বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

জেনে নিন নেটওয়ার্কিং এর আদ্যোপান্ত (পর্ব-২)

জেনে নিন নেটওয়ার্কিং এর আদ্যোপান্ত (পর্ব-২)

যান্ত্রিক এ জীবনে এক মুহূর্তও যেন কম্পিউটার ছাড়া চিন্তা করা যায় না। কেননা যেকোন কঠিন কাজই কম্পিউটার নাম যন্ত্রটি তুড়িতেই সমাধান করে ফেলে। আর এ কারণেই দিনে দিনে কদর বাড়ছে এটির।

এছাড়া বিশ্বায়নের এ যুগে ঘরে বসেই যেন নজরে রাখতে হয় পৃথিবীতে কী হচ্ছে। আর ঘরের মাঝেঘে বন্দি বোকা বাক্স নামক টেলিভিশনটি যেন যেসব তথ্য দিতে একেবারেই অক্ষম। যার কারণে ইন্টারমুখী হয়ে গেছি আমরা। তবে এই ইন্টারনেটেরও রয়েছে কিছু মারপ্যাঁচ। যাকে আমরা কম্পিউটারের ভাষায় বলে থাকি নেটওয়ার্কিং।

নেটওয়ার্ক ক্যাবল
এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারের ডাটা পাঠানোর জন্য যে ক্যাবল ব্যবহার করা হয় থাকে তাকে নেটওয়ার্ক ক্যাবল বলা হয়। নেটওয়ার্কিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করা হয়।

• কোএক্সিয়াল ক্যাবল
• ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল
• ফাইবার অপটিক ক্যাবল

কোএক্সিয়াল ক্যাবল
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে (LAN) কোএক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। কোএক্সিয়াল ক্যাবল বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- ৫০ওহম (আরজি-৮, আরজি-১১ আরজি-৫৮), ৭৫ ওহম(আরজি-৫৯) এবং ৯৩ ওহম(আরজি-৬২)। ক্যাবলটি তামার তৈরি বলে ইএমআই সমস্যা রয়েছে। এটির দাম অনেক কম।

ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল
ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দুই দরনের হয়ে থাকে।
• শিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল: শিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে প্রতিটি ট্যুইস্ট জোড়া থাকে একটি করে শক্ত আচ্ছাদনের ভেতর। ফলে ইলেকট্রিক ইন্টারফারেন্স অনেক কম থাকে। এই ক্যাবলের ডাটা ট্রান্সফার স্পীড ৫০০ এমবিপিএস হয়ে থাকে।

• আনশিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল: আনশিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে পেয়ারের বাইরে অতিরিক্ত কোন শিল্ডিং থাকে না কেবল বাহিরে একটি প্লাষ্টিকের জেকেট থাকে। এই ক্যাবলের ডাটা ট্রান্সফার রেট ১৬ এমবিপিএস।

ফাইবার অপটিক ক্যাবল
এই ক্যাবটি তামার তারের বদলে কাচকে মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে এতে কোন ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স নেই। এই ক্যাবলের ডাটা ট্রান্সমিশন স্পীড অনেক বেশী। ফাইবার অপটিক ক্যাবল দুই ধরনের হয়ে থাকে। সিঙ্গল মোড ফাইবার ও মাল্টিমোড ফাইবার। এই প্রধান অসুবিধা হলো দাম অনেক বেশী এবং ইনস্টল করা কঠিন।

 

 

 

রিপিটার
রিপিটার হলো এমন একটি ডিভাইস যা সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ১৮৫ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করার আগেই একটি রিপিটার ব্যবহার করে সেই সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করে দিলে সেটি আরো ১৮৫ মিটার অতিক্রম করতে পারে। এটি কাজ করে ওএসআই মডেল এর ফিজিক্যাল লেয়ারে।

 

 

 

হাব
হাব একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যার মাধ্যমে কম্পিউটারসমূহ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কম্পিউটারের সংযোগ সংখ্যার উপর হাবের ক্ষমতা নির্ভর করে। হাবের মধ্যে অনেকগুলো পোর্ট থাকে। ডেটা প্যাকেট একটি পোর্টে আসলে এটি অন্য পোর্টে কপি হয় যাতে সব সেগমেন্ট প্যাকেটসমূহ দেখতে পারে। স্টার টপোলজির ক্ষেত্রে হাব হচ্ছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস।

 

সুইচ
সুইচ একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যেটি নেটওয়ার্কের মধ্যে সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন ও বিভিন্ন পেরিফেরিয়াল ডিভাইসসমূহ সংযুক্ত থাকে। হাবের সঙ্গে সুইচের পার্থক্য হলো সুইচ প্রেরক প্রান্ত  থেকে প্রাপ্ত ডেটা প্রাপক কম্পিউটারের সুনির্দিষ্ট পোর্টটিতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু হাব ঐ ডেটা সিগন্যাল প্রাপক কম্পিউটারের সবগুলো পোর্টেই পাঠায়।

 

 

 

ব্রিজ
ব্রিজ একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এটি অনেকটা সুইচ বা হাব এর মতো । এক্ষেত্রে পার্থক্য হলো- হাব বা সুইচ একই নেটওয়ার্কের বিভিন্ন নোডকে সংযুক্ত করে অন্যদিকে ব্রিজ একাধিক ছোট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে।

 

 

 

রাউটার
এক নেটওয়ার্ক থেকে আরেক নেটওয়ার্কে ডাটা পাঠানোর পদ্ধতিকে বলা হয় রাউটিং। আর রাউটিং এর জন্য ব্যবহুত ডিভাইস হলো রাউটার। এটি LAN, MAN এবং WAN এ তিন ধরণের নেটওয়ার্কেই কাজ করে। ইহা ওএসআই মডেল এর নেটওয়ার্ক লেয়ারে কাজ করে।

 

 

 

গেটওয়ে
গেটওয়ে ভিন্ন প্রটোকল বিশিষ্ট নেটওয়ার্ক সমুহকে সংযুক্ত করে। ভিন্ন নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করার সময় গেটওয়ে  প্রটোকল ট্রান্সলেশন করে থাকে। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইস যেমন– হাব, সুইচ এবং রাউটার ইত্যাদি ডিভাইসসমূহ প্রটোকল ট্রান্সলেশনের সুবিধা দেয় না।

 

 

 

ওএসআই মডেল (OSI Model)
কম্পিউটার ও অন্যান্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগ কীভাবে গড়ে উঠবে তা নির্দেশ করে OSI মডেল। ওএসআই মডেল সাধারণত সাতটি লেয়ার এর সমন্বয়ে  গঠিত।

এই লেয়ার সমুহকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। Upper Layer (আপার লেয়ার) এবং Lawyer Layer (লোয়ার লেয়ার)। এপ্লিকেশন, প্রেজেন্টেশন এবং সেশনকে বলা হয় Upper Layer এবং ট্রান্সপোর্ট, নেটওয়ার্ক, ডাটালিঙ্ক এবং ফিজিক্যালকে বলা হয় Lawyer Layer। আপার লেয়ার সমুহ অ্যপ্লিকেশন রিলেটেডে এবং লোয়ার লেয়ারসমূহ হার্ডওয়ার রিলেটেডে কাজ করে।

• ফিজিক্যাল লেয়ার (Physical Layer): এটি OSI মডেল এর সর্বনিন্ম লেয়ার। এ লেয়ারের প্রধান কাজ হল বিভিন্ন ডিভাইস এর সঙ্গে ফিজিক্যল সর্ম্পক স্থাপন করা। ফিজিক্যল ডিভাইস এর মাধ্যমে ডাট এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইস স্থানান্তর করে। এই লেয়ারে ডাটাসমূহ সধারণত বিট আকারে বিভিন্ন ফিজিক্যল মাধ্যমের মধ্য দিয়ে স্থনান্তর হয়।

• ডাটালিঙ্ক লেয়ার (Datalink Layer): এটি OSI মডেল এর দ্বিতীয় স্তর। এ স্তর ফিজিক্যাল লিঙ্কের মাধ্যমে প্রেরক ও গ্রাহক সিস্টেমের মধ্যে ত্রুটি মুক্ত ভাবে ডাটা বা উপাত্ত স্থানান্তর এর  কাজ করে থাকে। যেহেতু ফিজিক্যাল স্তর কোন প্রকার অর্থবোধক কাঠামো ছাড়াই উপাত্তকে বিট আকারে প্রেরক হতে গ্রাহক সিস্টেমে স্থানান্তর করে। তাই ট্রান্সমিশন লাইনে চলমান অবস্থা এই সকল উপাত্তে যে কোন প্রকার ভুল ত্রুটি হতে পারে। ডাটালিঙ্ক স্তর এই কাঠামো বিহীন ডাটা বিট সমুহকে গ্রহন করে ত্রুটি মুক্তভাবে স্থানান্তর করে। 

• নেটওয়ার্ক লেয়ার (Network Layer): এটি OSI মডেল এর তৃতীয় স্তর। এই স্তর নেটওয়ার্ক ভুক্ত প্রেরক ও গ্রাহক সিস্টেমের মধ্যে লজিক্যালি সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই স্তর প্রেরক প্রান্তে ট্রান্সপোট লেয়ার হতে প্রাপ্ত উপাত্তকে প্যাকেটে বিভক্ত করে এবং গ্রাহক প্রান্ত হতে প্রাপ্ত ডাটাকে উপাত্তে পরিণত করে। এই স্তর ডাটা রাউটিং এর কাজ করে। এছাড়া এটি IP Address(আইপি এড্রেস) নিয়ে কাজ করে।

• ট্রান্সপোর্ট(Transport Layer): এটি OSI মডেল এর চতুর্থ লেয়ার। ট্রান্সপোট লেয়ার এর কাজ হল সঠিকভাবে ডাটা প্যাকেট সরবরাহ করা। এছাড়া ডাটা প্যাকেটের সঠিক ক্রম, ডাটার উপস্থিতি ও ডাটার ডু্প্লিকেট রোধের কাজ সমুহ এই লেয়ার করে থাকে।  তাছাড়া কোন ডাটা যদি প্যাকেট এর চেয়ে বড় হয়, তাহলে পাকেট কে ভেঙ্গে ছোট ছোট খন্ডতে বিভক্ত করে আবার জোড়া দেয়া এর কাজ। ডাটাকে ভাঙ্গা এবং জোড়া দেওয়াকে বলা হয় ফ্রাগমেন্টেশন এবং ডি-ফ্রাগমেন্টেশন। 

• সেশন লেয়ার (Session Layer): এটি OSI মডেল এর পঞ্চম স্তর। এই স্তর সাধারণত নেটওয়ার্কের ভিন্ন ভিন্ন হোস্ট সমুহের মাঝে কানেকশন সেটআপ এবং টারর্মিনেশন এর কাজ করে থাকে। এছাড়া ডায়ালগ কন্ট্রোল (dialogue control) এর কাজও করে থাকে। যখন কোনো ডিভাইস সংযোগ গড়তে চায় তখন সেশন লেয়ার জেনে নেয় কোন ডিভাইস এই কম্যুনিকেশনে অংশ নেবে এবং কী পরিমাণ ডাটা একসঙ্গে পাঠাবে, কতক্ষণ পর পর পাঠাবে একে বলা হয় ডায়ালগ কন্ট্রোল।

• প্রেজেন্টেশন লেয়ার (Presentation Layer): এটি OSI মডেল এর ষষ্ঠ স্তর। প্রেজেন্টেশন লেয়ার মূলত ডাটার ফরমেট পরিবর্তন করে। অর্থাৎ ডাটা ট্রান্সলেটর হিসেবে কাজ করে। নেটওয়ার্কে ডাটার ফরমেট পিসির ফরমেট থেকে আলাদা হতে পারে। এটি নেটওয়ার্ক ও পিসির চাহিদা মোতাবেক ডাটা পরিবর্তন বা ট্রান্সলেটর এর কাজ করে থাকে। 

• অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার (Application Layer): এটি OSI মডেল এর সর্বশেষ লেয়ার। এপ্লিকেশন লেয়ার ইউজার ইন্টারফেস প্রদান করে এবং নেটওয়ার্ক ডাটা প্রসেস করে।এই লেয়ার সাধারণত ব্যবহারকারী ও নেটওয়ার্কের মধ্য একটি উইনডো হিসাবে কাজ করে। এর কাজ হল ব্যবহারকারীর অ্যাপ্লিকেশনকে সরাসরি সার্পোট করে এমন সব সার্ভিস প্রদান করা।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ