বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ || ৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১০ অক্টোবর ২০২০

ঘরে কিংবা কাপড়ে প্রাণীর ছবি : ইসলাম কী বলে?

ঘরে কিংবা কাপড়ে প্রাণীর ছবি : ইসলাম কী বলে?

ঘর, পরিধেয় কাপড়, আসবাবপত্র কিংবা সাজ-সজ্জায় অনেক সময় ছবি আঁকা থাকে। অনেকে নিজেদের ছবিসহ পশু, পাখি ছবি দিয়ে ঘর সাজিয়ে থাকেন। আবার অনেকে এসব ছবি আঁকেন। এভাবে ছবি দিয়ে ঘর সাজানো, ছবি আঁকা সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা কী?

ঘরের সাজ-সজ্জ্বা কিংবা পরিধেয় বা ব্যবহৃত কাপড়ে প্রাণীর ছবি ব্যবহার করা কিংবা প্রাণীর ছবি আঁকার কাজ করা সম্পর্কে ইসলামের রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে কিংবা সাজ-সজ্জ্বায় কোনো প্রাণীর ছবি রাখা কিংবা আঁকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

ছবি আঁকার শাস্তি
- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাবুক যুদ্ধ) থেকে ফিরে এসেছেন। আমি আমার ঘরে পাতলা কাপড়ের পর্দা লাগিয়েছিলাম। তাতে ছিল (প্রাণীর) অনেকগুলো ছবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, ‘কেয়ামতের দিন সে সব মানুষের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির (প্রাণীর) অনুরূপ তৈরি করবে।’ (বুখারি)

- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি বালিশ তৈরি করেছিলাম। যেন তা একটি ছোট গদী। এরপর তিনি আমার ঘরে এসে দুই দরজার মাঝখানে দাঁড়ালেন এবং তাঁর চেহারা মলিন হয়ে গেল। তখন আমি বললাম- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কি অপরাধ হয়েছে? তিনি বললেন, এ বালিশটি কেন? আমি বললাম, আপনি এর উপর ঠেস দিয়ে বসতে পারেন এ বালিশটি সে জন্য আমি তৈরি করেছি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আয়িশা! তুমি কি জান না? যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না! আর যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে! তাকে (আল্লাহ্) বলবেন, ‘তুমি যে প্রাণীর ছবি বানিয়েছ, এখন তাতে প্রাণ দান কর।’ (বুখারি)
- হজরত হুমাইদি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, একবার আমরা মাসরুকের সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমায়রের ঘরে ছিলাম। মাসরুক ইয়াসারের ঘরের আঙ্গিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেন, আমি হজ্ত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুনেছি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, ‘(কেয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে।’ (বুখারি)

প্রাণহীন ছবি আঁকা
- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি সাঈদ ইবনে আবুল হাসান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল-
‘হে আবু আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বলেন, (এ বিষয়) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি বলতে শুনেছি,-
‘যে ব্যক্তি কোনো ছবি তৈরি করে আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দেবেন, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর তাতে সে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না।’
(এ কথা শুনে) লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সব জিনিসে প্রাণ নেই, তা তৈরি করতে পার।’ (বুখারি)

ঘরে ছবি থাকলে যা হয়
- হজরত ইবনে মুকাতিল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
‘যে ঘরে কুকুর থাকে আর প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না।’ (বুখারি)

- হজরত সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জিবরিল আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাক্ষাত না করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘আমরা ওই ঘরে প্রবেশ করি না; যে ঘরে ছবি ও কুকুর থাকে।’ (বুখারি)

হাদিসের উল্লেখিত বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, প্রাণ আছে এমন জীব-জন্তুর ছবি আঁকা কিংবা ঘরে লাগানো যাবে না। যদি কেউ ছবি আঁকে কিংবা ঘরে টানিয়ে রাখে তবে, ওই ব্যক্তির জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। আর ঘরে ছবি থাকলে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঘরে কিংবা ঘরের আসবাবপত্র বা সাজ-সজ্জ্বায় প্রাণী কিংবা কুকুরের ছবি না টানানো। কাপড়ে কিংবা কাঠে কোনো প্রাণীর ছবি না বানানো। ঘরে কোনো প্রাণী বা যে কোনো ছবি থাকলে তা সরিয়ে ফেলা। হাদিসের উপর আমল করা। আর ঘরে বিচরণ করবে রহমতের ফেরেশতা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ছবি আঁকা থেকে বিরত থাকার এবং ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি টানানো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনসুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কিবৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলাসবাই ঈদের নামাজে গেলে শাহনাজের ঘরে ঢুকে প্রেমিক রাজু, অতঃপর...