মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ || ৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

গবেষণা: হাই কমোড ব্যবহারে বাড়ছে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি

গবেষণা: হাই কমোড ব্যবহারে বাড়ছে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি

মাত্র দু'দিন আগেই মারা গেছেন ব্ল্যাক প্যান্থার খ্যাত হলিউড অভিনেতা চ্যাডউইক বোসম্যান। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে কোলন ক্যান্সারে মারা যান তিনি। এত কম বয়সে দুরারোগ্য এক রোগে অভিনেতার মৃত্যু বেশ নাড়া দিয়েছে তরুণ সমাজে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে আলোচনাও করছেন।   

অনেকে আবার জানেনও না কোলন ক্যান্সার কি। এর আগে ২০১৩ সালে আমাদের দেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, চলচিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ মারা যান এই ক্যান্সারে। তখন একবার এই বিষয়ে মানুষের কৌতূহল দেখা গিয়েছিল। আগে সবার ধারণা ছিল বেশি বয়স হলেই বুঝি ক্যান্সারে হবে। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে তরুণদের মধ্যে।    

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স কমছে। তারা আরো বলছেন, সাধারণত পুরুষ ও কৃষ্ণাঙ্গরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। বয়স ৫০ পেরুলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অবশ্য ইদানিং অল্প বয়সে আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) জানায়, দেশে মোট জনসংখ্যার তিন দশমিক পাঁচ ভাগ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশে এই রোগে মৃত্যুর হার তিন দশমিক পাঁচ ভাগ।  দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ, অতিমাত্রায় ফাস্টফুড খাওয়া, হাই কমোড ব্যবহারের কারণে এই রোগ দিন দিন বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।  

২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, সাত লাখ ৪৬ হাজার পুরুষ নতুন করে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, যা মোট ক্যান্সার রোগীর ১০ ভাগ। নারীদের মধ্যে ছয় লাখ ১৪ হাজার নতুন রোগী পাওয়া গেছে, যা ক্যান্সার আক্রান্ত নারীর মধ্যে ৯ দশমিক দুই ভাগ। এর মধ্যে উন্নত দেশের  ৫৫ ভাগ নাগরিক এই রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান ও ধরন নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে প্রায় একই।   
 
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, তাদের এখানে এই ক্যান্সার নির্ণয়ের ব্যবস্থা আছে। 

হেলথ রাইটস মুভমেন্ট ন্যাশনাল কমিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ইউরোপে যে কয় ধরনের ক্যান্সার আছে, তার মধ্যে কোলন অন্যতম। এর মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট, ফুসফুস, প্রোস্টেট, কোলন ক্যান্সার। ইউরোপে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য স্ক্রিনিংয়ের একটা প্রোগ্রাম আছে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে কোলন ক্যান্সার হয়েছে কিনা, প্রতিবছর দেখাতে হয়। আমাদের দেশে কোলন ক্যান্সারের ব্যাপারে এত উদ্যোগ নেই। তবে সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে কোলন ক্যান্সারের মাত্রাটা তুলনামূলক কম। 

এবার জেনে নিন এই ক্যান্সারের ধরণ, কারণ, উপসর্গ এবং নিরাময়ের উপায়-  

কোলন ক্যান্সারের কারণ

প্রাথমিকভাবে কোলন ক্যান্সার নির্ণয় অত্যন্ত কঠিন। কেননা প্রথমদিকে রোগটির তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। তবে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএস'এর তথ্য অনুযায়ী, কোলন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায় না। তবে কিছু কিছু বিষয় এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেগুলো হলো:   

> কোলন ক্যান্সারে ভুগতে থাকা প্রতি ১০ জনের ৯ জনের বয়সই ৬০ বা তার চেয়ে বেশি।

> অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। 

> অতিরিক্ত ওজন যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

> যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা হলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

> মদ্যপান ও ধূমপান কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

> পরিবারের কোনো সদস্যের যদি ৫০ এর কম বয়সে কোলন ক্যান্সার হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তিরও ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।

> প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণায়। গবেষণাটি ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তেহরানের ১০০ জন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ

এনএইচএস'এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী কোলন ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ তিনটি। সেগুলো হলো: 

> মলের সঙ্গে রক্ত নির্গত হয় সাধারণত পাকস্থলীর কার্যক্রমে পরিবর্তন হলে। 

> পাকস্থলীর কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন। এরকম সময়ে রোগী সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি মলত্যাগ করে এবং মল অপেক্ষাকৃত তরল হয়ে থাকে।

> তলপেটে ক্রমাগত ব্যাথা, পেট ফোলা বা অস্বস্তি বোধ করা। এই উপসর্গের সঙ্গে সাধারণত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, খাওয়ার রুচি হারানো বা ওজন হারানোর সংশ্লিষ্টতা থাকে।

> এছাড়া ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগ করার পরও বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা হওয়া বা রক্তে আয়রনের স্বল্পতার মত উপসর্গও দেখা যায় কোলন ক্যান্সারে। 

কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা এক কথায় অপারেশন। অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেয়া হয়। তবে অপারেশনের সময় রেডিওথেরাপির ব্যবহার এখনো গবেষণাধীন। যেকোনো ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি শব্দ বিশ্বে বহুল প্রচলিত, তা হলো মাল্টিডিসিপিলিনারি আপ্র্যোস। অর্থাৎ সার্জন, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ক্যান্সার কেয়ার নার্সসহ সকলের মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের জন্য।

সচেতন হতে হবে

একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, ক্যান্সার কঠিন রোগ হলেও এর উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। রোগীদের সচেতনতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই একুশ শতকেও মানুষ বাংলাদেশে হাকিম, কবিরাজ, ঝার-ফুঁকের উপর বিশ্বাস করছে, যেখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।

চিকিৎসা ব্যয় সরকারী হাসপাতালগুলোতে অত্যন্ত কম। রোগীদের প্রতি অনুরোধ যে কোনো রোগ সম্পর্কে পরিচিত জনের পরামর্শ না নিয়ে নূন্যতম এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার সচেতনতা রোগটিকে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ে সাহায্য করবে। আর প্রথম দিকে ধরতে পারলে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগও সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। 

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়