একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বিপাকে সাদেক বাচ্চুর পরিবার
ঢাকাই সিনেমার অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা সাদেক বাচ্চু সোমবার সকালে মারা যান। অভিনয়ের পাশাপাশি ডাক বিভাগে চাকরি করতেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা। কিন্তু অবসরের পর ব্রেন স্ট্রোকের চিকিৎসা করতে গিয়ে পেনশনের সব টাকা খুইয়ে ফেলেন তিনি। এরপর সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমেই চলছিল তার পরিবার। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হঠাৎ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গুণী এ অভিনেতার পরিবার। আর সেই কষ্টের কথা জানালেন সদ্য প্রয়াত অভিনেতার স্ত্রী শাহনাজ।
শাহনাজ বলেন, আমার ছোট ছোট বাচ্চাদের উনি সামলে রেখেছিলেন। তার হুট করে চলে যাওয়া আমরা ভাবতে পারছি না। এখন কি করব তা ভেবে পাচ্ছি না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহনাজ বলেন, আমি কখনোই ভাবিনি উনি এভাবে চলে যাবেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার অসময়ে চলে যাওয়ায় আমাদের কী হবে জানি না। বড় মেয়ে মেহজাবীন মাত্র একাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছে। ছোট মেয়ে নওশিন দশম শ্রেণিতে পড়ে। একমাত্র ছোট ছেলে সোয়ালেহিন মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আমরা এখন কিভাবে চলব, আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।
শাহনাজ বলেন, ডাক বিভাগের চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর কিছু টাকা সঞ্চিত ছিল। ২০১৩ সালে ব্রেনস্ট্রোক করেন তিনি। এতে তাকে ৯ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ওই সময় ৩০ লাখ টাকা বিল দিয়ে স্বামীকে সুস্থ করে বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। তখন পেনশনের সব টাকাই শেষ হয়ে যায়। ওনার পেনশনের টাকায় আমাদের সংসার চলছিল। অভিনয়ের পারিশ্রমিক কিছু সহায়তাও করেছে।
শাহনাজ আরো বলেন, স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খেয়েছি। এখন ছেলে-মেয়েদের মানুষ করা, সংসার চালানোসহ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভেবে ভয় পাচ্ছি। ভিন্ন কোনো আয়ের উপায় নেই।
স্বামী সাদেক বাচ্চু খুবই আত্মসম্মান বোধ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। পারলে কাউকে সহযোগিতা করতেন। কখনো অর্থনৈতিক সহায়তা আমাদের প্রয়োজন হয়নি। সর্বশেষ ওনার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণ করেছি। আমার ভাই পাশে দাঁড়িয়েছে। সহযোগিতাও করেছে।
শাহনাজ বলেন, শ্বশুর শাশুড়ি বেঁচে নেই। আমার বাবাও মারা গেছেন। আমার মায়েরও বয়স হয়েছে। একমাত্র থাকার জায়গা ছাড়া আমাদের কোনো জায়গাই নেই। চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে সহায়তার আশা করব সেই উপায় নেই। এখন তো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কমে গেছে। তাই সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এই সময়ে সহায়তা আশা করতে পারি না।
তিনি আরো বলেন, দুঃসময়ে জায়েদ ছেলেটি আমার পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। করোনার সময় কাউকে পাশে পাইনি। কিন্তু সে পাশে থেকে জানাজা, দাফনসহ সব কাজে সহায়তা করেছে।
গত সোমবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। এর আগে অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
দৈনিক গাইবান্ধা