আঙ্গিকে শহীদ মিনার গড়া হয়। তারেক প্রশ্রয়ে হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এবং চম্পামহল নিয়ন্ত্রণ করত বগুড়া। মন্ত্রী, সাংসদ কিংবা সরকারি কর্মকর্তা না হয়েও তিনি সরকারের অসংখ্য প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করে সীমাহীন অনিয়ম ও ধৃষ্টতার পরিচয় দেন। বিডিনিউজ ডটকম জানায়, ‘দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি। এজন্য যদি জেলখানায় যেতে হয়, যাব।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান এভাবেই বিডিনিউজকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারির শেষদিন তারেকের সঙ্গে একান্ত কথাবার্তায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি শহীদ জিয়াউর রহমানের ছেলে। যারা বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরোধী, তারাই ওইসব অপপ্রচার করে। আপনি মন্ত্রী, সচিব যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন, আমি কাউকে কোন কাজের জন্য টেলিফোন করেছি। কেউ বলতে পারবেন না। আমার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার ষড়যন্ত্রমূলক।’ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদরা যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হওয়া শুরু করলে তারেক রহমান ২৭ জানুয়ারি থেকে আর বনানীর হাওয়া ভবনে আসেন না। তিনি শহীদ মইনুল সড়কের বাসাতেই ছিলেন। ওই সময় থেকে বাসার বাইরে কোথাও বেরোননি।   ফিরে দেখা ০২

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ