শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

গাইবান্ধায় মরিচের বাম্পার ফলন

গাইবান্ধায় মরিচের বাম্পার ফলন

রাতের অন্ধকার কাটিয়ে ভোরবেলা সূর্যের আলোর ঝিলিকে চকচক করে চরের দানাদানা বালুকণাগুলো। পাখির কিচির-মিচির শব্দেই ঘুম ভাঙ্গে এখানকার মানুষগুলোর। শুরু হয় দিনের পথচলা। সাতসকালেই গৃহবধূরা ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজে ব্যস্ত আর পুরুষেরা ক্ষেতখামারে। এ চিত্র গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের সর্বত্র।

অনেকেই ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন বিভিন্ন শস্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে। কেউবা আবার গরুর দুধ বিক্রি করেই হয়েছেন লাভবান। তমনি কাচাঁ মরিচ চাষেও সাফল্য এনেছেন এখানকার অনেকেই।‘কাঁচা মরিচের ঝাঁজেই, অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে’। শুধু তাই নয় মরিচের পাশাপাশি অনেকেই আবার গম, ভুট্টা, আদা, পেঁয়াজ, রসূন ও ইরি ধানও বুনেছেন। চলতি বছর গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ইউনিয়ন ফজলুপুরের খাটিয়ামারি গ্রামে বিদেশি জাতের মরিচ গাছ লাগিয়েছেন অনেকেই। ফলনও ভাল হয়েছে। তারা জমিতে পরিমাণ মতো গোবর সার ব্যবহার করেই এ সাফল্য এনেছেন।

মরিচ চাষী গোলজার হোসেন পূর্বপশ্চিমকে বলেন, তার দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ওই দুই বিঘা জমি থেকে কাঁচা মরিচ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণ বর্তমান বাজারে কাঁচা মরিচের মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬ থেকে ৭শ’ টাকা দরে। সে হিসেবে দাম হচ্ছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। আবার ওই মরিচেই যদি শুকানো যায় তাহলে ২৫ থেকে ৩২ মণ শুট মরিচ হবে। পুরনো শুকনো মরিচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।

সে হিসাব অনুযায়ী দাম হচ্ছে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। তবে কাঁচা মরিচ শুকনো করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় কৃষকদের। তাই অনেক কৃষক কাঁচা মরিচেই বিক্রি করে দিচ্ছেন আর ওই টাকা দিয়ে ভুট্টা ও ইরি ধানের আবাদ করতে পাচ্ছেন। ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাহাজুল ইসলাম পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ভাদ্র মাসের শেষে এবং আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহে মরিচ চাষের উপর্যুক্ত সময়। পৌষ-মাঘ মাসেই মরিচ বিক্রি করতে পারবে কৃষকরা। ফাল্গুন মাসে পুরোদমে মরিচ বাজারের উঠতে শুরু করে।

চলতি বছরে জেলার ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে ৭০০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ হয়েছে। মরিচের ফলনও হয়েছে বাম্পার। ওই কাঁচা মরিচ বিক্রির টাকায় চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান কৃষি অফিস। এদিকে পরিপক্ক মরিচ জমিতে থাকতেই অনেক কৃষক আগাম বিঘাকে বিঘা মরিচের টাল (ক্ষেত) ৬০ থেকে ৭০ হাজার বিক্রি করে দিচ্ছে। সেই বিক্রিত টাকায় ওই কৃষকরা ভুট্টা ও ইরি ধানের আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। অনেকে মরিচ চাষ করে লাখপতি বনে গেছেন। অপরদিকে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, জামালপুর, ঢাকা থেকে বিভিন্ন কোম্পানি ও আড়দের লোকরা (মরিচের ব্যাপারীরা) চরাঞ্চলে এসে মরিচের ক্ষেত দেখেন।

যেসব মরিচ চাষি মরিচের ক্ষেত বিক্রি করতে ইচ্ছুক তাদের আবাদকৃত প্রতি বিঘা জমি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় আগাম কিনে নিচ্ছেন। কিছু দিন পর তাদের লোকজন এসে ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে নিয়ে যাবে। শুধু গোলজার হোসেন নয়, তার মত একই গ্রামের আরও শতাধিক কৃষক এবার মরিচ চাষ করেছেন। গাইবান্ধার সবচেয়ে বড় মরিচের হাট ফুলছড়ি। এই হাটটি নদী সংলগ্ন হওয়ায় প্রচুর মরিচের আমদানী হয়। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ হাটে কাঁচা মরিচ কিনতে আসেন নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, রংপুর, জয়পুরহাট থেকে মরিচের ব্যাপারিরা। কারণ হিসেবে তারা জানান, ফুলছড়ির চরাঞ্চলের মরিচগুলোর ঝাল বেশি।

প্রতি হাটে প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন হাটের ইজাদার। সে হিসেবে প্রতি হাটে শুধু মরিচেই বিক্রি হচ্ছে ৫ লাখ টাকার মত। গজারিয়া ইউনিয়নের গলনাচর গ্রামের জয়নাল আবেদীন জানান, সার কম ব্যবহার হবে অথছ লাভজনক এমন ফসল হিসেবে চাষিরা মরিচ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি নিজেও এবার দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। তিনি আরও জানান, মরিচের ফলন ভাল হয়েছে এবার। দামও একটু বেশি। মরিচ বিক্রি করে গত বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে এবার।

যাদের জমি নেই তারাও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে মরিচ চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অনেকে আবার হয়েছেন লাখপতি। ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাহাজুল ইসলাম বলেন, লক্ষমাত্রা ছিল ৬শ’ ৬৪ হেক্টর কিন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার চলতি মৌসুমে ফুলছড়ি উপজেলায় ৭০০’শ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ করেছে কৃষকরা। মরিচের ফলনও হয়েছে বাম্পার। 

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু