বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৫ মার্চ ২০২০

এক দশকে ৪১ রায়ে একশ’ আসামির দন্ড

এক দশকে ৪১ রায়ে একশ’ আসামির দন্ড

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক দশক পূর্তি আজ ২৫ মার্চ। ২০১০ সালের এইদিনে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই এক দশকে ৪১টি মামলার রায়ে প্রায় ১০০ আসামির দন্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। 

জানা গেছে,  বর্তমানে ৩০টি মামলার বিচারকাজ চলছে। আপীলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ২৭টি মামলা। আপীল বিভাগে ৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এরমধ্যে ৬টি মামলায় আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। 

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়ায় দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তারকা খচিত আসামিদের বিচার শেষে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা দুটি থেকে একটিতে নিয়ে আসা হয়।

ট্রাইব্যুনালের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেন, যারা সত্যিকার অর্থে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, তাদের বিচার হয়েছে। আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে উঠে এসেছি। প্রমাণ হয়েছে অন্যায় করে কেউ পার পেতে পারে না। আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। 

এ বিষয়ে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার দশ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা শতভাগ সফল। প্রথমত যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে শুরু করে যে সমস্যাগুলো ছিল তা দূর করা খুব কষ্টকর ছিল। অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। 

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রায় কয়েক যুগ পরে এসে বিচারের বিরুদ্ধে সব প্রতিকূলতা দূর করে বিচারে সাফল্যের পাল্লাই ভারি বলে মনে করছি।

সৈয়দ হায়দার আলী আরো বলেন, যে সমস্যাগুলো আমরা অতিক্রম করেছি তা হলো- মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা বারবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া। ক্ষমতায় থাকার সময় অপরাধের আলামত ও দালিলিক প্রমাণগুলো প্রশাসনিকভাবে গায়েব করা। এসব ওভারকাম করে তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবীরা দেশ-বিদেশে এ বিচারকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন, এটাও বিচারের জন্য বিশাল একটি সাফল্য।

ট্রাইব্যুনালের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম সানাউল হক বলেন, মানবতাবিরোধীদের বিচারের দশ বছর শেষে এসে আমাদের ব্যর্থতার চেয়ে সফলতাই বেশি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছর পর মানবতাবিরোধী অনেক মামলার বিচার কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করতে পেরে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি। সঙ্গে সঙ্গে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের যে অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতি ছিল তারও পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

এম সানাউল হক আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ থেকে এ বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাতেও ব্যর্থ হয়েছে তারা। দেশ-বিদেশে এ বিচার গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এখন শুধু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যে মামলাগুলোর বিচার আটকে আছে, সেগুলোর নিষ্পত্তি হলেই বিচারপ্রার্থী ভিকটিম এবং মামলার সাক্ষীরা খুশি হবেন।

সবশেষ জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার মধ্য দিয়ে অষ্টম মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। যদিও তিনি এখন রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন।

এছাড়া জামায়াতের সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু আপিল ও রিভিউয়ে তার আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। 

অপরদিকে, আপিল শুনানি চলার মধ্যেই জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হয়।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ