গাইবান্ধায় ৯২ নির্মাণ শ্রমিক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জ থেকে নৌ-পথে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে আসা ৯২ জন ব্যক্তিকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দুইটি চরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রায়হান দোলন বৃহস্পতিবার (০৯ এপ্রিল) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে চরাঞ্চলের মানুষ করোনাভাইরাস কী, কিভাবে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয় এ সম্পর্কে তেমন জানেন না। সংক্রমিত লোক এসব এলাকার লোকজনের সংস্পর্শে এলে ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
নদী ভাঙনে নিঃস্ব ও অভাব অনটের শিকার হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক সহ¯্রাধিক বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজে নিয়োজিত আছে।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বেকার হয়ে পড়ে। এসব বেকার লোকজন রাতের আধারে সড়ক পথে ট্রাক ও নৌপথে নৌকা যোগে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। বুধবার (৮ এপ্রিল) রাতে ফুলছড়ি উপজেলা প্রশাসনের কাছে খবর আসে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে দুইটি নৌকা যোগে চরাঞ্চলীয় ফুলছড়ি ও ফজলুপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু মানুষ বাড়ি ফিরছে।
এরপর থেকেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন তৎপর হয়ে উঠেন। ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ফুলছড়ি থানার ওসি কাওছার আলী, ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মন্ডল সহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে তিনি মাঠে নেমে পড়েন।
বৃহস্পতিবার ভোরে শ্রমিকদের বহন করা নৌকা দুইটি ব্রহ্মপুত্র নদের সাঘাটা উপজেলার সীমানায় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। এরপর থানা পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ফুলছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা ৬৪ জনকে টেংরাকান্দি এম.এ সবুর দাখিল মাদ্রাসায় ও ফজলুপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ২৮ জনকে খাটিয়ামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
ফুলছড়ি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবক মনোয়ার হোসেন বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন নয়। করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় এ সম্পর্কে তারা খুব একটা জানেন না। সংক্রমিত কেউ গোপনে এলাকায় এসে মানুষের সংস্পর্শে এলে ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই স্বেচ্ছাসেবকরা শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয় অবগত করে এবং শ্রমিকদের রাখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে।
ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মন্ডল জানান, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপরেও যদি নতুন করে কেউ এলাকায় আসে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
বাড়ি ফেরত শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন বলেন, সংক্রমিত এলাকা থেকে লোকজন আসার খবর পেয়ে থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে সারা রাত চরাঞ্চলে অবস্থান করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন প্রস্তুত করি।
বৃহস্পতিবার ভোরে শ্রমিকরা নৌকাযোগে ঘাটে ফিরলে স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় দুইটি স্থানে ৯২ জনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়। কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষগুলোর খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
দৈনিক গাইবান্ধা